আজ হাসান আজিজুল হকের জন্মদিন

হাসান আদিব

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৮

উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের আজ জন্মদিন। এর মধ্য দিয়ে ৭৯ পেরিয়ে ৮০ বছরে পা রাখলেন বাংলা ছোটগল্পের এই রাজপুত্র। ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার বর্ধমানের যবগ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
জীবনের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে অনেক কিছুই জমা হয়েছে তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে। তিনি সাক্ষী অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার। সেগুলো ধরে রেখেছেন কাগজে; পরম মমতায়। গল্পগ্রন্থ সমুদ্রের স্বপ্ন, শীতের অরণ্য কিংবা উপন্যাস আগুনপাখি তাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়।

কেমন কাটলো জীবনের এতটা সময়?
এমন প্রশ্নের উত্তরে গুণী এই লেখক জানান, আট বছর ভারতবর্ষে, ২৩ বছর পূর্ব পাকিস্তানে এরপর স্বাধীন বাংলায় ৪৮ বছর ধরে খুব কাছ থেকে সাধারণ মানুষের প্রবাহমান জীবন দেখেছেন। সেটিই ছিল তার লেখার মূল সুর। যে কারণে তার লেখায় বারবার উঠে এসেছে, ক্ষুধা-মৃত্যু আর মানুষের বেঁচে থাকার অবিরত সংগ্রাম। তবে এত ক্ষুধা, এত মৃত্যু আর বঞ্চনার পরও যদি কখনও পুনঃজন্ম হয়, তাহলে এ দেশেই জন্মাতে চান হাসান আজিজুল হক।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা নিজের গ্রামেই করেন তিনি। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারাণী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। যৌবনের শুরুতেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতি করার কারণে পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়তে হয়। কলেজের অধ্যক্ষ তার মেধাবৃত্তি ফাইলচাপা করে রাখেন এবং শেষপর্যন্ত তাকে কলেজ ছাড়তে বাধ্য করেন।

পরে তিনি ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি কলেজে। ১৯৫৮ সালে এই কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপনা করেন। মূলত ষাটের দশক থেকেই ছোটগল্পকার হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন হাসান আজিজুল হক। তবে ১৯৫৪ সালে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার পরই লিখে ফেলেন প্রথম উপন্যাস। ১৯৫৭ তে লেখেন উপন্যাস শামুক। যা ২০১৫ সালের বই মেলায় প্রকাশিত হয়। এরপর অসংখ্য ছোটগল্প, গ্রন্থ, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, শিশুতোষ সাহিত্য।

কথাসাহিত্যে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা। এর মধ্যে রয়েছে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৭), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭০), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কাজী মাহবুব উলৱাহ ও বেগম জেবুন্নিসা পুরস্কার। এছাড়া ১৯৯৯ সালে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন হাসান আজিজুল হক। ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। ২০১২ সালে তিনি ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি পান।
দীর্ঘ ৩১ বছর অধ্যাপনার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটিতে নিজ বাড়ি ‘উজান’ এ লেখালেখি নিয়ে মগ্ন আছেন হাসান আজিজুল হক। প্রতিবারের মতো এবারও জন্মদিনটা নিজ বাড়িতে পরিবারের সদস্য ও শুভাকাঙ্খীদের সঙ্গে একান্তে কাটাবেন তিনি।