আখেরাতের প্রতি ঈমান একটি বৈপ্লবিক বিশ্বাস

পুনর্মুদ্রণ

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান

প্রকাশিত : জুলাই ২৯, ২০১৮

ইসলামি আকায়েদগুলোর মধ্যে আখেরাতের প্রতি ঈমান আনা একটা বৈপ্লবিক বিশ্বাস, যা পৃথিবীর চেহারাই বদলে দিয়েছে। এ বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়েই ওহির অনুসারীরা প্রথমে নৈতিকতা ও কর্মে এবং পরবর্তীতে ব্যক্তিগত, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পর্যন্ত পৃথিবীর অন্যান্য সকল জাতির মোকাবেলায় একটি অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আসনে উত্তীর্ণ হতে সমর্থ হয়েছে। পরন্তু তাওহিদ ও রেসালাতের মতো এ আকিদাও সমস্ত নবি-রাসুলের শিক্ষা ও সর্বপ্রকার ধর্মবিশ্বাসের মধ্যেই সর্বসম্মত বিশ্বাস হিসেবে চলে আসছে।

যেসব লোক জীবন ও এর ভোগ-বিলাসকেই জীবনের চরম লক্ষ্য হিসেবে গণ্য করে, জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে যে তিক্ত পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়, সে তিক্ততাকেই সবচে কষ্টকর বলে মনে করে, আখেরাতের জীবন, সেখানকার হিসাব-নিকাশ, শাস্তি ও পুরস্কার প্রভৃতি সম্পর্কে যাদের এতটুকু আস্থা নেই, তারা যখন সত্য-মিথ্যা কিংবা হারাম-হালালের মধ্যে পার্থক্য করাকে তাদের জীবনের সহজ-স্বাচ্ছন্দ্যের পথে বাধা হিসেবে দেখতে পায়, তখন সামান্য একটু সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বিনিময়ে সকল মূল্যবোধকে বিসর্জন দিতে এতটুকুও কুণ্ঠাবোধ করে না।

এ অবস্থায় এসব লোককে যে কোনো দুষ্কর্ম থেকে বিরত রাখার মতো আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। যাকিছু অন্যায়, অসুন্দর বা সামাজিক জীবনের শান্তি-শৃঙ্খলার পক্ষে ক্ষতিকর; সেসব অনাচার কার্যকরভাবে উৎখাত করার কোনো শক্তি সে আইনেরও নেই, একথা পরীক্ষিত সত্য। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো দুরাচারের চরিত্রশুদ্ধি ঘটানোও সম্ভব নয়। অপরাধ যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়, আইনের শাস্তি সাধারণত তাদের ধাতে সওয়া হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত আর তাদের মধ্যে শাস্তিকে ভয় করার মতো অনুভূতি থাকে না।

অপরপক্ষে আইনের শাস্তিকে যারা ভয় করে, তাদের সে ভয়ের আওতাও শুধুমাত্র ততটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকে, যতটুকুতে ধরা পড়ার ভয় বিদ্যমান। কিন্তু গোপনে লোকচক্ষুর আড়ালে যেখানে ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে না, এরকম পরিবেশে এসব লোকের পক্ষেও যে কোনো গর্হিত কাজে লিপ্ত হওয়ার পথে কোনো বাধাই থাকে না।

কিন্তু আখেরাতের প্রতি ঈমান এমন এক কার্যকর নিয়ন্ত্রণবিধি যা মানুষকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সর্বত্রই যে কোনো গর্হিত আচরণ থেকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে বিরত রাখে। তার অন্তরে এমন এক প্রত্যয়ের অম্লান শিখা অবিরাম সমুজ্জ্বল করে দেয় যে, আমি প্রকাশ্যেই থাকি আর গভীর নির্জনেই থাকি, রাজপথে থাকি কিংবা কোনো বদ্ধ ঘরে লুকিয়ে থাকি, মুখে বা ভাবভঙ্গিতে প্রকাশ করি আর নাই করি, আমার সকল আচরণ, আমার সকল অভিব্যক্তি, এমনকি অন্তরে লুক্কায়িত প্রতিটি আকাঙ্ক্ষা পর্যন্ত সর্বত্র বিরাজমান এক মহাসত্তার সামনে রয়েছে। তাঁর সদাজাগ্রত দৃষ্টির সামনে কোনো কিছুই আড়াল করার সাধ্য আমার নেই। আমার সত্তার সঙ্গে মিশে রয়েছে এমনসব প্রহরী যারা আমার প্রতিটি আচরণ এবং অভিব্যক্তি প্রতিমুহূর্তেই লিপিবদ্ধ করছেন।

এ বিশ্বাসের মাধ্যমেই প্রাথমিক যুগে এমন মহোত্তম চরিত্রের অগণিত লোক সৃষ্টি হয়েছিল, যাদের চালচলন ও আচার-আচরণ দেখেই মানুষ ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে যেত।

মাওলানা মুফতি মুহম্মদ শফি কৃত তফসিরে মাআরেফুল কোরআন থেকে কিছু অংশ পুনর্মুদ্রণ করা হলো। অনুবাদ ও সম্পাদনায় মাওলানা মুহিউদ্দীন খান।