আবু হেনা মোস্তফা কামালের পাঁচটি গান

প্রকাশিত : মার্চ ১৬, ২০১৮

এক.
কেন যে আমার তোমার লাগল ভালো
অত গোলাপ থাকতে
তাহলে ফুলদানিতে রাখলে কেন
বুকেই না হয় রাখতে।।

তবে কি কাঁটার ভয়ে দিলে নির্বাসন
জানি না কি সুখ পেলে শূন্য রেখে হৃদয় সিংহাসন
কি ভুল হতো যদি আমায় তুমি
অন্য নামে ডাকতে।।

এখনো গোপন আশা দিইনি বিসর্জন
বাতাসে ঝরা ফুলের অশ্রু গেঁথে জানাই আমন্ত্রণ
কি দোষ বলো তুমি সাধ ফুরালে
একা প্রহর জাগতে।।
সুর: আব্দুল আহাদ

দুই.
কেন যে আমার কৃষ্ণচূড়ার বনে
গানের লগন রঙের মাধুরী
ছড়ালো আপন মনে।।

কে তুমি আমার শূন্য হৃদয় ভরে
এত গান দিলে ফাল্গুনের মতো করে
নয়নে পরালে মায়াবী কাজল
ভালো লাগা পরশনে।

এত গান এত ভালো লাগা তবু
বুঝি না কেন যে বাঁশি
বেদনার মেঘ আড়াল করেছে
আমার অবুঝ হাসি।

বুঝি না তো কেন দখিনার গানে গানে
হৃদয় আমার চেয়ে থাকে পথ পানে
রাঙা হয় মোর কবরী কুসুম
কেন আজ অকারণে।।
সুর: আব্দুল আহাদ

তিন.
কালো কলঙ্কের কাজল পরেছি
নিন্দার চন্দনে
বন্ধু এবার বেঁধেছি তোমায়
আজীবন বন্ধনে।।

ফিরে যাব বলে আসিনি এবার
সবি তো দিয়েছি যা ছিল দেবার
পায়ের নূপুর তবু বারবার
কেন বাজে ক্রন্দনে।।

জানি উৎসব ফুরালে প্রদীপ
নীরবে নিভিয়া যায়
একটি তারার অন্তরা কাঁদে
রাত্রির জলসায়।

মনে আছে মোর বেদনার ভার
সবি নিয়েছিলে দু’হাতে তোমার
হৃদয় আমার তবু বারবার
কেন কাঁপে পরশনে।।
সুর: আনোয়ার উদ্দিন খান

চার.
আমি এক রাজার কুমার
দুঃখ পেলেও হাসতে পারি।
বারবার ফিরিয়ে দিলেও
আবার ফিরে আসতে পারি।।

যখনি অহঙ্কারে ফিরাও গ্রীবা
মনে হয়, দেখিনি আর অমন বিভা
আমি তার আলোর স্রোতে
সারা জীবন ভাসতে পারি।।

কত যে সর্বনাশের আগুন এসে
তোমার ওই দুটি চোখের তারায় মেশে
আমি তার সোহাগ পেলে
মরণ ভালোবাসতে পারি।।
সুর: আনোয়ার উদ্দিন খান

পাঁচ.
অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে
সেদিন বর্ণমালা
সেই থেকে শুরু দিন বদলের পালা।।

নতুন মন্ত্রে ভরেছিলেন অঞ্জলি
আর নয় ভীরু ফাল্গুনি পদাবলি
কণ্ঠে তোমার বেজেছিল গান দারুণ অগ্নিজ্বালা।।

কঠিন ছন্দে বেঁধেছিলে মন্দিরা
গুরু গরজনে জেগেছিল বন্দিরা
ভেঙে পড়েছিল শত বন্ধন দুঃশাসনের তালা।।

আবু হেনা মোস্তফা কামালের ‘আমি সাগরের নীল’ বই থেকে পুনর্মুদ্রণ করা হলো

 

আবু হেনা মোস্তফা কামাল ছিলেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গীতিকার, গবেষক। ১৯৩৬ সালের ১১ মার্চ পাবনা জেলার উল্লাপাড়ার গোবিন্দা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ হতে ১৯৫৮ সালে অনার্সসহ বিএ এবং ১৯৫৯ সালে এমএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পঞ্চাশের দশকে ঢাকাকে কেন্দ্র করে সাহিত্য ও সংস্কৃতির যে নতুন ভুবন তৈরি হচ্ছিল, আবু হেনা ছিলেন সে পরিবৃত্তের তরুণ সদস্যদের একজন। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি সংস্কৃতিসেবী হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ সহযোগে আবু হেনা ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার কবিতা নামে একটি সঙ্কলনগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তরুণ বয়সে কবি ও গীতিকাররূপে তার সফল আত্মপ্রকাশ ঘটে। অন্তরঙ্গ অনুভব, গাঢ় আবেগ, রোমান্টিক আর্তি এবং কখনো কখনো স্বদেশবোধের শিল্পিত পরিচর্যা তার কবিতা ও গানগুলিকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। তিনি ছিলেন বাংলা গানের এক উজ্জ্বল বাণীকার, টেলিভিশনের বাককুশল রসিক উপস্থাপক ও আলোচক। ১৯৮৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।