সংগৃহিত

সংগৃহিত

অ ও আ

পর্ব ৪

মোহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ ফয়সল

প্রকাশিত : আগস্ট ০১, ২০১৮

নশ্বর শরীরে স্বপ্ন বেঁচে থাকার প্রধান ও একমাত্র উপেয়। প্রথম অবলম্বন হয়ে স্বপ্ন নশ্বর জীবনে আশার বীজ রোপন করে, সাহস জুগিয়ে তোলে ভবিষ্যতের। ছোট ছোট রঙিন স্বপ্নগুলো পৌঁছে যায় না বলা আকাঙ্ক্ষায়! নিষ্পাপ, রংধনুর মতো রঙিন, সমুদ্রের মতো বিস্তৃত স্বপ্নগুলো রঙতুলিতে আঁকা গল্পের পথে পাড়ি দিয়ে চায়, কিন্তু সমাজের লৌহ শিকল তার রঙিন স্বপ্নগুলোকে আঘাত করে বেঁচে থাকার শক্তিকে নষ্ট করে দেয়। আর তখন স্বপ্নগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে নীল আকাশের বুকে হারিয়ে যায়, রঙিন ইচ্ছেগুলো সাদা চেতনায় বিমূর্ত আকারে রূপ নিয়ে দাফন হয়ে যায় জানাযা ছাড়াই!

সপ্তাহের শেষদিন হওয়ায় সকাল থেকে ঢাকার রাস্তাগুলো জ্যামের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। লোকাল বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি’র অবিরাম হর্ণের ধ্বনি সমস্বরবিশিষ্ট এক পরিবেশের জন্ম দিয়ে দিয়েছে! ধানমন্ডির আবাসিক এলাকাগুলোতে এখন গাড়ির অত্যাচার বেড়ে গিয়েছে, তেমনটি ঘটছে ৮\এ রোডের রাস্তায়। রবীন্দ্র সরোবরের আশপাশের আবাসিক এলাকার রাস্তাগুলো এখন লোকাল বাসের মতো হয়েছে এসেছে, হড়দম কেউ না কেউ হর্ণ বাজিয়ে চলছে! রাস্তার পিছনে লুকিয়ে থাকা একটি আবাসিক ভবনের চতুর্থ তলার বারান্দায় বসে এসব চিন্তা করছিলো শুভ্রা। সকাল থেকে একঘেয়ে ভরে উঠা সময়গুলো কস্মিক আধার হয়ে শুভ্রার চেহারায় ধরা দিয়েছে, বেখেয়ালের চিন্তা মস্তিষ্কে ঢুকে পেরেশান করে রাখছিলো শুভ্রাকে; ততক্ষণ পর্যন্ত যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছিলো না সে, যতক্ষণ পর্যন্ত না বিশেষ কারো ডাক তাকে অস্তিত্বে নিয়ে আসে।  রাস্তায় গাড়ির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যখন শুভ্রা অতিষ্ঠপ্রায়, সে মুহূর্তে টেবিলের উপর রাখা ফোনটি বেজে উঠলো এক বেদনাকান্নার শব্দে।

“হ্যালো।
কেমন আছিস তুই? গত তিন-চারদিন ধরে তুই একটি বারের জন্যও ফোন দিলি না আমায়!” শুভ্রা বলে উঠলো।
“না রে, একদম সে কথা না। সংসারটা নিয়ে ব্যস্ততায় থাকতে হচ্ছে এখন। স্বামী, সংসার নিয়ে আপাতত দৌঁড়াচ্ছি আর কি!
তুই কেমন আছিস? একবার বাসায় আয়, অনেক্ক..ক দিন আড্ডা দেই না আমরা সবাই মিলে। চলে আয় একদিন।” ফোনের ওপাশ জবাব আসলো।
“আসবো রে, বেশ তাড়াতাড়ি তোর ঘরে এসে হামলা করবো। অফিস যাস নি আজকে?”
“আর অফিস...! সংসার সামলাতে সামলাতে বেহুঁশ হয়ে পড়ছি। এত্তো কাজ সংসারের হয় এটা আগে জানলে বিয়ে ই করতাম না রে।”
“হু, বুঝেছি।
তোকে আমার থেকে কেউ ভালো করে চিনে না। বদমাইশ মাইয়া...!”
“আচ্ছা রে, তাহলে ভালো থাকিস। আর স্বার্থপর, মাঝে মাঝে ফোন দিস।
রাখি তবে রে। জামাই বেরিয়ে যাবে এখন, ডাকছে।”
“আচ্ছা শোন....”
“হুহুম্ম, বল।”
“জামাই কেমন আছে রে?”
“ভালো আছে, তবে বেশ কয়েকদিন ধরে পেরেশানির মধ্যে আছে। কি যেন একটি বিষয় ওকে রাত-দিন খটকা দিয়ে যাচ্ছে, আর আমাকেও কিছু বলছে না!”
“কাজের প্রেসার বোধ হয় হবে, তুই দুশ্চিন্তা করিস না।
শীঘ্র সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“দোয়া করিস রে, আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”

