আজহার ফরহাদের নির্বাণগল্প

প্রকাশিত : আগস্ট ২৩, ২০১৮

পাথর ও শক্তির কথা

 

চন্দনবীজের বাকসো থেকে বেরিয়ে এলো একটা পুরনো ভিক্টোরিয়ান পয়সা। লোহাতে যেমন জং ধরে তেমনি তামার পয়সাতেও ফিরোজা-সাদা একধরনের দাগ ধরে। দেখে মনে হতে পারে কেউ বুঝি রং মেখে গেছে। এরকম বেশকয়েকটি পয়সা নাড়িয়ে দেখতে গিয়ে উসমান বখস উত্তেজিত হয়ে বললো, পেয়ে গেছি সাধুজী! এই বস্তুটাই আপনাকে দেখাতে চাইছিলাম।

 

একটা বহু পুরনো ইংরেজ আমলের প্রায় ছিঁড়ে যাওয়া দলিলের পাতায় মোড়া একটি পাথর হাতে নিয়ে সাধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন, কিছু বলছেন না। মাথার ওপর পুরনো একটা ফ্যান হালকাভাবে বাতাস দিচ্ছে, সেদিকে তাকালেন।

 

এই ফ্যানটির চাইতেও কম মূল্যবান পাথরটি।

কেমন করে বুঝলেন?--উসমানের প্রশ্ন।

দেখো, এতে কোনো ‍শিল্পগুণসম্পন্ন আকৃতি নেই, এটি ভাল ডিজাইনারের হাতে পড়েনি মোটেও। আর যদিও বা পাথর হিসেবে ভাল তবু এর উজ্জ্বলতা ও রঙ মলিন হয়েছে।

উসমান হতাশ হয়ে বললো, এটি কিন্তু আমার দাদা মারা যাবার আগে আমাকে দিয়ে বলেছিলেন যে অত্যন্ত দামী পাথর, যার কাছে থাকবে তার কোনো ক্ষতি হবে না।

 

সাধু হসে উঠলেন। একটা পাথরের অনেক ক্ষমতা তাই না? তোমার নাই?

উসমান বললো--আমার আর কিসের ক্ষমতা, থাকলে কেন আপনার কাছে আসি?

কেন আসো? ক্ষমতার জন্য?

তা নয়তো কি? সবাইতো ক্ষমতালাভের জন্যই আপনার কাছে আসে।

 

তোমার কি তাই মনে হলো এতদিন ধরে? তাহলে তুমি বিষয়টি ধরতে পারোনি একেবারে। আশপাশ দিয়ে ছুটে গেছে।

উসমান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, কি বিষয় সাধুজী!

না কিছু না। তোমাকে বলে লাভ নেই। একটা পুরনো পাথরকে যেভাবে ধরে রেখেছো ঠিক সেভাবেই ধরে রাখে মানুষ পুরনো মূর্তি, এটা ভালোবাসার বা ভক্তির টানে না, আসক্তির টানে। তোমার ভেতরে প্রবল আসক্তি রয়েছে এর প্রতি, যে এটা তোমাকে রক্ষা করবে বিপদ-আপদ হতে। যা তোমার একটা ভুল ধারণা, কিন্তু তুমি এর ভেতর দিয়ে একটা শক্তি পাচ্ছো, তাই তোমার ভেতর সাহস আছে, শক্তি আছে সবকিছুর মুখোমুখি হবার। এখন আমি যদি তোমাকে প্রকৃতই পাথরের শক্তি সম্পর্কে ধারণা দিতে যাই তোমার সে শক্তির জায়গাটিতে টান পড়বে, দুর্বল হয়ে পড়বে তুমি।

 

সে কেমন কথা সাধুজী, তাই বলে কি আপনি সত্য বলবেন না?

বলবো, কিন্তু সে সত্য যে তোমার ভেতরের সত্যকে আঘাত করবে, তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, হতাশাগ্রস্ত করবে।

কী সব কথা বলেন না, মাথা ঘুরে যায় একেবারে! আমিতো খুব সাধারণভাবে বিষয়টি আপনার কাছে খুলে বললাম, দেখালাম। এখন দেখছি এতে উল্টো ক্ষতিই হলো আমার।

 

সাধু বড় চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন, বললেন--হ্যাঁ তাই হবে, তুমি একটি পাথরে যতটা ভরসা করছো, ততটা নিজের ওপর নেই।পাথরটির গুণাগুণ তালাশ না করে একে ধারণ করো, আসক্তি থেকে নয়, ভালোবাসা থেকে। দেখবে তোমার মঙ্গল হবে।

উসমান উত্তরে বললো, সে তো করছিই সাধুজী। এখন কেবল আপনার কাছ থেকে এর পরিচয়টা জানতে পারলে মঙ্গল।

 

