আন্ডারগ্রাউন্ড

উপন্যাস ৩

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৮, ২০১৮

মামুন আর দশটা ওসির মতো না। পুলিশ মাত্রই ঘুষখোর এমন একটা ধারণা চালু আছে। মামুন তেমন না। আবার সিনেমার হিরো টাইপ কোনো পুলিশও না। তবে সে কিছুটা সৎ। কিছুটা কারণ, সে ঘুষ খায় না বিষয়টা এমন না। ঘুষ খায় লোক বুঝে। ধনীর থেকে টাকা নেয়, গরিব হলে নেয় না। আসলে সে সৎভাবেই বাঁচতে চায়। কিন্তু বাজারের লাগামহীন দাম, জীবনের নানা চাহিদার জন্য তার প্রচুর টাকা দরকার। তাই উপরি ইনকাম করে।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, মামুনের বাবা সরদার করিম। উনি ছিলেন স্কুল শিক্ষক, খুবই সৎ মানুষ। উনি এতোই সৎ যে, ঘুষ খেয়ে উনার সামনে দাঁড়াতে ভয় লাগে মামুনের। গ্রামে গেলেই সরদার সাহেব মামুনকে প্রায় একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন প্রতিবার, কি রে ঘুষ খেয়ে তো ভুড়ি বানিয়ে ফেলেছিস। পেট ফেটে যাবে ফুলতে ফুলতে!

মামুন বিনয়ের সাথে সেটা অস্বীকার করে বলে,  না না আব্বাজান, আমি ঘুষ খাই না। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। তবে খুব ধনী ব্যক্তিরা মাঝে মাঝে কিছু উপহার দিলে না করি না।

সরদার সাহেব বলেন, তুমি রবিন হুড নাকি? গরিবের বন্ধু রবিন হুড।
লজ্জায় মামুনের মুখ লাল হয়ে ওঠে। মানুষ যুক্তি দিয়ে একটা অন্যায়কে এমন একটা শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করায় যার ফলে অন্যায়টা ন্যায় মনে হয়। মানুষ তখন সে অন্যায়টা করে অপরাধবোধ কাটিয়ে ওঠে। মামুনও তাই করে। মামুন ধনীদের থেকে টাকা খেয়ে নিজেকে রবিনহুড ভাবতে থাকে। তাতে কোনো অপরাধ বোধ হয় না তার।

মামুন হঠাৎ ঘুষ নিয়ে কেন এতো ভাবছে সেটা বুঝছে না। এই লোকটা মানে তোফাজ্জল মহা জটিল মস্তিষ্কের লোক, মামুন সেটা বুঝে গেছে। তার কিছু কারণ আছে। মামুন কারণগুলো পর পর সাজালো—
এক. লোকটাকে তুই থেকে আপনি বলতে বাধ্য হয়েছে মামুন। মামুন জানে এটা তোফাজ্জল তাকে কোনো এক বিশেষ ক্ষমতাবলে বাধ্য করেছে। কিন্তু সেটা কিভাবে তা জানে না মামুন।
দুই. তোফাজ্জল মামুনের সাথে একটা মাইন্ড গেম খেলছে। কারণ অন্য কোনো মানুষ হলে মামুন ততোক্ষণে তার হাড় মাংস আলাদা করে দিতো পিটিয়ে। কিন্তু তোফাজ্জলের ক্ষেত্রে সেটা করতে পারছে না।
তিন. তোফাজ্জল বলছে সে মন্ত্রীকে সাবধান করতে চায়। কিন্তু কিসের সাবধান!

আরো কয়েকটা পয়েন্ট মামুনের মাথায় এলো। কিন্তু আপাতত এই তিনটার উত্তর লাগবে। মামুন শেষ থেকে শুরু করলো, আচ্ছা আপনি মন্ত্রী সাহেবকে কিসের জন্য সতর্ক করতে চান বলেন। তোফাজ্জল বল্লো, স্যার এটা উনাকে ছাড়া কাউরে বলা যাবে না। আপনি আমাকে মেরে লাশ বানিয়ে দিলেও বলতে পারবো না। মামুন বুঝলো, এটার উত্তর এখন সে আর পাবে না। কারণ এই লোককে মেরে সত্যটা উদ্ধার করা কঠিন। মামুন মানুষ চেনে। এই টাইপ লোক আর বিপ্লবী লোকদের মেরে কাজ হয় খুব কম।

মামুন মাইন্ড গেম বিষয়ক বাকি দুইটা প্রশ্নের কথা ভুলে গিয়ে অন্য প্রশ্ন করে বসলো, আচ্ছা তোফাজ্জল আপনার বাড়ি কোথায়। করেন কি? তোফাজ্জল বল্লো, স্যার আমি ভাগ্য গণনা করি। ওটাই আমার পেশা। আর থাকি ঢাকার এক বস্তিতে। বাপ মা মারা গেছে অনেক আগেই। আর কেউ নাই চোদ্দগুষ্টিতে। আছে কিছু কিন্তু ওদের সাথে যোগাযোগ নাই।
মামুন বল্লো, কোন বস্তি?
মিরপুর ১ নম্বরের কাছের একটা বস্তি স্যার।
মামুন মাথা দোলালো। যেন সব স্বাভাবিক। তারপর হুট করে মনে হলো, ভাগ্য গণনা! সে জিজ্ঞেস করল, কিভাবে ভাগ্য গণনা করেন, হাত দেখে না মুখ দেখে?
স্যার আমি মুখ দেখে।
বেশ, আমারটা করেন তো।
স্যার আপনি সিগারেট খাবেন আরেকটা?
মামুন অবাক হলো, সে সিগারেট খাবে, এটা তোফাজ্জল জানলো কিভাবে?

চলবে