সময়ের কালক্রমে বেশ কিছু স্মৃতি ম্লান হয়ে গেলেও অনুভূতির স্মৃতিগুলো অবিনশ্বর হয়ে থাকে। সময়ের পালাবদলে সম্পর্কের ইতি ঘটে, নতুন পুরোনো সম্পর্কের বীজ গজায়। অশনিসংকেত হয়ে অনেক সময় পুরোনো কিছু স্মৃতি হাহাকার দিয়ে জেগে উঠে মানবহৃদয়ে। পুরোনো বীজের রেশ নতুনকে উপড়ে ফেলে দেয় চিরতরে।

দোলার ফোন কেটে যাবার মুহূর্তখানিক পরে আবারো শুভ্রার ফোনটি বেজে উঠে, স্ক্রিনের নাম দেখে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনকলটি রিসিভ করে শুভ্রা। নিশ্চুপ থেকে ফোনের এপার-ওপারের দু’পক্ষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনুভূতির আলাপ করতে থাকে, আর ভাবতে থাকে শব্দহীন এই পৃথিবীটা কত ই না সুন্দর!
“শুভ্রা”
“বল, শুভ্র।”
“কেমন আছিস?”
“বেঁচে আছি, শ্বাস নিচ্ছি!”
“সকালে খেয়েছিস কিছু? নাস্তা করেছিস?”
“গাড়ির অত্যাচার শুনছি সেই সকাল থেকে, বিতৃষ্ণায় কলজে ভরে গেছে এখন!”
“এতো ডিপ্রেশন কথাবার্তা বলছিস কেন? কতবার না করবো তোকে আমি!
ধ্যাঁত, তুই থাক তোর মতো।
রাখছি।
“আচ্ছা...শোন...শোন....”
“হু, বল।”
“তুই কি পারতি ফোনটা রেখে দিতে?”
“এতো ঢঙ দেখাস নে শুভ্রা!”
“আচ্ছা, আজকাল নাকি তুই পেরেশানির মধ্যে থাকিস? কি জানি কি বিষয় তোকে খটকা দিয়ে যাচ্ছে, কি হয়েছে তোর আজকাল, শুভ্র?”
“তুই আমার বউয়ের স্বরে আওয়াজ করতেছিস কেনো? সবঠিক আছে তো?”
“কারণ....
তোর বউ কিছুক্ষণ আগে ফোন দিয়েছিলো!”
“আমার বউ?
মানে দোলা?”
“কেন, দোলা ছাড়া কি আরো কেউ তোর বউয়ের ক্যাটাগরিতে আছে না কি?”
“দ্যাখ, বাজে বকিস না। কেন ফোন দিয়েছিলো? কি বলেছে? তুই কি বলেছিস ওকে?”
“রিলেক্স শুভ্র। জাস্ট কুল।
এত পেইন নেবার কারণ নেই, তোর বউ হবার আগে দোলা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। সো, থিংক.....”
“থিংক কুল, অ্যাক্ট কুল।” শুভ্রার অসমাপ্ত কথাটি শেষ করলো শুভ্র।
“শুভ্র, আমি জানি দোলা এব্যাপারে বিন্দুমাত্র কিচ্ছু জানে না এবং ওর এমন ধারণাও জন্মাবে না। তারপরও, আমি আমার দিক থেকে সাবধানের থাকবো। ওকে আমার পক্ষ থেকে কিছু জানতে দেবো না।”
“শুভ্রা, দোলা কিন্তু খুব সেনসিটিভ।”
“জানি আমি শুভ্র। বললাম তো, রিলেক্স হ।
সাওয়ার নে একটা, এরপর অফিস যা।”
“শোন, ডা. মেহেরুন্নেসা’র কাছে শনিবার সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা-আটটায় যেতে হবে। আমি তোকে পিক করে নেবো বাসা থেকে।”
“ঠিক আছে।”
“ভালো থাকিস, শুভ্রা।”
“ভালো রাখিস, শুভ্র।”

চলবে