দেখো উসমান, মঙ্গল-অমঙ্গলের বিষয় নির্ভর করছে তোমার নিজের ওপর। পাথরটি যদি একটা সাধারণ পাথরও হয়ে থাকে, তবুও, আমি বলবো তোমার নিজের ভেতরের প্রেরণাশক্তিই এর ভেতরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবে। এখানে পাথর নয়, তুমি নিজেই মুখ্য।

আচ্ছা, লোকে যেমন মূর্তি গড়ে নিজেই পূজা করে, সেরকম?--উসমানের প্রশ্ন।

হুম ঠিক তাই।

 

এটা অত্যন্ত সাধারণ বুদ্ধিশুদ্ধির মানুষের কাজ, যারা একটা কিছু নিয়ে পড়ে থাকাকেই জীবনের সার্থকতা ভেবে বসে। কিন্তু তুমি যদি তাদের মতো না হও, যদি তোমার ভেতরে জীবনের গভীরতার স্পর্শ থাকে, যদি তুমি জীবনকে ভেতর থেকে দেখতে চাও, তবে নিশ্চয়ই তোমাকে পাথরটিকে পেরুতে হবে। ঠিক যেমন সাধক মূর্তিকে পার হয়।

 

তোমাকে কথাগুলো বলছি, যদি তোমার বোঝার ক্ষমতা থাকে, কিংবা যদি নাও থাকে, কথাগুলো অন্তরের সেই সত্যকে জানান দেয়; যে সত্যকে তুমি দেখতে পাও না। এই যেমন ধরো তোমার ভেতর এই বাসনা আছে যে এই পাথরটির গুণ বিচার করে এটিকে তুমি যোগ্যভাবে ব্যবহার করবে, কিন্তু তুমি নিজেই যে সেই গুণে গুণান্বিত হয়ে আছো, তোমার ভেতর পাথরে যা নেই তার প্রতিবিম্ব শোভা পাচ্ছে, সেটা দেখতে পাচ্ছো না।

 

পাশে বসে থাকা উসমানের স্ত্রী হেসে উঠলো এই কথা শুনে--কি বলবো সাধুজী? আপনার কথার মাঝখানে কথা না বলে পারছি না। উসমানকে আমি এই পাথর হতে বের করতে পারছি না, পাথরচাপা হয়ে আছে সে।

 

তা নয় মা, এটা একটা পর্যায় জীবনের। সে তো পাথরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছে। যে পাথরের প্রাণ সে নিজেই। এই সত্যটি না বোঝা পর্যন্ত সে নিজেকে চিনতে ভুল করবে।

 

উসমান পাথরটি হাতে নিল। চোখের নিমেষে ছুঁড়ে ফেলে দিল পদ্মফুলের ডোবায়। বললো--আপনার কথা আমি ঠিক ভালো করে বুঝিনি সাধুজী। কিন্তু কথাগুলো আমার ভেতর একটা শক্তি দিয়েছে।

 

কি শক্তি?

 

ছুঁড়ে ফেলবার...

 

 

বুদ্ধিমান কালো ভ্রমর ও স্বপ্নবৎ অনস্তিত্ব

 

কোলাহলের ভেতর দিয়ে একজন উঠে দাঁড়ালো, যেতে লাগলো সেই দিকে যেখানে ভৈরবমণি পাহাড় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। সাধু, কতক্ষণ চুপ থেকে লোকজনকে উত্তেজনা কমাতে বললেন।

 

কী করছো তোমরা! শান্ত পরিবেশকে কেমন অশান্ত করে তুলেছো! থামো, থামো। ততক্ষণে অমিত চলে গেছে পাহাড়ের দিকে। দূর থেকে তাকে ডাকবার চেষ্টা করে থেমে গেলেন তিনি। শ্রীদামকে কাছে পেয়ে বললেন তাকে ডেকে আনতে।

 

শ্রীদাম এক দৌড়ে ডেকে নিয়ে এলো অমিতকে। সবাই ততক্ষণে চুপ। অমিত এসে বললো, বাবা ডেকেছেন আমায়?

হুঁম, কোথায় চলেছো না বলে?

না এখানে কোলাহল দেখে ভাল লাগছিল না, তাই একটু পাহাড়ের দিকে গেছিলাম।

ঠিক আছে বসো, একটুপর আমিও যাবো।

 

সাধু, আশ্রমে বসে থাকা লোকদের, যারা এতক্ষল কোলাহল করছিল তাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, বিচার করবার জন্য চাই কাণ্ডজ্ঞান, উচিতজ্ঞান দিয়ে বিচার হয় না, শাসন হয়।

 

বিচার হলো এমন, গল্পটা বলি--

 

