অলঙ্করণ: রিফাত বিন সালাম

অলঙ্করণ: রিফাত বিন সালাম

অরিজিৎ কুণ্ডুর গুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭

চলে গেলে তাই

সেদিন চারপাশ তোমায় আমায় মেলাবার ষড়যন্ত্র করছিল,
গাছের ফাঁকে পড়ন্ত বিকেলের আলো,
উতল হাওয়ায় শিরীষ মহুয়ার পরশ,
সেদিন শুধু তোমার কথা আর ছিল লাল চাদর ।
এতদূর থেকে কি কিছু শোনা যায়?
শুধু চিৎকার, শুধু আস্ফালনের শব্দ
কোনও দেওয়া-নেওয়া কি আদৌ হয়?
নাকি শুধু ‘আমি আমি’ ‘তুমি তুমি’ কলরব?
তোমার গলায় গানগুলো হারিয়ে গেল কী করে?
বুঝি না কীভাবে হারিয়ে গেল আমাদের গল্প,
এতদূর থেকেও হয়ত শোনা যেত,
বড় বেশি নিয়ন স্যাটেলাইট দূরাভাষ এসে গেছে মাঝে।

অদৃশ্য স্পর্শ

মুহূর্তে লীন অনন্তকে ছুঁতে পারো?
পাতার পড়ায় যে গল্প লেখা থাকে
সে গল্প চেষ্টা করো পড়ার।
গ্রীষ্মের দুপুরে কলকল বয়ে যায় নদী,
শুকিয়ে গেছে অনেকটা তার,
তবু কলকল শব্দ থামে না।
সে শব্দে প্রেমিকার বিরহ,
সে নদী কান্নার জলে তৈরি
সেই প্রেমিকার দিঘল চোখ দেখতে পাও?
প্রাত্যহিক দুনিয়ার বাইরে
আর এক দুনিয়া আছে
যেখানে শালবনে দোল খায় রাই,
চলো লালমাটিতে শুয়ে গল্প করি।

অ্যাস্ট্রোনটের প্রেম

মহাকাশ পানে চেয়ে কী দেখিস?
তোর পাশে ঘাসের আড়ালে
ঝোড়ো হাওয়ায় যার চুল ওড়ে
সেই কিশোরীকে দ্যাখ।
কিশোরীর হৃদয় ভাঙা ঠিক নয়,
কিশোরীর ছোট্ট বুকে অমর প্রেমগাথা,
বুকের ওঠানামায় ভয় আর প্রেম
মিলেমিশে ঘাসের ওপর তোকে চায়।
যখন রাতবিরেতে তারায় তারায় ভ্রমণ করিস,
ওর চোখে অপলক তোর আনাগোনা,
যখন ব্ল্যাকহোলে ডুবে যাবি,
ওই পারবে ফিরিয়ে আনতে তোকে।
আজ ঝোড়ো হাওয়ায় সব ভুলে যা,
ফেলে দে পেন বইখাতা,
ফেলে দিয়ে সব জ্ঞানের জঞ্জাল,
কিশোরীর বুকে ঠাই নে।

বিপ্লবের মুহূর্তে

বিপ্লবের মুহূর্তে দুই হিজড়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দ্যাখে,
বেয়নেটের সামনে আলিঙ্গন তীব্র হয়ে ওঠে,
প্রেমিকদের প্রেমিকারা অজানা আরও আরও প্রেমিকের চুমুতে স্নাত হয়।
বিপ্লবের মুহূর্তে দেশভাগের রিক্ত পরিহাসের কাঁটাতারে
মায়ের সাদা লালপাড় শাড়ি ঝুলতে থাকে,
শীর্ণ বিবস্ত্র মা শক্ত কোলে নবজাতককে নিয়ে
সপ্তসিন্ধু পার হয়,
চুমু আর ফসলের দিব্যি খেয়ে গান গাইতে গাইতে
অস্ত্র তুলে নেয় নিষ্পাপ পাহাড়িকন্যা।
বিপ্লবের মুহূর্তে লাশের গন্ধ তীব্রতর,
ক্ষয়ে যাওয়া জীর্ণ পুঁজ থেকে একদলা মাংস,
রক্ত আর জলের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য থাকে না,
পার্থক্য থাকে না সঙ্গমে আর খুনে।
বিপ্লবের মুহূর্তে তোমাতে আমাতে ষড়যন্ত্র হয়
ঝড়ে চিকন পাতা দোলাবার,
ষড়যন্ত্র হয় তারায় তারায়
চিরবিচ্ছিন্ন দুই গ্রহাণুপুঞ্জকে মেলাবার।
বিপ্লবের মুহূর্তে স্লোগান দিয়ে প্রেমনিবেদন হয়,
প্রেমিকারা প্রেমিকদের কমরেড বলে ডাকে,
সব কবিতা হয়ে ওঠে রাজনৈতিক,
সব প্যামফ্লেট হয়ে ওঠে কবিতা ।

বিরহ আলাপ

একদিন হাওয়া হয়ে যাব,
কলেজ স্ট্রীটের মোড়ে চিৎকার করবো, তুমি ছাড়া গন্তব্যই বা কী
আর পথই বা কেন? তুমি ছাড়া চলমান ছবি একরাশ লাশ হয়ে
পড়ে থাক কবরে।

তবু এসব কিছুই শুনতে পাবে না তুমি,
তুমি তোমার প্রাত্যহিক মুখরতায়
দৈনন্দিন আলুথালু বেশে
থাকবে বেশ।
যখন দুর্ভিক্ষ এসে কড়া নাড়বে তোমার দরজায়
তুমি থাকবে মগ্ন
মেঘের আড়ালে প্রেমিকের লীলাখেলায়,
চুপটি করে যখন দেখবে বৃষ্টির কড়ানাড়া
তখন হয়ত আমি উন্মাদ হতে চলেছি,
পিষে গলে মরতে চলেছে সহস্র সহোদর তোমার।
একবারও ভেবেছো প্রিয়তমা
কী এসে যায়?
কী এসে যায়
যে তোমাকে চায় তাকে কাছে টেনে নিলে
শিউলির স্তবক দিয়ে তার স্বপ্ন ভরিয়ে দিলে
মৃতপ্রায় মানুষকে আশা এনে দিলে,
একবারও কী ভেবেছো
হে প্রিয়তমা?