আন্ডারগ্রাউন্ড

উপন্যাস ৪

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ০৯, ২০১৮

মামুন সিগারেট জ্বালালো। জিজ্ঞেস করল, আপনি নিবেন? তোফাজ্জল একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে সিগারেট নিলো। তারপর অদ্ভুতভাবে দেশলাই দিয়ে সেটা জ্বালালো। মামুন সেটা দেখে মুগ্ধ হলো। এই আধামরা লোকটা মামুনকে পদে পদে মুগ্ধ করছে। অথচ এমন কোনো হাতি ঘোড়া মারে নাই তোফাজ্জল। তাও মামুন মুগ্ধ হচ্ছে। আবার বিরক্তও হচ্ছে।

দুপুর হয়ে এলো। মামুনের লাঞ্চ আসবে এখনই। মামুন ঘড়ি দেখলো। জিজ্ঞেস করল, আপনি কি খাবেন, ভাত না বিরিয়ানী? এ এলাকায় ভালো মাটন বিরিয়ানী পাওয়া যায়। তোফাজ্জল বলল, স্যার আমি একবেলা খাই শুধু। রাতে। মামুন বলল, মানে! কারণ কি? তোফাজ্জল উত্তর দিলো, কম আহারে শরীর ভালো থাকে। অনেকদিন বাঁচা যায়।

মামুন আর কথা বাড়ালো না। সে বুঝে গেছে তোফাজ্জল উঁচু মাপের লোক। তার মতো ৫/৭টা মামুনকে রাতে ভাত দিয়ে মাখিয়ে খেয়ে হজম করে সকালে টয়লেটে রেখে আসে তোফাজ্জল। থানার পাশের একটা দোকানে মাটন বিরিয়ানী কিনতে এসেছে কন্সটেবেল দীনেশ চন্দ্র। আজ তার মন ভালো। রোজ তাকে দিয়ে বিফ বিরিয়ানী আনায় মামুন। শুধু আনালেই হতো কিন্তু মামুন আবার সাথে বিরক্তিকর উপদেশও দেয়।

একদিন তো মামুন বলেই ফেললো, দীনেশ গরুর মাংস হলো দুনিয়ার সেরা মাংস। না খেলে বুঝবা না। ধর্ম নিয়ে এতো ভেবো না। আমার ধর্মে তো মদ খাওয়া হারাম। তাও আমি গরুর মাংস আর রাম খাই। ভয়াবহ স্বাদ! তুমিও ট্রাই করো একবার। শুয়োর খেয়েছি কতোবার তার হিসাব নাই। দীনেশ রেগে গিয়েও নিজেকে শান্ত করলো কারণ মামুন শুয়োর খেয়েছে এটাতে সে বেশ মজা পেয়েছে। শুয়োর আবার শুয়োর খায়!

দীনেশ বিরিয়ানীর দোকানের সামনে দাড়াতেই দোকানের মালিক বললো, কয় প্যাকেট লাগবে? দীনেশ বললো ২ প্যাকেট দিয়ো। মাংস ভালো দিবা। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে দীনেশ তোফাজ্জলের কথা ভাবছে। লোকটা গত সাতদিন হলো মন্ত্রী সাহেবের বাড়ির আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিল। গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন এটা ফোনে জানায় মামুনকে। দীনেশ আর আর দুই কনস্টেবল গিয়ে তাকে ধরে আনে। লোকটাকে ঠিক ধরে আনতে হয়নি। ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তোফাজ্জল অবাক হলো।

দীনেশ তাকে বললো, তোর কেস কি রে? চল থানায়। শালাকে পিটিয়ে তামা তামা বানিয়ে ফেলবো। তোফাজ্জল খুব স্বাভাবিকভাবে ওদের সাথে হেটে এসে গাড়িতে বসলো। তারপর মামুনের সামনে বসানো হলো। কিন্তু মারা তো দূরের কথা মামুন তাকে সিগারেট খাওয়াচ্ছে। দেখে রাগে শরীর জ্বলছে দীনেশের। বিরিয়ানী প্যাক হয়ে গেছে। মামুন বলেছে এক প্যাকেট বিরিয়ানী। কিন্তু দীনেশ নিয়েছে দুই প্যাকেট। এক প্যাকেট তার জন্য। ফ্রি জিনিস, বেশি হলে ক্ষতি নাই। এই দোকানে ইহকালে ও কোনো টাকা দিয়েছে কি না মনে নাই।

চলবে