একটি শিমগাছকে আমগাছ নিজের গায়ে চড়তে দিতে চাইছে না। কিন্তু শিমগাছ যে করেই হোক তাতে চড়বেই। ব্যাপরটি নিয়ে দু’য়ের ভেতর একটা ঝগড়া বেঁধে গেল। ঝগড়া করতে গিয়ে আমগাছ ভুলে গেলো তার মুকুল ফুটবার সময় চলে যাচ্ছে, শিমগাছ ভুলে গেল শিমের কথা, থোকা থোকা ফুল ঝরে পড়ছে ফলহীন।

 

একঝাঁক মৌমাছি সে পথ অতিক্রম করছিল। আমগাছে মুকুল নেই, শিমগাছে ফল নেই, এসব দেখে থেমে গেল। কাছে গিয়ে দেখলো যে দু’য়ে মিলে কী ঝগড়াটাই না বাঁধালো! আরো আসলো কালো ভ্রমরের দল, এরাও এই কাণ্ড দেখে যারপর নাই বিরক্ত। মৌমাছি আর ভ্রমরেরা মিলে একসাথে ধমকাতে লাগলো--তোমরা কী করছো? শীত চলে গেছে বসন্ত দুয়ারে, আমগাছে মুুকুল নেই শিমগাছে শিম নেই, এ কেমন কথা!

 

আমগাছের মনে পড়লো ঋতুর কথা, শিমগাছেরও। কিন্তু নিজেদের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুন কিছুতেই নিভছে না। শিমগাছ মৌমাছিদের কাছে আর্জি জানালো, বিষয়টি ‍খুলে বললো। ব্যাপারটি শুনে মৌমাছিদের সাথে ভ্রমরেরাও হেসে উঠলো। কিন্তু শিমগাছের এক কথা বিচার চাই।

 

মৌমাছির দল উভয়কে ধমক দিয়ে বললো, থামো। আমগাছকে বললো কিছু পুরনো ডাল দিতে শিমগাছের মাচাং বেঁধে দেওয়ার জন্য আর শিমগাছকে বললো আমগাছে না উঠে মাচাংয়ের ওপরেই সুখী হতে। আমগাছের ব্যাপারটি ভাল লাগেনি, সে নিজের ডাল ভেঙে দিতে নারাজ, আর শিমগাছও আমগাছের ছায়ার নিচে থাকতে চায় না, সে চড়তে চায় মাথায়, যেখানে সূর্যের আলো আছে।

 

ব্যাপারটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। মৌমাছি না বুঝলেও ভ্রমর বুঝলো। একটি ভ্রমর সামনে এসে দাঁড়ালো। সবাইকে লক্ষ্য করে বলে উঠলো--থামো, একটা উপযুক্ত বিচার হবে এর। আমগাছ চাইছে শিমগাছ যেন তার ছায়ার নিচে থাকে, কিন্তু শিমগাছের রোদের প্রয়োজন, তাই সে আমগাছের মাথায় চড়তে চায়। বিষয়টি কেবল ইচ্ছা-অনিচ্ছার নয়, অধিকারবোধের। শিমগাছকে অবশ্যই সূর্যের আলোর অধিকার দিতে হবে, আর আমগাছেরও অধিকার রয়েছে অন্যকাউকে নিজের ওপর আশ্রয় না দেবার।

 

মৌমাছিসহ ভ্রমরের দল সকসাথে ঠিক ঠিক বলে উঠলো। কালো সেই বুদ্ধিমান ভ্রমর বললো--এখন সমাধান হলো আমগাছকে তার ছায়া পরিবর্তন করতে হবে। তাতে শিমগাছ সহজেই আলো পাবে। এমন কথা শুনে আমগাছ ভড়কে গেল--সে কী কথা ছায়া পরিবর্তন করবো কেমন করে? এ কী সম্ভব!

 

কেন নয়? তুমি সূর্যটা যেদিকে থাকে ছায়াটাও সেদিকেই ফেলবে।

ছায়াতো ফেলে সূর্য, আমিতো নই।

কিন্তু সে ছায়াতো অন্যের ওপর গিয়ে পড়ছে, তাতে সে বঞ্চিত হচ্ছে, তোমার এই বঞ্চনা করবার অধিকার কে দিয়েছে?

প্রকৃতি, সৃষ্টির নিয়ম তাই।

 

বুদ্ধিমান কালো ভ্রমর হেসে উঠলো সে কথায়। তবে জেনে নিও লতাগাছের নিয়মও কিন্তু শক্ত ও বৃহৎ গাছকে বেয়ে উঠবার। এটা সৃষ্টির নিয়ম। তুমি বড় বলেই তোমার সহ্যশক্তি বেশি, যে ছোট তার শক্তির অভাব যথেষ্ট; তুমি সৃষ্টি হিসেবে এটুকু সহ্য না করতে পারলে স্রষ্টাও কেমন করে তোমাকে সহ্য করবেন?

 

সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সে কালো ভ্রমরের দিকে। আমগাছটিতে সহসাই মুকুল ফুটে উঠলো। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সে বলতে লাগলো--ও কালো ভ্রমর, আসো তুমিই প্রথম বসবে আমার মুকুলে, আমি তোমার অপেক্ষাতেই যেন এতদিন ভুলে রয়েছি মিথ্যা অহমিকার আঁধারে সত্যকে। আমার নিজের দিকে মনোযোগ ছিল না, আচ্ছন্ন ছিলাম অন্যে, ভুলে গেছি যার যা কর্ম তা করাই ধর্ম, তুমি আসো, বসো আমার পুষ্পে, গন্ধে, শোণিতে, মধুতে, আমাতে। তুমিই আমার ধর্মাবতার।

 

গল্পটি তোমাদের শিশুদের মতো করে বললাম। কিন্তু তোমরা শিশু নও, পূর্ণবয়ষ্ক। তোমাদের শিশুর মতো হতে হবে। শিশুর মতো হওয়া মানে নিজের ভুল বুঝতে পারা, সহজে অন্যের কাছে তা প্রকাশ করা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আগ্রহ থাকা, সৃষ্টির প্রতি, একান্ত নিজের বড়াই না করে। তোমরাও আমগাছের মতো হয়ে ওঠো, কে তোমাদের ওপর চড়াও হতে চাইছে, কার ছায়ায় কে বড় হচ্ছে, কে কতখানি করছো কার জন্য--এইসব ভুলে গিয়ে। তোমরা মানুষ হতে চাইছো, আগে প্রকৃতির ভেতর মিশে যাও, ভালোবাসো, তার আঘাতকেও।

 

কোলাহলটা ছিল অমিতকে নিয়ে। অমিত সবার মতো নয়। সে ওই শিমগাছের মতোই। তোমাদের কারো কারো কাছে কিছু চেয়েছে। যা তোমাদের মনে হয়েছে ওটা সে চাইতে পারে না, কিন্তু সে আসলে কী চেয়েছে তোমাদের কাছে? কারো কাছে ফল, কারো কাছে চিরুনী, কারো কাছে কাগজ, কারো কাছে জামা, কারো কাছে শুকনো খাবার। এসবই কি তার অপরাধ? তোমরা কি একবারও ভেবেছো সে কি করে এসব দিয়ে? ভেবে দেখো সে নিজের জন্য তা করে না, তোমাদের কাছ থেকে এসব নিয়ে সে বিলিয়ে দেয় অন্য কারো কাছে, যার প্রয়োজন। তোমরা সকলেই তাকে বুঝতে পারবে না। তোমরা তাকে সামান্য প্রয়োজনগুলিতে সবচেয়ে কাছে পাবে, যে প্রয়োজনের কথা তোমাদের মাথায়ই থাকে না; সবাই বড় বড় চাহিদা নিয়ে বসে থাকো, তোমাদের স্বপ্ন যে অনেক বড়ো। অমিতের স্বপ্ন খুব ছোটো, সেটা জানো?

 

সে স্বপ্ন দেখে পাহাড়ের গায়ে গাছ হবার, শেষ বিকেলের আলো হবার, নিদেনপক্ষে একটা মৌমাছি হবার। এই স্বপ্নগুলি ছোট ছোট, কিন্তু তোমাদের মতো ভারী নয়, যার তলে তোমরা চেপে আছো, মুক্ত হতে পারছো না। বলি, নিজের স্বপ্নের, আকাঙ্ক্ষার, বাসনার তলে চাপা পড়ো না। মুক্ত হও, এবং প্রাণকে প্রতিমুহূর্তে ধরতে চেষ্টা করো, জীবনকে প্রতিটি ক্ষণে বুঝতে চেষ্টা করো, স্বপ্নকে ধরার বদলে।

 

অহমকে চূর্ণ করো। অহংকার মানে অনস্তিত্ব। মানুষ আসলে স্বপ্নের নামে নিজের অনস্তিত্বকেই ধরতে চায়। স্বপ্নময় মানুষ আর স্বপ্নকে ধরতে চাওয়া মানুষের ভেতর পা্র্থক্য ঢের, প্রথমজন জীবনকেই স্বপ্ন ভাবে, দ্বিতীয়জন মনে করে যা কিছু জীবনে সহজে পাওয়া যায় না তাই স্বপ্ন। তোমরা নিজেরাই ভেবে নাও কোন স্বপ্নের জগতে তোমাদের অবস্থান, আমি আজ আর কিছু বলবো না...

 

 

বৃদ্ধ প্রজ্ঞাবীজ ও বহতা তারুণ্যের কথা

 

সভ্যতার কথা কী বলবো তোমাদের! সভ্যতা কেমন করে গড়ে ওঠে সে ইতিহাস জেনেও বা কী লাভ! তা কি আসলেই সভ্য হয়ে ওঠা নাকি সীমাতিরিক্ত প্রয়োজন ও ভোগাঙ্ক্ষার এক সুনিয়ন্ত্রিত সমাজব্যবস্থা, সে নিয়ে গভীর ভাবনার প্রয়োজন। তোমরা আসলে কাকে সভ্যতা বলছো? যা তোমাদের বলে বোঝানো হয়েছে, যা তোমরা বুঝে-না বুঝে মেনে নিয়েছো, এমনকি এটুকু পর্যন্ত ভাববার সময় পাচ্ছো না যে সভ্যতা বলে যাকে দেখছো তার ভেতরে আসলে কী আছে!

 

তোমরাতো একটা ঘেরাটোপের ভেতর আবদ্ধ, মুক্ত নও। এমনকি মুক্তির জন্য গড়ে তোলা নানান সংগ্রামের ভেতরও কিন্তু সেই অবরুদ্ধ ঘেরাটোপের বসবাস অবশেষে। দেখো, মানুষের লড়াই একটা সীমা অতিক্রম করবার পর হয়ে ওঠে কেবল লড়াইয়েরই সংস্কৃতি--কি কারণে, কেন, কি অর্জন হলো, কার জন্য, কোন ভবিষ্যতের আশায় এইসব একসময় দূরে ঠেলে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।

 

এটা হয়তো সময়ের একটা প্রয়োজন, কিন্তু একটি প্রয়োজনের সাথে অন্যটি যুক্ত না করতে পারলে প্রয়োজন কিছুতেই চাহিদায় পরিণত হতে পারে না। সময়ের ভেতরেই মরে পড়ে থাকতে হয় ইতিহাসের মাল-মশলা হয়ে। এখন তোমরা বুঝে নাও যে কেবল ঐতিহাসিক মাল-মশলা হবার প্রয়োজন নাকি স্বীয়-সত্তার বিকাশে আত্মপরিচয়ের চাহিদা তৈরি হবে তোমাদের ভেতর।

 

কথাগুলো বলছিলেন সাধু, হিমালয় ভ্রমণের আগে শেষ আলাপচারিতায়। তাঁর এবারকার যাত্রায় সঙ্গী হচ্ছেন যে কয়জন তাদের যাত্রাশুরুর আগে কিছু কথা বলছিলেন। এবার তাঁর সঙ্গী হচ্ছেন কিছু তরুণ ও নতুন মানুষ যারা এর আগে তাঁর সাথে কোনো সফরে বের হননি। এই পথভ্রমণ তাই সে অর্থে একটি নতুন অভিজ্ঞতা বয়ে আনবে, তাই তিনি সবার সঙ্গে কথা বলে কিছু বিষয় সম্পর্কে আগে থেকেই আলোচনা করে নিতে চান যা যাত্রাকালের পথভ্রমণকে আনন্দময় ও ভাবনাপূর্ণ করে তুলবে।

আমি ভাবছি তোমাদের জীবন নিয়ে নয়, তোমরা যে জীবন সম্পর্কে একটা ভাবনা তৈরি করে রাখো সেটি নিয়ে। তোমরাতো নতুন, তোমাদের ভেতর জীবন সম্পর্কে নানান ভাবনা প্রবেশ করে আছে, সে ভাবনার আলোকেই এখানে এসেছো এবং হয়তো এখান থেকে অন্য কোথায় বেরিয়ে পড়বে। কিন্তু যেখানেই যাও, জীবন সম্পর্কে আগের ও পরের ভাবনা না বদলালে, মনে রেখো, কিছুই লাভ করতে পারনি। তাই বলি কি, জীবন সম্পর্কে ভাবতে যেও না, বরং ভাবো জীবন যাপনের বৈচিত্র্যকে কেমন করে অনুভব করবে, ধারণ করতে পারবে!

 

কিন্তু তা কেমন করে সম্ভব? --একজন প্রশ্ন করলো।

 

তুমি একবার নির্ভার হয়ে দেখো না, সকল ভাবনা হতে নির্ভার হয়েইতো ভাবুক হতে হয়। নইলে একটু ভাব, একটু স্বভাব, একটু দুর্ভাবনা, একটু সম্ভাবনা এরকম সবকিছু মিলে একটা বড় অভাবের ভেতর বাস করতে থাকবে। আমি একটু সহজ করে বলি, এই যে তোমরা যার যার জীবন হতে বেরিয়ে এসে একটি নতুন যাত্রাপথে সামিল হয়েছো, তোমাদের ভেতর কত গল্প, কত অভাব, কত অতীত, কত সম্পর্ক, কত বেদনা, কত অতৃপ্তি মিলেমিশে একেকটা তুমি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা নিয়ে তোমরা যুক্ত হয়েছো একে অপরে এক যাত্রাদলে, এ কিন্তু আনন্দ দিচ্ছে তোমাদের। এই আনন্দটি নতুন কিছু দেখবার, জানবার, বুঝবার; এই আনন্দলাভে পূর্বের কত বেদনা ও হতাশা রয়েছে যা না থাকলে কিছুতেই এসময়ে তোমরা এক হতে পারতে না।

 

আপনি ঠিক বলেছেন সাধুজী, আমরা বুঝতে পেরেছি আপনার কথা--এক তরুণ বলে উঠলো।

 

তুমি তরুণ, তুমি বৃদ্ধ হবে তখনই যখন তোমার ভেতর নতুনকে জানবার, বুঝবার, ধারণ করবার শক্তি থাকবে না। কিন্তু তুমি পরিণত হবে, প্রাজ্ঞ হয়ে উঠবে, সুবিবেচক ও বিচারক হয়ে উঠবে, মানুষ তোমার কাছে সিদ্ধান্ত ও জ্ঞান আহরণ করতে আসবে; অথচ তুমি ভেতরে ভেতরে এমন এক মানুষ হয়ে উঠতে পার যে মানুষ তরুণ নয়, বৃদ্ধ। যে মানুষ নিজের অজান্তেই খুন করবে সম্ভাবনাকে, ভবিষ্যতের আহ্বানকে। এটা এ কারণে ঘটবে, যদি সে হারিয়ে বসে সময়ের পরিপক্কতায় সম্ভাবনার সবুজ মন, তার বদলে সে কেবল শস্যবীজময় সত্তা, যে আসবে তাকেই শস্যক্ষেত্র ভেবে বপন করতে চাইবে নিজের জ্ঞান--একে বলতে পার প্রজ্ঞাবীজ।

 

এমন প্রজ্ঞাবীজ দিয়েই কিন্তু প্রবীণরা তরুণদের পথ দেখায়। সাধারণত এটি তরুণদের জন্য প্রয়োজনীয় কিন্তু একটা সময় পর তা গভীরভাবে সমস্যা তৈরি করবে তাদের মনে, সেটা কি? জীবনকে সম্যক অভিজ্ঞতা ও ঠেকে শেখা হতে বঞ্চিত করা। যদি ‍প্রজ্ঞাবান একইসাথে বৃদ্ধে পরিণত হন তবেই ব্যাপারটি ঘটে থাকে।

 

একজন অবাক হয়ে বলে উঠলো--সে কী! তবে তরুণরা শিখবে কেমন করে, আর প্রবীণরাই বা কেমন করে জ্ঞান প্রদান করবেন!

 

সাধু হেসে উঠলেন। তোমরাইতো আমাকে এমন জটিল সব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করো। আমিতো এসব কথা বলতে চাই না। আর এসব কথা বলে বোঝানোও কঠিন। তোমরা প্রশ্ন করেছিলে মানুষের সভ্যতাজ্ঞান নিয়ে। সভ্যতার পরিচয় সম্পর্কে বলতে। কিন্তু এ যে এক কথায় উত্তর দেবার বিষয় নয়। তোমাদের ভেতর থেকে সে উত্তর নানান কথায় না বের হওয়া পর্যন্ত আমি কিছুতেই তা বোঝাতে পারবো না।

 

জীবনে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তোমরাও কিন্তু বৃদ্ধে পরিণত হবে। কেবল বৃদ্ধ নয় প্রজ্ঞাবান বৃদ্ধ। হাসছো না? কেবল প্রজ্ঞা দিয়েই কিন্তু জ্ঞানবান হওয়া যায় না। জ্ঞান হচ্ছে সেই তরঙ্গ, যা তোমাকে কোনো কিছু হতে না দিয়ে নিরন্তর বহতা মানুষে পরিণত করবে। কিছু হওয়া মানেই স্থবিরতা, পাথরের মতো, সে পাথরকে বহতা নদীর স্রোত হয়তো টেনে নিয়ে যেতে পারবে কিন্তু পাথরের নিজের কোনো শক্তিই নেই প্রবাহিত হবার। প্রজ্ঞাবান হলো বহতা পাথর, কোনো না কোনো প্রবাহে বা তরঙ্গে সে বয়ে যায়, কিন্তু সে তো আপেক্ষিক। তার সকল সময়ে বয়ে চলা হয় না, কারণ সে ধীরে ধীরে আরো বৃহৎ পাথরে পরিণত হতে চায়, চায় স্থিরতা, আরাম, প্রাতিষ্ঠানিকতা, ধ্বজা।

 

প্রজ্ঞার ধ্বজাধারী বৃদ্ধ না হয়ে, সদা প্রবহমান তারুণ্যের জীবনীশক্তিসম্পন্ন মানুষ হয়ে থাকা উত্তম। আমি এটুকুই জেনেছি আমার নিজের প্রজ্ঞা দিয়ে। কিন্তু আমি প্রজ্ঞাবান হতে চাই না, আমি কেবল স্বজ্ঞাময়, আত্মসঞ্চারণশীল চিরতারুণ্যের বিষ্ময়পূর্ণ শিশুমন নিয়েই থাকতে চাই।

 

বুঝতে পেরেছি আপনার কথা।

 

সাধু এবার সমগ্র সত্তাজুড়ে হাস্যোজ্জ্বল হয়ে উঠলেন। বললেন, এটাই হলো সভ্যতা। যা তোমার ভেতরে থাকে, বাইরে নয়। সভ্যতা হলো জীবনকে বইতে দেয়া, সীমাবদ্ধ করা নয়। মানুষের সমাজ যে সভ্যতা বানায় তা দেয়াল তুলে দেয়া, চিন্তা-মত-দর্শন-জ্ঞান-বিচার-সংস্কৃতি-সমাজ-রাজনীতি-ক্ষমতা-শাসনের স্থবিরতা।

 

বৃহৎ তরঙ্গে ধাক্কা না খেয়ে যার পরিবর্তন ঘটে না...

 

হওয়া না হওয়ার অস্তিত্ববোধ

 

আমিতো হয়েই আছি, আমাকে নতুন করে কি হতে হবে! কিংবা বলতে পারো, আমার ফেলে আসা আমি’কে আমার চাই। কিন্তু সে আমি’র পরিচয় তুমি জান না, বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে বসে আছো নিজের মর্মবীজকে। একটুক্ষণের জন্যও মনে করতে পারছো না প্রকৃতই যা তুমি। কথা হলো, সে কি কেবলই অজানা অতীত?

 

তা নয়। আমরা যা পূর্বে ছিলাম তা আমাদের নিতান্ত অতীত হবে কেন? বরং আমরা ঘুমন্ত, চেতনহীন, বিস্মৃত। বলতে পার আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি আমাদেরই অজানা আমি! একে আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই সত্তার মুক্তি, তার আগে নয়। বিজ্ঞানের নানান আবিষ্কারের পূর্বে এমন কথা বলা যায় না যে তার কোনো অস্তিত্ব ছিল না; ঈশ্বরের আবিষ্কারের পূর্বেও তেমন। মানুষের কাজ হলো আবিষ্কার করা, সদাপরিবর্তনশীল বিবর্তিত জীবনের সত্যকে আবিষ্কার করা। এটা তোমাকে করতেই হবে, নইলে তুমি কিছুই না, অস্তিত্ববোধের অনুভবহীন জড়বস্তু।

 

সৃষ্টিতে জীব ও জড় বলতে যা বোঝায়, তা এখানেই। অস্তিত্বের অনুভব যার আছে সে জীব, যার নেই সে জড়; আর যে সে অনুভবকে দিব্যদৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছে সেই হলো শিব। আমরা জীব হয়ে উঠতে পারি না বলে শিবত্ব অর্জন তাই সাধ্যাতীত। এতটাই বিস্মৃত যে বিস্মরণের চারপাশে জমাট বেঁধে আছে মোহপাশ, তাকে ছিঁড়ে ফেলবার সুযোগ কোথায়?

 

শীতের সকালে আবছা কুয়াশায় ঢাকা পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে সাধু জানালার কাচ মুছতে গিয়ে দেখতে পেলেন কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন বাইরে। ভেতরে আসবার জন্য ইশারা দিতেই ওরা দ্রুত চলে এলো। এদের ভেতর একজন হলো বহরম, কাশ্মির বাড়ি। অনেক বছর আগে সাধু তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আজ এতদিন পর তাকে আশ্রমের বাইরে ঠকঠক করে কাঁপতে দেখে ভেতরে আসবার অনুমতি দিলেন। বহরম তার সাথে দুজন অতিথি নিয়ে এসেছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে গিয়ে ঠাণ্ডায় প্রায় জমে যাওয়ার উপক্রম। তাদের আগুন পোহাতে রান্নাঘরের দিকে যাবার নির্দেশ দিলেন তিনি।

 

বহরমের উপস্থিতিতে এতক্ষণের আলোচনায় একটু ছেদ পড়লো। তিনি কথা বলছিলেন কয়েকজন ভক্তের সাথে যারা খুব ভোরবেলা উঠেই এখানে বসেছিল কখন তিনি আসবেন আর দু’একটা কথা বলে তাদের তৃপ্ত করবেন। সাধু কথা বলেন সামান্য, সকালবেলা তার সাথে দেখা হলে কিছু কথা দিনের শুরুতে এমনিতেই হয়ে থাকে। কথার মাঝে ছেদ পড়ে আলাপটি আর জমে উঠছে না দেখে সবাই কেমন ছড়িয়ে গেল নানান ভাবনায়।

 

একসময় বহরম ও তার দুই সঙ্গী এসে দাঁড়ালো। সাধু দীর্ঘ এক চাহনীতে বহরমের দিকে তাকিয়ে রইলেন, বসতে বললেন শেষে। বহরম ওদের নিয়ে বসবার পর তিনি বললেন--এতদিন পর তোমাকে দেখে অবাক হলাম, আরো বেশি অবাক হলাম তোমার বাইরে অপেক্ষা করবার নমুনা দেখে, তুমি না হয় কষ্ট করলে কিন্তু তোমার সাথে আসা দু’জন অতিথিকে শীতে কষ্ট দেবার কোনো অধিকার তোমার ছিল না।

 

বহরম লজ্জ্বিত হয়ে বললো--আমায় ক্ষমা করবেন সাধুজী, আসল কথা বলছি, এতদিন পর আপনার সামনে এসে দাঁড়াবার ভয়ে আমি ভুলেই গেছি ওদের কথা। সত্যি আমি লজ্জিত!

 

অনেকক্ষণ পর তিনি আগের আলোচনায় ফিরে এলেন। সবার গুনগুন কথা থামিয়ে বলে উঠলেন--আমি যত পৃথিবীকে জানতে চাইবো, ততখানি নিজেকে জানবার সুযোগ না ঘটলে এ দিয়ে আখেরে আমার পারমার্থিক কল্যাণ অসম্ভব। আমরা জন্ম হতেই অর্থের দিকে ছুটি, আর সে অর্থই সকল অনর্থের মূল হয়ে ওঠে; এ কেবল টাকা-পয়সার ক্ষেত্রেই নয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে অর্থবহতা খুঁজতে চাওয়া। এটা হয়, যদি আমরা পরমার্থের দিকে যেতে না পারি--ক্ষুদ্রার্থে, বৃহদার্থে, স্বার্থে-সংঘাতে বিপর্যস্ত হই কিন্তু নিজের ভেতর যে পরম অর্থবহতা লুকানো তা টের পাই না।

 

আজ অনেক বছর পর বহরম উপস্থিত। একদিন তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম আশ্রম হতে। বলেছিলাম সাধনা অর্থবহতার নাম নয়, অর্থ বুঝে বুঝে বা টাকা গুণে গুণে তুমি হিসেব করতে পারবে না জীবনের। জীবন যে বহতা নদী, তাকে কে কবে অর্থবহরূপে বুঝে উঠতে পেরেছে? কিন্তু সকল অর্থকরি চিন্তা-ভাবনাকে পরমার্থের দিকে সমর্পিত না করতে পারলে সাধনা হয় না। হয়ে ওঠে সাধ-বাসনা।

 

বহরম তেমনি আমার কাছে এসেছিল কিছু একটা হয়ে উঠবার জন্য। এমন একটা কিছু আশা করছিল সে, যা অর্জন করতে পারলে তার লোকসমাজে সুনাম হয়। আমি ব্যাপারটা ধরতে পেরে ওকে চলে যেতে বলি। আজ এতদিন পর তার আসা আমাকে কিছুটা অবাক করেছে, আবার আশ্বস্তও করেছে যে সে আগের মতো এমন হয়ে ওঠার সাধ-বাসনা নিয়ে হয়তো আসেনি আজ।

 

বহরম মাথা নিচু করে এতক্ষণ কথাগুলি শুনছিল। এবার কেঁদে ফেললো সবার সামনে--আমি সত্যিই লজ্জিত সেদিনের সে ঘটনার জন্য। আজ এতবছর পর আমি এটুকু অনুধাবণ করেছি যে সাধ করে সাধনা হয় না, এর জন্য চাই সাধ্যাতীত প্রেরণা। যে প্রেরণা আমার ভেতর ছিল না, কিন্তু আজ তা এসেছে, তাই আমি একজন ‘না’ হয়ে উঠবার মানুষ হিসেবে আপনার কাছে ফিরে এসেছি। আমি আজ কিছু হতে চাই না, কেবল নিজেকে অনুভব করতে চাই।

 

কুয়াশা কেটে গেছে ততক্ষণে। বাইরে রোদ উঁকি দিচ্ছে। আশ্রমে প্রভাতসঙ্গীতের আয়োজন শুরু হচ্ছে। সবাই গোল হয়ে বসলো। মাঝখানে শিল্পী ও বাদ্যকর। সাধুও বসলেন। একসময় তিনি বলে উঠলেন-- বহরম তোমার মুখে সে গানটা অনেক দিন শুনি না...

 

কোনটা দয়াল!

 

ওই যে,

 

দাপেওমাস বালিয়ারাস য়ার লাগভ

তয়াম দোপনাম বোযওয়ূন চূস কোন লাগভ।।

 

ভালোবাসি যারে সুধাই তারে, বান্ধব গো

শুনছি আমি চালাও তুমি, সে কয় গো।।