আবু তাহের সরফরাজের একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত : অক্টোবর ২১, ২০১৮

ছায়াসঙ্গী

যেভাবে হাঁটছ, সেভাবেই হাঁটতে থাকো
ছায়ার দিকে তাকিও না;
তুমি না তাকালেও তোমার দেহের সাথে
সেও চলেছে পথ থেকে পথে— বেপথে

একথা তোমাকে মনে রাখতেই হয়
আর তাই, তুমি হাঁটতে থাকো ছায়াসঙ্গী হয়ে।

চাঁদ

সূর্যের আলোয় চাঁদ দ্যাখা যায় না
যদিও সে আছে, তবু অনুজ্জ্বল

সূর্য ডুবে গেলে প্রকাশ পায় তার ঔজ্জ্বল্য
রাত্রির স্তব্ধতায়, মহাবিশ্বের নিঃসীম নির্জনে

এসময় চাঁদ নিজেই অনন্য!

সঞ্চয়

যা পেলাম আর যা পেলাম না
তা সকলই আমার সঞ্চয়

আলোর আড়ালে আঁধার
আঁধারের আড়ালে আলো
         এই সেতু
পেরিয়ে যেতে যেতে আমি
গোধূলির সূর্যাস্ত দেখেছি।

ছায়া

এক মানুষের দুইটা ছায়া
এক সে নিজে
আরেক মায়া।

গোলাপের কাশিদা

গোলাপের কাশিদা মনে হলো
যেন একটি নক্ষত্র
আকারে-প্রকারে উজ্জ্বল

এই সৌন্দর্য কি নারী?
     গাছ?
               পাখি?
                         অন্ধকার?
            ছিপছিপে একটা নদী?
অথবা আমার হৃদয়!

একলা কেন

আকাশ মেঘে যাচ্ছে ঢেকে
এই দৃশ্য খাতায় এঁকে
চাইলে তুমি
পায়ের সাথে পথের ধুলো
পায়ের হাঁটা দুঃখগুলো
আঁকলে তুমি

একলা কেন?

পরজীবী

যা আছে, তা তোমার
যা নেই, তা আর কারও

যা আর কারও, তার দিকে
কেন হে চোখ তোমার?

তুমি কি পরজীবী?

কবিতা

আমি যে কবিতা লিখি তা কেউ পড়ে না
পড়ে না বলেই আমি কবিতা লিখি
যা কিছু পাঠযোগ্য তার সবই তত্ত্ব
কবিতা কিন্তু তত্ত্ব নয়, আনন্দ।

পৌরুষ

সিনেমাতে মেয়েরা যে পৌরুষ দ্যাখে তাই তাদের কাছে নায়কোচিত
এখানে পেশিবহুল আর বলিষ্ঠ মারপিটে নায়ক
গোলাপসম্ভবা রানি মুখার্জীকে চুমু খায়
পাশাপাশি আরেক ধরনের সিনেমা থাকে যেখানে নায়ক
ঋত্বিক ঘটকের সিনেমার পৌরুষ

সব চরিত্রই তো শরীরী
তবু জীবন কাঁধে নিয়ে যে নায়ক হেঁটে যায়
তার পৌরুষ কেন যেন মেয়েরা দেখতে পায় না!

 

বিষাদের স্মৃতি

কাঁচা হলুদের রঙ মেখে এতকাল পরে
                   তোমার পায়ের ছাপ
বিদ্যুৎ ঝলক

মনে আছে ধানখেত
তোমার পরিচয় মনে আছে, মনে নেই
বিষাদের স্মৃতি।

 

ঘোরের পাখি

ঘোরের পাখির মতো চলো উড়ে যাই
চাঁদের ওপর দিয়ে ওই জ্যোছনায়
আকাশের গায়ে কত ঝুলতেছে গ্রহ
হঠাৎই পড়ে যদি, করে বসে দ্রোহ?

ভয় হয়, উড়ি তবু কেঁপে ওঠে ডানা
ঘোরের মধ্যে জেগে উঠতে নেই মানা।

 

শিশুকাল

বিকেলের মুখরতা ভেঙে ডাকে কাক
সময়ের আড় ভেঙে তবু বেঁচে থাক।

আহা, চুলগুলো ভিজে বর্ষায় ডুবে গেল!
মেঘমাসে ঘুঘু ডাকে, শুনতে সে পেল।

ঝিরঝির বৃষ্টির আজকের দিনে
দ্যাখো, উড়ছে মাতাল বোশেখ
দ্যাখো, উড়ছে শিশুকাল

ও জল, মেঘের সাথে সংসার তোমার কত দিনের?

 

বুকের ভেতর হাওয়া

এই কি জীবন কাঁদছে রে মন একলা একা
পথের শেষে দৌড়ে এসে পেলাম দ্যাখা
এক পথিকের, শূন্য বিকেল
                          কাঁদছিল ফের।

রাত্রি এলে আর কিছু নয়, তোমার কাছে যাওয়া
এই ইচ্ছে বুকের ভেতর দোলাচ্ছে খুব হাওয়া।

 

প্রেম

আজ এইখানে শীতের মতো প্রেম
শরীর থেকে দিচ্ছে কে উত্তাপ?
হৃদয় তোমার নিজের কাছেই রাখো
শরীর শুধু বহন করে পাপ।

 

যাপিত জীবন

মানুষ বেঁচে থাকে তার স্বপ্নে
বাদবাকি সময় যে জীবন সে যাপন করে
তা যাপন করতে সে চায় না, সে
যাপন করতে চায় তার আকাক্সক্ষায় যে জীবন, তা
তার আরেক যে চরিত্র, তাকে

সুতরাং  কখনও কখনও মানুষ বেঁচে থাকে
          কখনও কখনও মানুষ বেঁচে থাকে না।