অলঙ্করণ: পাপিয়া জেরিন

অলঙ্করণ: পাপিয়া জেরিন

মেঝাপ্পি মেঝাপ্পি এক দুই তিন

তানিম কবির

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭

লুবনা আপু আমাকে একদিন ডেকে নিয়ে বলছিলেন, শোন, পাঁচটা টাকা চাস? আমি বলছিলাম, চাই। লুবনা আপু বলছিলেন, এক শর্তে। রাশিদের বাসা চিনিস না? আমি হ্যাঁ চিনি তো বললে মাত্র বগলের চিপা থেকে বের করে তিনি আমাকে একটা ম্যাগাজিন দিয়ে বললেন, খবরদার ভাঁজ খুলবি না, এটা রাশিকে দিয়ে আসতে পারলে টাকাটা পাবি।
সুতরাং আমি ভাঙাভাঁজের রোল করা ম্যাগাজিনটা বগলের চিপায় লুকিয়ে রাশি আপুদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। পথে দেখা হলো নূর ইসলামের সাথে, আমার জড়োসড়ো ভাব দেখে নূর ইসলাম দূর থেকেই আমাকে চার্জ করে বসলো, ওই খাড়া, তোর বগলের চিপায় কী?
আমি দাঁড়িয়ে পড়ে ঘটনা জানালে নূর ইসলাম বললো, খোল ম্যাগাজিনটা। আমারও চাপা আগ্রহ ছিল, সাহসের অভাবটাও নূর ইসলামের দ্বারা কেটে গেলে, ভাঁজ খুলে দেখা গেল যায়যায়দিন-এর শাড়ি সংখ্যা নামক এক ম্যাগাজিন সেটা।
পড়তে গিয়ে দেখলাম হায়হায়, সব যৌনকাতর লেখাপত্রে ভরা। দেবর হিসেবে ভাবীর, ডাক্তার হিসেবে নার্সের, এমনকি বস হিসেবে সেক্রেটারির, কে কিভাবে কার শাড়ি খুললো সেসবের রগরগে বিবরণ। অবাক লাগলো যে, সম্মানিত আপুশ্রেণি কিনা এইসব ম্যাগাজিন দেওয়া নেওয়া করে পড়ে টড়ে।
যাই হোক, রাশি আপুর ম্যাগাজিন রাশি আপুকে ফেরত দিতে গেলাম। রাশি আপু ম্যাগাজিন পেয়ে বললেন, বস, ফ্রিজে আইসক্রিম আছে, খেয়ে যা। বসতেই, রাশি আপুদের কথা বলা টিয়া পাখিটা বলে উঠলো, মেঝাপ্পি মেঝাপ্পি এক দুই তিন।
রাশি আপু এসে বললেন, ম্যাগাজিনটা প্রায় ছিঁড়ে ফেলছে লুবনা, বিরক্তিকর। আমি এখনো পড়তেই পারলাম না। আমি জিগ্যেস করলাম, এটা আপনার? রাশি আপু বললেন, হ্যাঁ লুবনা পড়তে নিছিলো। আর টিয়া পাখিটা কী বললো? জানতে চাইলাম আমি। বললেন, এটা আরেক হারামি। মেঝাপ্পিরা আসছিল চিটাগাং থেকে, তারপর থেকে মেঝাপ্পির সাথে খুব ভাব। কেউ আসলেই এক দুই তিন বলে মেঝাপ্পিকে খবরটা জানিয়ে দেয়। ও আচ্ছা, বলে আমি উঠতে নিলে রাশি আপুও আমাকে পাঁচটা টাকা দিলেন।
আমি টিয়া পাখিটাকে চার পাঁচ ছয় বলে রাশি আপুদের বাসা থেকে বের হয়ে সোজা আবার লুবনা আপুদের বাসায় চলে গেলাম চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য পাঁচটা টাকা বুঝে নিতে। ইতোমধ্যে কাজ হয়ে যাওয়ায় লুবনা আপু আমাকে ঠকিয়ে পাঁচ টাকার বদলে দুই টাকা দিতে চাইলেন। আমি গাঁইগুঁই করলে বাকি তিন টাকাও দিতে রাজি হলেন, তবে এক শর্তে, আমাকে সত্যি করে বলতে হবে ম্যাগাজিনটা আমি লুকিয়ে পড়েছি কিনা, আর রাশি আমার কাছে তার ব্যাপারে কিছু বলছে কিনা।
