জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯৭৬ মৃত্যু: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২

জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯৭৬ মৃত্যু: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২

আপন মাহমুদের পাঁচটি কবিতা

স্মরণ

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮

মা প্রজাপতি ও অন্যান্য ছায়া

মায়ের উদ্দেশে বাবা যে চুমুটা ছুড়ে দিয়েছিলেন বাতাসে
শুনেছি, সেই হাওয়াই চুমুটা থেকেই জন্ম নিয়েছিল
পৃথিবীর প্রথম প্রজাপতি

মা, পৃথিবীর যেকোনো নারী থেকে যাকে কখনোই আলাদা করা
যায় না-তাকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত— কান্ত--বিভ্রান্ত সেই প্রজাপতিটার
ডানা থেকে যখন টুপটাপ ঝরে পড়ছিল রঙের আকুতি— রঙের
সেই অপচয় ঘোচাতেই সম্ভবত জন্ম হয়েছিল পৃথিবীর আর
সব প্রজাপতির

মাকে বাবা খুঁজে পেয়েছেন সেই কবে! অথচ, তার মুুখের দিকে
তাকিয়ে কখনোই মনে হয়নি— জীবনে একটাও প্রজাপতি তার
খোঁপায় বসেছে।

দুই.
গোলাপ অথবা চন্দ্রমল্লিকার সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক কেমন ছিল
জানি না— তবে কোনো এক শীতসকালে ঘরের পেছনে অকারণে
ফুটে থাকা কিছু ঘাসফুলের সঙ্গে মা আমার আলাপ করে দিয়ে
বলেছিলেন, ‘জীবনের যত কফ-থুথু আর উড়াল হারানোর
বেদনা আমি জমা রেখেছি এই ঘাসফুলের কাছে, এমনকি প্রসব
বেদনাও’— সেই থেকে যেকোনো নীল ঘাসফুলই আমার মায়ের
প্রতিনিধিত্ব করে— যার আজো কোনো বাজারমূল্য নেই

এখনো শীত আসে পৃথিবীতে, আসে বসন্ত— গোলাপ অথবা
চন্দ্রমল্লিকারাও এখনো আলতা পরে পায়ে— তবু পৃথিবীর যত
খুন, প্রতারণা আর ব্যর্থ-প্রেমের কবিতা নিয়ে আমি সেই
ঘাসফুলের কাছেই যাই

চোখ বন্ধ করে একটু দাঁড়াই...

তিন.
আমার জন্মের রাতে একটাও নত্র খসে পড়েনি মাটিতে--যদিও
আপন-আকাশ ভুলে মা আমাকেই তুলে ধরেছিলেন তার প্রার্থনার
করতলে— প্রার্থনা শেষে মা আজো চোখ মোছেন— যে চোখে খুব
কাছের নক্ষত্রটাকেও ঝাপসা দেখায়!

বাবা রাজমিস্ত্রি, দাদি আত্মহত্যা করেছেন পেটের পীড়ায়— তবু
আমার কখনো সাব-কন্ট্রাক্টর কিংবা এলএমএফ ডাক্তার হতে ইচ্ছে করেনি— বরং নত হতে না-পারার অহেতুক বেদনা নিয়ে আমি
আজো বেজে চলেছি সেই বেহালাবাদকের আঙুলে— ঘনকুয়াশার
দিকে নিরন্তর হেঁটে যাওয়া যার অমোঘ নিয়তি

আমার জন্মধ্বনিতে কাঁপেনি আকাশ— উৎসবের একটাও বাতি
যায়নি নিভে— কেবল কোকিল, কোকিল উড়ে গেছে দূরে...

চার.
মা, তোমার বেজার মুখের প্রতিবেশী আমি এক চুপচাপ বালক--নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি সেই কবে, নবম শ্রেণিতে— নিজেকে ডুবিয়ে ফেলেছি
সেই কবে, জিল্লাল মিয়ার দিঘিতে— এখনো আনানসির মতো ঘুরছি
দেখো, বন্ধুর লোভে...

মা, তোমার প্রসববেদনা থেকে সেই কবে পথের শুরু— হাঁটতে
হাঁটতে পৃথিবী দুপুর হয়ে গেছে— তবু, বন্ধুর মতো কোনো ছায়া
নেই চারপাশে— বটের ছায়াও কিনতে পাওয়া যায় না বাজারে।

পাঁচ.
মায়ের কপালের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা উৎকণ্ঠাটুকু নিয়ে এসেছি
আমারও নামের পাশে লেখা যেতে পারে ‘সম্ভাবনা’— সম্ভাবনার
যে দ্বার লাঙলের খুলবার কথা— তার দরোজায় আজো বসে
আছেন বাবা— যার ঘোলাটে চোখে এখনো থকথক করছে
কাদাপানির সংশয়, আড়ষ্টতা...

আড়ষ্টতার হাত ধরে কত দূর যাবে মায়ের বোবা ছেলেগুলো!

আমারও উদ্দেশ্য ছিল দূর— অথচ, ঘরের কাছেই বুনোফুল দেখে
থমকে দাঁড়াতে হলো— দাঁড়িয়ে আছি

শুনেছি, দাঁড়াতে জানলে সকল দূরই একদিন নিকটে আসে।