আবু তাহের সরফরাজের প্রেমের কবিতা
প্রকাশিত : মার্চ ২০, ২০১৮
দম্পতি
আহত ব্যাকুল নক্ষত্রেরা
ঘুম ছড়িয়ে দিচ্ছে
টগর-নোলক দম্পতি এক
তাই কুড়িয়ে নিচ্ছে।
ঘুম কুড়ানো মহৎ রীতি
ঘুমেই তো আশ্রয়
একজীবনে বয়েস কিছু
হয় যদি সাশ্রয়।
জঙ্ঘমে আর ঘামের দেহে
দাঁড়াচ্ছে ওই নারী
খুলতে হবে খেতের বেড়া
ফসল তোলা গাড়ি।
ঘরের ভেতর উঁইয়ের ঢিবি
খেতে এবার খরা
নারী হচ্ছে প্রশ্নবোধক
যায় না তাকে পড়া।
ঘুম ছড়ানো মাঠের ওপর
ঘুমোচ্ছে দম্পতি
শরীর জেগে আছে তবু
নেই কারও সঙ্গতি।
ঘর ভাঙে না, মানুষ ভাঙে
ভাঙাই সহজ রীতি
ঘুম কুড়োতে মাঠে এসে
কুড়োয় তারা স্মৃতি।
নারীর হৃদয় আজ ঘাস
মানুষ আসলে তার ছায়া
ভেতরে আর বাইরে
দিনে আর রাতে মানুষ তার ছায়ার সাথে ঘুরে বেড়ায়
মানুষ জানে না, জীবন এক ছায়াবাজি খেলা
ছায়ার ভেলকি দেখিয়ে মানুষ ফিরে আসে তার ছায়া ছায়া বাড়িঘরে
বেচেবর্তে থাকে, আর তারা
হৃদয়ের খুব কাছাকাছি থাকে নারীদের
সংসারের কড়িকাঠে ঝুলে পড়ে তারা সর্বংসহা ধরিত্রীর মতো
ঝুলে থাকতে থাকতে
ব্যাকা-ত্যাড়া নানাভাবে ঘাড় নেড়েচেড়ে হঠাৎ তারা দ্যাখে
জীবনানন্দ দাশ দাঁড়িয়ে আছেন আসমানের নিচে
এই ভবসায়রের মাঝখানে
আবার এসেছেন তিনি এই বাংলার নদীমাঠক্ষেত ভালোবেসে
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাই
ঝুলে ঝুলে দোল খাই
আর শুনি, জীবনানন্দ দাশ
বলতেছেন নিচু স্বরে,
বাংলার ঘরে ঘরে
নারীর হৃদয় আজ ঘাস।
আর তা শুনে আমাদের মনে হলো, এতদিন তবে আমরা
ঘাস চিবিয়ে এসেছি
নারীর খুঁটিতে বাঁধা পড়ে তার দেহের চারদিক ঘুরতে ঘুরতে
আমরা ঘাস চিবিয়েছি
চর্বচোষ্যলেহ্যপেয় আমাদের সংসার, আমরা তবু
ঘাস চিবোতে চিবোতে বেমালুম ভুলে যাই
নারীর হৃদয় আজ ঘাস!
চলো, মানুষের মতো খেলাধুলা করি
পাথর ভেঙে গড়িয়ে দিচ্ছ
ওপর থেকে নিচে গড়িয়ে পড়ছে পাথর
তুমিই আবার নিচের থেকে গড়িয়ে দিচ্ছ
নিচের থেকে গড়িয়ে পড়ছে পাথর
তুলে নিচ্ছি আমি। তুমি হাসছ আর গড়িয়ে দিচ্ছ পাথর...
