যা দেখি এর বাইরেও জগৎ আছে

রিফাহ সানজিদা

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২২, ২০১৭

চিত্রশিল্পী তাসাদ্দুক হোসাইন দুলুর একক চিত্রপ্রদর্শনী চলছে মোহাম্মদপুরের কলাকেন্দ্রে। সন্ধ্যায় এ প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখতে পাওয়া গেল বিশাল ক্যানভাসের সব সংবাদপত্র। সংবাদপত্রকে ক্যানভাস হিসেবে নিয়ে অনেকেই এঁকেছেন । তবে, দুলু নিজের হাতেই ক্যানভাসে সংবাদপত্র এঁকেছেন। কোথাও কোথাও হেডলাইনগুলো অস্পষ্ট। যেমনটা শিল্পী নিজেই ভাবেন, সংবাদপত্রে সবটা দেখা যায় না। অস্পষ্ট প্রতিচ্ছবিতেই আমরা রাষ্ট্র, ক্ষমতা আর ব্যক্তির অনেক কিছুই বুঝে নেই। তার এ প্রদর্শনীর শিরোনামটাও তাই মিল রেখেই, Beyond The Insignificant.
রাষ্ট্র, সমাজ আর ব্যক্তির মধ্যে ক্ষমতার সংযোগ আর অনুযোগ সে যাই হোক, শিল্পীর তুলিতে সেগুলো অস্পষ্টতার আড়ালে স্পষ্ট কিছু বার্তা দেয়। বিশাল ক্যানভাসগুলো কাছে থেকে দেখলে বোঝা যায়, সংবাদপত্রের ওপর কিছু কিছু প্রতীক ছবি বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। কম-বেশি প্রত্যেক ছবিতেই। বসে থাকা দাঁতালো হাসির বাঘ বা অপেক্ষায় থাকা শকুন, সবটাই সংবাদপত্রের আড়ালের মেসেজটাই ফ্রন্ট পেজে নিয়ে এসেছে। হেডলাইনগুলো আরও দুর্দান্ত, রোড নং ৭৯ /পরিচয় মিলছে/কোনও চেষ্টাই ছিল না/দাপটের সাথে জইস্যা। অ্যাবস্ট্রাক্ট, অসম্পূর্ণ বাক্যগুলো কিন্তু
ইঙ্গিত করছে সমাজের ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহের দিকেই।
আরেকটা হেডলাইন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় পাঠককে, আপনি নিরাপদ তো?/ কি খবর?। এই যে লেখা আর আঁকা, দুই মিলে চিত্রশিল্পীর নিজের দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসে প্রত্যেক লাইনে। আছে কিছু মজার হেডলাইনও, গ্রামে ফিরলেন গাণ্ডু, অভাব অনটনে। এই গাণ্ডু শব্দটাও বেশ ক`বার এসেছে, গ শিক্ষায় গরু ও গাণ্ডু। কাটা ফলের অংশ কিংবা বেঁচে থাকতে ছ`ফুট জমি চাই/একবার পাশ ফিরে তাকাও আমার দিকে/একটা চাহিদা ছিল/তুমি একটা ট্রেনের ইঞ্জিন/তোমাকে এ মাস থেকে আর টাকা দেয়া হবে না... নিত্যদিনকার এমন সব চাহিদার কথাও বলে দুলুর ক্যানভাসের সংবাদপত্রেরা।
শিল্পীর পড়াশোনা চট্টগ্রামেই। কথা বলতে তাকে পাওয়া গেল না। তবে কথা হলো কলাকেন্দ্রের কিউরেটর ওয়াকিলুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বললেন, দুলু পুরোদস্তুর চাকরিজীবী আর সংসারী মানুষ। কিন্তু ছবি আঁকা ছেড়ে দেননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে মাস্টার্স করা এ শিল্পী। তার কাজের ধরণ দেখেও সেগুলোর পেছনের শ্রম বোঝা যায়। নানা সময়ে সেসব কাজের স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন। পুরস্কারের ঝুলিটা ভারিই।
কলাকেন্দ্র প্রতি মাসেই নিজেরা আমন্ত্রণ জানায় এ ধরণের গুণী শিল্পীদের। দেখানো হয় তাদের কাজ। এর প্রেক্ষিতেই তাসাদ্দুক হোসাইন দুলুকে তারা আমন্ত্রণ জানায়।
তৃপ্তি পাবার মতো কিছু ছবি দেখা হলো এ প্রদর্শনীতে। ছিল শিল্পীর করা কিছু ডুডোলও। এ ধরণের চিত্রশিল্প আমাদের ভাবতে শেখায়, যা দেখি এর বাইরেও দেখার আরেক জগৎ আছে। আমাদেরকে শেখায় প্রশ্ন করতে চলতে থাকা রাষ্ট্র-সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে।