আদিম

রহস্যকাহিনি ৩

প্রাচ্য তাহের

প্রকাশিত : মে ১৮, ২০১৮

তবে কিছু কিছু কেস এমনও আছে যে, জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যায় কখনো সখনো। শুধু কেসই বা কেন, টাকার ধরা-ছোঁয়ায় এদেশে আরও অনেক কিছুই তো জটিল হয়ে যাচ্ছে হরহামেশা। যে দেশের যা নিয়ম। এসবে আজকাল কেউ কিছু মনেও করেও না। কিছুক্ষণের ভেতর আমজাদ হোসেন এসে পৌঁছলেন ইউনুস মোল্লার বাড়িতে। আলিশান বাড়ি। ওসি মজিবর রহমান এগিয়ে এলেন। বেশ উত্তেজিত দেখাচ্ছে তাকে। এতক্ষণ ধরে ফ্যানের নিচে বসে থাকলেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম মরুভূমির বালুকণার মতো চিকচিক করছে বালবের উজ্জ্বল আলোয়। পকেট থেকে রুমাল বের করে নার্ভাস ভঙ্গিতে কপাল মুছল ওসি।
স্লামালেকুম সার।
চারদিকটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে আমজাদ হোসেন বললেন, ডেডবডি কোথায়?
ভেতরের ঘরে রেখেছি সার।
চলেন, দেখি।
নিচের সিঁড়িঘরে এসে ঢুকলেন তারা। মেঝের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন ইউনুস মোল্লা। ওর রক্তমাখা দেহটার দিকে চেয়ে একটু মর্মাহত হলেন গোয়েন্দা অফিসার। কপালের বাম পাশে গুলি করে মারা হয়েছে। ছোট-খাটো একটা গর্ত মতো তৈরি হয়ে গিয়েছে কান আর চোখের মাঝামাঝি জায়গায়। এতক্ষণে মাঝি ভনভন করতে শুরু করেছে সেটার ওপর। মুখ চেনার উপায় নেই। রক্তে মাখামাখি সারা মুখখানা। মেঝে ভেসে যাচ্ছে রক্তের সরু ধারায়। এত রক্ত ওইটুকু গর্ত দিয়ে কিভাবে বের হলো কে জানে। মানুষের দেহে একজন মানুষ প্রতি কত কিলো রক্ত থাকতে পারে, তার সঠিক হিসেব তিনি জানেন না। তবে এই মুহূর্তে ভীষণ জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। কেন যেন তার মনটা একটু একটু দুর্বল হয়ে পড়ছে। বলা তো যায় না এমনও তো হতে পারে, এ রকম কেৎরে পড়ে থাকার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তার জীবনেও হয়তো কখনো আসতে পারে। বিচিত্র তো কিছু নয়। প্রতি ঘণ্টায় এ পৃথিবীতে কতজন খুন হয়ে যাচ্ছে তার পরিসংখ্যান কি করেছে কেউ কখনো?

লাশটা ঢেকে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। মাছি পড়ছে দ্যাখেন নাই? এই বলে আমজাদ হোসেন সন্ধানি চোখে তাকাতে লাগলেন ঘরটার চারদিকে। সিঁড়ির নিচে খালি এ জায়গাটুকু লোকে সাধারণত গাড়ি বারান্দা হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এরা এখানে মোটামুটি সুন্দর দেখেই একটা ঘর তুলে রেখেছে। রীতিমতো বেডরুম বানিয়ে ফেলেছে। এ বাড়িতে থাকবার ঘরের অভাব নাকি? ঘরটার দক্ষিণ দিকে একটা জানলা। জানলার ধারে টেবিল-চেয়ার বসানো। টেবিলের পাশে বেতের বুকসেলফ। পরিপাটি করে থরে থরে বইপত্র সাজানো। অগোছাল একটা বইও নেই। বেশির ভাগই ইংরেজি। একটু ঝুঁকে আমজাদ হোসেন বইগুলোর নাম পড়তে চেষ্টা করলেন। নিচের তাকটা দেশি-বিদেশি নানা রকমের ম্যাগাজিনে ভরতি। দরজার পাশে একটা সিঙ্গল খাট। আর বেশি কিছু নেই। ডেডবডিটা ঘরের মাঝখানে।

থানার সামনে এসে আমজাদ হোসেন নামলেন গাড়ি থেকে। দ্রুত পায়ে ঢুকলেন ওসির রুমে।
আসেন সার, উঠে দাঁড়াল ওসি।
গোয়েন্দা অফিসার বসলেন।
চা খাবেন তো সার ?
নো থ্যাঙ্কস। খেয়েই বেরিয়েছি। আপনি আমাকে কিছু ইনফর্মেশন দিয়ে হেল্প করেন।
কি জানতে চান বলেন।
আমি ভদ্রলোকের দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি। আপনাদের যদি কিছু জানা থাকে।
তেমন কিছু আমরা জানি না সার। বাইরে থেকে মানুষটাকে চিনতাম। তাতে করে তো মনে হয়নি কোনও ঝামেলা। আর মেয়েলি অভ্যেসও তার ছিল না বলেই জানি। নামাজ-টামাজ পড়তেন। তবে ওনার স্ত্রীও নিখোঁজ। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।

কিছুক্ষণ আর কথা বললেন না আমজাদ হোসেন। এক সময় বললেন, আমি ইউনুস মোল্লার রক্তমাখা স্যুটটা দেখলাম। আমার কিন্তু মনে হয় স্ত্রীর সঙ্গে তার যে কোনও কারণেই হোক মনোমালিন্য চলছিল। আর ভদ্রলোক এমনিতেও একটু উদাসিন টাইপের ছিলেন। খুব বেশি জটিলতার ভেতর যেতে চাননি কখনো।
স্যুটটা দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন সার?
হ্যাঁ, নিলাম। কিছুক্ষণ টেবিলের ওপর পেপারওয়েটটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলেন আমজাদ হোসেন। কি যেন ভাবলেন একটু। বললেন, ভদ্রলোকের স্যুটের রং কালো। আর রাত্রে কেউ কালো স্যুট পড়ে বেডরুমে থাকে না।
ওটা বেডরুম নয় সার, ওনার পড়ার ঘর।
তাহলে বুঝেন। রাত্রে তিনি ওঘরে কি করছিলেন?
ওসি এতক্ষণে ঘটনার তল পেলেন। মার্ডারটা নিয়ে কাল রাত্রে বেশ একটা বিপাকের ভেতর পড়েছিলেন তিনি। শহরের নামিদামি লোক এই ইউনুস মোল্লা।

চলবে