এই খেলা জনে জনে রটে গেল ভবে
ফলে মানুষ শিখে গেল আমাদের কৃৎকৌশল
তারা এখন পাথর গড়িয়ে দিচ্ছে
তারা এখন পাথর কুড়িয়ে নিচ্ছে
তারা শুধু জানলো না হাসির রহস্য, চলো
আমরা এবার পাথরভাঙার কাজ করি
দু’চারটে পাহাড় ভাঙি, এরপর
সিসিফাসের সাথে এসো লেগে যাই অর্থহীন কাজে
এদিকের পাথর ঠেলতে ঠেলতে ওদিকে নেই
ওদিকের পাথর ঠেলতে ঠেলতে এদিকে নেই
এই খেলাও বেশ প্রাচীন
হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ খেলে আসছে
ব্যক্তিজীবন খেলছে সমাজজীবনে
সমাজজীবন খেলছে রাষ্ট্রীয় জীবনে
চলো, মানুষের মতো তাই আমরাও খেলাধুলা করি।
লাবণ্যগোলাপ
বোধের ভেতর বোধিলতা সে
ফুটে ছিল ঊষারাঙা পাপড়ি খুলে, যেন লাবণ্যগোলাপ
যেন সে সৌন্দর্য-গর্ভের রেণু
তুলে দিতে চায় তোমার মুখে
তুমি নত হও
যদি চিনে থাকো তবে নত হও হে মহাত্মন
তবে ধীর, তোমার খুব তাড়া থাকতে পারে
বোধের অপেক্ষাকাল অনন্ত
বোধের ভেতর অপেক্ষায় থাকে সুন্দর
আরেক সুন্দর এসে তাকে ডাক দেবে বলে
কোনও কোনও সুন্দর এসে কোনও কোনও দিন তাকে ডেকে বলে,
এসো স্নানে যাই।
স্নানে যেতে যেতে সুন্দর দ্যাখে
আরেক সুন্দর যেতে যেতে তার মুখোশগুলো খুলে ফেলছে
আর সে হাসছে
আর সে কাঁদছে
তারপর
সুন্দর ফিরে আসে তার বোধের ভেতর
কেউ এসে তাকে ডেকে নেবে বলে...
নিষিদ্ধ ফল
সুন্দর নাকি আদিপাপ প্রভু? বহন করে যা দেহ
গন্ধম ফল কার্যত জ্ঞান শুরু হলো সন্দেহ।
দেহে দেহে তাই কাঁপুনি ছড়ায় বস্তুত বিদ্যুৎ
সুন্দর যেন দেহের তন্ত্র কেঁপে ওঠে অদ্ভুত।
ধকধক করে হৃদের পিণ্ড কাঁপে দেহ জলাশয়
গন্ধম খেয়ে ফেলেছিস বলে জীবদেহ পরিচয়।
তাড়না তো কাঁপে গন্ধম খাবে রজঃনিসৃত খুন
শীৎকারে তাই চেটে চেটে খায় মন্থনজাত নুন।
দুধে আলতায় দেহ খোলতায় ভেতরে মুগ্ধ নদী
তীব্র জোয়ারে ভেঙে পড়ে ঢেউ জৈব তাড়নার গতি।
আবার ভাটায় ঢেউ নেমে যায় দেহে আসে স্থিতি
ঢেউহীন নদী বয়ে যেত যদি তবে কারে কিস দিতি?
নদী যা শেখায় আদি সেই ভাষা বিলুপ্ত আজ ভবে
পৃথিবীর নদী ভাষাহীন তাই দেহ আজ ভাষা হবে।
দেহ নিয়ে নদী
নদী নিয়ে দেহ
বারবার তবু
কেন সন্দেহ?
নুনের পুতুল গলে যায় দেহে লীন হয় শূককীট
সুন্দর যদি পাপ তবে প্রভু দেহে কেন দিলে লিক?
দণ্ড লইয়া দণ্ডিত কেন আদম?
গ্রহ থেকে গ্রহে শুনতেছি তাই মাতম
সুন্দর যা যা ইবলিস তা তা সাজিয়ে-গুছিয়ে আরও
সুন্দর করে আদমের চোখে কেন তা বলতে পারো?
ঘটনা তো আদি এবং অনাদি বিভাজিত দুই কোষ
নিউট্রন আর প্রোটন মিলিলে আর কারে দিই দোষ!