আমি দোষ স্বীকার করে আর ক্ষমা চেয়ে নিছিলাম এই বলে যে, হ্যাঁ পড়ছি, এবং নূর ইসলামের সাথে টানাটানি করতে গিয়ে প্রচ্ছদের কোনার দিকে একটু ছিঁড়েও ফেলছি। রাগে গজগজ করতে করতে লুবনা আপু জানতে চাইলেন, আর? রাশি কী বললো? রাশি আপু বললো.. ইতস্তত করে আমি আগে টাকাটা দিয়ে ফেলতে বললাম। না, আগে ঘটনা বল, লুবনা আপু কড়াভাবে নির্দেশ দিলে, আমাকে বলতেই হলো, উনি বললেন আপনি উনার শাড়ি সংখ্যা উনি পড়ার আগেই নাকি ছিঁড়ে ফেলছেন।
আমাকে কষে একটা চড় লাগিয়ে লুবনা আপু বললেন, অথচ তুই বলিস নাই যে এটা তুই ছিঁড়ছিস? আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, আসলে উনি বাড়তি কিছু জানতে চাওয়ার হুমকি ছাড়াই পাঁচ টাকা দিলেন, আইসক্রিমও খাওয়ালেন। এতে রাশি আপুর পয়েন্ট বেড়ে যাচ্ছে দেখে রাগে কাঁপতে কাঁপতে লুবনা আপু বলে ফেললেন, দিবেই তো, মাগীটা ছদ্মনামে যা-তা লিখছে এই সংখ্যায়।
আমি বিস্ময়াভিভূত হয়ে যোগ করছিলাম, ও এজন্যই তো বলি টিয়া পাখি নিয়েও কীসব বলতেছিল যেন.. হা হা টিয়া পাখি নিয়েই তো গল্প সাজাইছে, পড়িস নাই? না তো! কোনটা, কী লিখছিল? ব্যতিব্যস্ত হয়ে জানতে চাইলাম, বললেন, ওই যে টিয়া পাখিটা বলে না, মেঝাপ্পি মেঝাপ্পি এক দুই তিন? আমি বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ বলে তো, আমি নিজের কানে শুনে আসছি। ওইটাই, বললেন লুবনা আপু, যে, টিয়া পাখিটা নাকি এক দুই তিন বলার মাধ্যমে মেঝাপ্পির সাথে একত্রে কয়টা লোক শুইছিল সেই কথাই বলে।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ বলে আমি নিজের জিহ্বা নিজেই কামড়াতে থাকি, বলেন কী, কী লজ্জা, আমি আরো পাখিটাকে চার পাঁচ ছয় বলা শিখাইয়া আসলাম! পাঁচটা টাকা দিয়ে লুবনা আপু আমাকে বললেন, যা-তা করছিস। যাই হোক, খবরদার কাউকে কিছু বলবি না, রাশি আপুর গোপনীয়তা প্রসঙ্গেও জোর দিলেন শেষম্যাশ, বান্ধবী যেহেতু।
পরে নূর ইসলামকে সব খুলে বললে, ও কোত্থেকে যেন যায়যায়দিন-এর একটা শাড়ি সংখ্যা জোগাড় করে আনলো। কিন্তু তন্নতন্ন করে খুঁজেও আমরা ওরকম কোনো লেখা সংখ্যাটাতে পেলাম না। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্দেশ্যে লুবনা আপুর কাছে গেলে উনি প্রশ্ন তুলছিলেন, কোন ম্যাগাজিন? আমি দিছি রাশিকে দিয়ে আসতে? তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?