আদিম

রহস্যকাহিনি শেষপর্ব

প্রাচ্য তাহের

প্রকাশিত : মে ২২, ২০১৮

খুনটার ব্যাপারে অনেক কিছু জানে ও। ভয় খেয়ে গেছিল হয়তো। বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালেন আমজাদ হোসেন। তাকালেন রাজুর দিকে। জিগেশ করলেন, এ ঘরে থাকতেন কে?
কেউ না সার।
খাট পাতা দেখলাম।
দুলাভাই মাঝে মাঝে রাতে এখানে থাকতেন।  
যেদিন স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হতো। যোগ করলেন আমজাদ হোসেন। কালরাতেও ছিলেন, না রাজু?
জ্বি।
আর তুমি কোথায় ছিলে?
আমি তো সার...
তুমি পাহারায় ছিলে এ ঘরে।
রাজু কথা বললো না।
বইপত্র কার?
দুলাভাইয়ের।
খুব পড়তেন বুঝি।
জ্বি।
ওকে চলো। অবিনাশ?
বলেন সার।
ফুলগুলো ন্যাও। তোমার বউকে দিয়ো।
রজনীগন্ধা! কোথায় পেলেন সার?
এ বাড়িতে বাগান আছে। চলো।
নেমে এলেন আমজাদ হোসেন।

বড় খোলা একটা মাঠ ছাড়িয়ে একটা গলির মুখে এসে থামল গাড়ি। নেমে এলো তিনজনে। পয়সাঅলা এলাকা। এ দিকটায় আগে কখনো আসা হয়নি আমজাদ হোসেনের। উঁচু উঁচু বাড়িগুলো অহংকারীর মতো দাঁড়িয়ে আছে মাথা তুলে। চির উন্নত মম শির। আপনমনেই হাসলেন তিনি। এখনো সাম্যবাদের স্বপ্ন দেখেন তিনি।
কোন বাড়ি রাজু?
আঙুল তুলে রাজু দেখাল, ওই যে তিনতলা শাদা বাড়িটা দেখছেন, ওইটেই। বাড়িটার দিকে চেয়ে তিনি বললেন, রাজুর পাহারায় থাকো অবিনাশ।
আপনি একাই যাবেন সার?
হ্যাঁ।
আমি আসি।
দরকার নাই।

দ্রুত পা বাড়ালেন আমজাদ হোসেন। বলে গেলেন, রাজুকে চোখের আড়াল করো না। ওর লঘু দণ্ড পাওনা আছে। ফিরে এসে সেটা মিটিয়ে দিতে হবে।

মেঘের আবডালে হঠাৎ করেই মুখ লুকলো চাঁদ। তিনি খুশি হলেন। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। তিনি এগিয়ে গিয়ে পেছনের দেয়াল টপকে ঝুপ করে নেমে পড়লেন ভেতরে। কিসের সঙ্গে যেন আচমকা হোঁচট খেলেন। কিন্তু সামলে নিলেন ঠিকই। এদিকটা বাগান। বেশ কিছু সৌখিন ফুলের চাষ করা হয়েছে। পকেট থেকে পিস্তল বের করে এগিয়ে গেলেন সামনে। পাইপ বেয়ে ওপরে উঠলেন। সাবধানে বারান্দায় উঠে এলেন। কাউকে দেখতে পেলেন না। গুটি গুটি পা ফেলে প্রতিটা পদক্ষেপ মেপে মেপে এগোতে লাগলেন। বারান্দায় একশো পাওয়ারের একটা বালব জ্বলছে। একটু একটু কাঁপুনি টের পাচ্ছেন বুকের ভেতরে। হঠাৎ করেই টের পেলেন তিনি। এ রকম হয় তার। অনেক ভেবেচিন্তেও এর কোনও কারণ খুঁজে পাননি তিনি। দীর্ঘদিন হয়ে গেল আছেন এ লাইনে। কখনো কোথাও ব্যর্থ হননি। প্রতিটা অপারেশন সাকসেস তার লাইফে। ওপর মহলে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সুনাম আছে তার। সাহসও যে তার খুব একটা কম তা কিন্তু নয়। তবুও নিজের অজান্তে ঘটে যায় ব্যাপারটা। আসলে এমন কিছু কিছু ব্যাপার মানুষের মধ্যে থাকে সহজে যার গভীরতা মাপা যায় না। এটাও সে রকম কিছু হয়তো।

