FGM ও নারী অধিকার হরণ

বৈতরণী হক

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৪, ২০১৮

বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে Female Genital Mutilations (FGM) নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। কারণ এটি নারীদের অধিকার হরণের একটি নির্মম মাধ্যম। নারীদের জননেন্দ্রিয়ের বাইরের অংশের কিছুটা কেটে দেয়া হয়। এমন পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু থাকলেও বেশি মাত্রায় এর প্রচলন দেখা যায় সোমালিয়া, সোমালিল্যান্ড, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া ও মালির মতো আফ্রিকান অনুন্নত দেশগুলোতে।

FGM একটি প্রাচীন পদ্ধতি আর বহুকাল থেকে এর প্রচলন এর। আফ্রিকান দেশগুলোর মানুষরা এটাকে মনে করে নারীদের পবিত্রতার প্রতীক আর এটা করা থাকলে মেয়েদের বিয়ে হতে সুবিধা হয়। ব্যাপারটা আসলে এমন যে, নারীদের যৌনানু্ভূতি থাকা যাবে না। তবে তারা সন্তান উত্পৎদনের কারখানা হিসেবে ব্যবহৃত হবে। World Health Organization (WHO) বলেছে, এ পদ্ধতি কোনোভাবেই নারীদের শরীরের জন্য ইতিবাচক নয়। বরং মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর।

আমি যে সকল দেশের কথা উল্লেখ করলাম, সেসব দেশে গ্রাম এলাকাগুলোতে ১৫ বছরের আগেই প্রায় সব মেয়ে এ পদ্ধতির আওতায় পড়ে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে যে, দুশো মিলিয়ন মেয়েকে প্রতিবছর FGM করানো হয়। এর মধ্যে মালির অবস্থা খুব আশংকাজনক। সেখানে গড়ে প্রতিদিন ৭৮৯ নারী এর শিকার হয়। দেশটির শতকরা ৮৯% মেয়ে শিশুকে পাঁচ বছরে পড়ার আগেই আগেই এ পদ্ধতির মুখোমুখি হতে হয়।

আগে প্রাচীন সামগ্রী দিয়ে FGM করানো হলেও এখন তারা রেজার, ব্লেড, ইনজেকশন ব্যবহার করে কাজটি করে। কিছু নারী আছে যাদের পেশাই এটি। যদিও তারা দাবি করে তারা ডাক্তারি সামগ্রী আর পরিষ্কার সব কিছু ব্যবহার করে, তবে সেটাও ঝুঁকিপূর্ণ। FGM এমনিতেই একজন নারীর জন্য কষ্টদায়ক, তার মধ্যে অস্বাস্থ্যকরভাবে কাজটি করা হলে সেটি তো গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়া!

এ সম্পর্কিত বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে যে, নারীদের মূ্ত্রথলি ও জরায়ুর ক্যান্সার, মাসিকজনিত সমস্যা, সন্তান জন্মদানে জটিলতাসহ বিভিন্ন জটিল সমস্যা সৃষ্টির মূল কারণ হলো এটি। দু’ভাবে FGM শারীরিক ক্ষতি সাধন করতে পারে। পদ্ধতিটি প্রক্রিয়াধীন চলাকালীন সময়েই এবং আস্তে আস্তে দীর্ঘদিন ভোগান্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সবকিছুর মূলে আছে অস্ত্রোপচারজনিত ইনফেকশন, যা ছড়িয়ে যায় সারা শরীরে।

এখন প্রশ্ন হলো, কেন তারা উদ্বুদ্ধ হয় এটি করতে। বহু আগে অন্যান্য কিছু ধর্মে এর প্রচলন থাকলেও এখন অসচেনতন মুসলিমরাই এ প্রথাতে বিশ্বাসী। আমার স্বল্প জানা থেকেই বলি, কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ পড়ে আমি জেনেছি যে, কোথাও বলা নাই নারীদের যৌনানু্ভূতি হরণ করতে হবে। বরং বলা আছে, শারীরিক আর মানসিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম কোনও নারী যদি বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত হয় ইদ্দতকালীন মানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর তাকে দ্রুত বিয়ে দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময় বলা আছে কারণ সে গর্ভবতী কিনা সেটা বোঝা যায় এই সময়ের মধ্যেই। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, ইসলাম ধর্মে FGM একটি অস্তিত্বহীন অধ্যায়। জৈবিক চাহিদা যদি প্রাকৃতিকভাবেই আসে, তবে কোন অধিকারে এমনটি করা হয়? নিঃসন্দেহে বলা যায়, সম্পূর্ণভাবে নারীদের দমন করার অভিপ্রায় থেকে এর প্রচলন হয়েছে।

যুক্তরাজ্য একটি দেশ যেখানে বহু দেশের মানুষের বসবাস। দেশটির সরকারি হিসেব অনুযায়ী ১৪০ মিলিয়ন নারী বিশ্বব্যাপী এ নির্মমতার শিকার। অনেক আফ্রিকান অভিবাসী থাকায় দেশটিতে FGM পরবর্তী জটিলতার ভয়াবহতা নিয়ে কাজ করতে হয়, চিকিত্সৎ দিতে হয়। তাই যুক্তরাজ্যের আইন মতে, এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর ভয়াবহতা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তুলে ধরছে এবং পদ্ধতিটি বিলোপ করার জন্য কার্যক্রম চলছে। মালি, ইথিওপিয়া, সোমালিল্যান্ডে যুব সমাজ বিশেষ করে মেয়েদেরকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার করার জন্য জোরেসোরে কাজ চলছে। ফল আশানুরূপ। অনেক বয়স্ক নারীর পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ পুরুষরাও এর বিরোধিতা করছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে FGM এর নামে নারীদের উপর চলে আসা এ নিষ্ঠুর অবিচার অচিরেই সমূলে লোপাট হবে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও NHS UK অনলাইন