একটা রুমের কাছে আসতেই ফিসফাস শব্দে কথা শুনতে পেলেন তিনি। সেই সঙ্গে চাপা হাসি। নারীকণ্ঠও শোনা যাচ্ছে। কণ্ঠটা বেশ মিষ্টি। কাচের চুড়ির মতো রিনঝিন শব্দের মতো হাসিটা। শুনতে ভালো লাগে। টানা বারান্দা। সাবধানে জানলার কাছটায় এসে দাঁড়ালেন তিনি। ভেতরে চেয়ে চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেন বুকের মধ্যে। যা ভেবেছিলেন তাই। ইউনুস মোল্লার বউ এক স্বাস্থ্যবান নাদুসনুদুস দেখতে লোকের কোলে বসে বাচ্চাদের মতো আদর খাচ্ছে। দুজনের কারোর গায়েই কাপড় নেই। মহিলার মুখ দিয়ে চুকচুক আওয়াজ বের হচ্ছে। আহ্লাদি সে শব্দ। শরীর শিরশির করে ওঠে। উঁচু ফোমের বিছনায় বসে আছে তারা। দেহ একবার উঠছে একবার নামছে। শ্বেতশুভ্র পায়রার মতো ধবধবে শাদা স্তন ঝাকুনির তালে তালে দুলছে। ওই গম্বুজে চম্বুকের মতো আটকে যায় তার চোখ। এক সন্তানের জননী হওয়া সত্ত্বেও এই এতটা বয়েস পর্যন্ত এসেও তার স্তন এখনো সুঢৌল, উন্নত। কলেজগার্ল হিসেবে ওই রকম ছিপছিপে তন্বী দেহখানা অনায়াসে চালিয়ে দেয়া যায়। অপূর্ব বিস্ময় ভরা চোখে অফিসার চেয়ে থাকেন পায়রা দুটোর দিকে। ভীষণ রোমাঞ্চ অনুভব করেন তিনি। তার বুক ধুকপুক করে। মনে হয় পায়রা দুটো এখুনি বুঝি বুকের নরম আশ্রয় ছেড়ে পাখা মেলে এই জানলা গলিয়ে উড়ে পালিয়ে যাবে। ঠোঁট দুটো কেমন তাক করে আছে তার দিকে।

ভেতরে যেন ঝড় উঠেছে উন্মাতাল। এয়ার স্প্রের গন্ধে বাতাস যেন পাগলানাচ জুড়ে দিয়েছে ঘরের মধ্যে। মেঝের ওপর ছেড়ে রাখা জামাকাপড় জড়িয়ে-মড়িয়ে পড়ে আছে। মিনহাজের একটা হাত কখনো মহিলার বুকে আবার কখনো নিতম্বে ঘোরাফের করছে অনবরত। অন্যহাতে মহিলার কাঁধ ধরে ভারসাম্য রাখছে। ডিমলাইটের আবছা আলো-আঁধারিতে দৃশ্যটা স্বপ্নের ভেতর ঘটছে বলে মনে হয়। মিনহাজের সবল বলিষ্ঠ বাহুর বন্ধনে মহিলা বাচ্চা মেয়ের মতো, যেন কাতুকুতু দিচ্ছে কেউ এমন ভঙ্গিতে মাথা দুলিয়ে হেসে ওঠে খিলখিল করে। মহিলার নাভির নিচে চোখ পড়তেই শ্বাস নিতে ভুলে গেলেন তিনি। এরপরও হাতের পিস্তলটা তুলে হুংকার দিয়ে উঠলেন, হ্যাণ্ডসআপ!