আর্থার শোপেনহাওয়ারের কথাগুলি

অনুবাদ

ভাষান্তর: মুহম্মদ ইমদাদ

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৪, ২০১৮

এক.
প্রতিভাবান মানুষের কল্পনা দরকার। যাতে তারা বস্তুর মাঝে দেখতে পারে, প্রকৃতি মোটের ওপর কী গঠন করেনি।

দুই.
এটাই গভীর দুঃখ যা কোনো বন্ধুর মৃত্যুতে আমরা অনুভব করি যে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে এমন কিছু থাকে যা অ-অভিব্যক্ত এবং অদ্ভুতভাবে তার একার, যা কেউ-ই জানে না। এবং তা অপূরণীয়, চরমভাবে হারিয়ে গেল।

তিন.
অন্যের দ্বারা অভিব্যক্ত চিন্তাপ্রবাহ অবিরত চিন্তা করতে থাকলে তোমার নিজের চিন্তা বন্ধ হয়ে যাবে, মানে মরে যাবে। অবিরাম শিখনপ্রক্রিয়া ব্রেনকে হালকা করে ফেলে। ফলে তোমার নিজের চিন্তাসৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়, সেখানে স্থান করে নেয় কারো বই থেকে পাওয়া চিন্তা। এ কথাটি শেকসপিয়রকে মনে করিয়ে দেয়। তিনি তার সমসাময়িকদের বলেছিলেন, এরা অন্য দেশ দেখার জন্যে নিজের দেশ বেচে দ্যায়।

চার.
অস্বচ্ছ, ধূসর আর খসখসে মোজাইক করা ছবির সঙ্গে আমাদের জীবনের ঘটনাগুলোর মিল রয়েছে। কিন্তু কাছে থেকে তা দেখা যায় না। ঘটনাগুলোকে ভালোভাবে দেখার জন্যে অবশ্যই দূর থেকে দেখতে হবে।

পাঁচ.
এ চিন্তাই একজন মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অর্জন, আমার চেহারার সঙ্গে সুন্দর একটি ছবির মিল রয়েছে। যেখানে আলো আর ছায়া দুটোই সঠিক। যেখানে স্বরভঙ্গি সবসময়েই গীতময় আর পরমভাবে রয়েছে রঙের ঐকতান। বস্তুত, এটিই জীবনের সত্যি।

ছয়.
অন্তর্দৃষ্টি লাভের জন্যে যে বই পড়ে তার কাছে পড়াশোনা হচ্ছে সেই মইটির ধাপ যাতে করে সে আরোহন করে জ্ঞানের শিখরে। যখনই তার সামনে একটি ধাপের উদয় ঘটে সঙ্গে সঙ্গে সে সেই ধাপকে পেছনে ফেলে উঠে যায় আরও উঁচুতে। আর যারা স্মৃতিভাণ্ডারকে পূর্ণ করতে বই পড়ে, তারা সে মইয়ের ধাপগুলো ব্যবহার করে না। বরং ধাপগুলোর উদয়কে বন্ধ করে রাখে। নিজেকে বোঝাই করে আর বোঝার ওজন বাড়িয়ে আনন্দ পায়। তারা চিরকাল নিচে থেকে যায়, ছুঁতে পারে না জ্ঞানের শিখর।

সাত.
একজন মানুষ যতবেশি একা হবে, তত বেশি সে তার নিজের মতো হবে। নিঃসঙ্গতাকে যে ভালোবাসে না সে আসলে স্বাধীনতাকে ভালোবাসে না। কারণ মানুষ তখনই সত্যিকার স্বাধীন যখন সে একা।

আট.
অন্যদের মতো হতে গিয়ে আমরা আমাদের চার ভাগের তিন ভাগই হারিয়ে ফেলি।

নয়.
মহান মানুষেরা ঈগলের মতো। তারা নীড় গড়েন সুউচ্চ নিঃসঙ্গতার ওপর।

দশ.
উচ্চপর্যায়ের মেধা মানুষকে অসামাজিক করে তোলে।

মুহম্মদ ইমদাদ ভাষান্তরিত ‘আর্থার শোপেনহাওয়ারের কথাগুলি’ বই থেকে পুনর্মুদ্রণ করা হলো

 

জার্মান দার্শনিক শোপেনহাওয়ার ১৭৮৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। প্রথাবদ্ধ পড়াশোনায় তিনি বিশেষ মনোযোগী ছিলেন না। ১৮১১ সালে তিনি মেডিকেল-ছাত্র হিসাবে গোটিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য বার্লিনে চলে যান। বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করার পর ১৮৩১ সাল থেকে তিনি ফ্রাঙ্কফুর্ট আম-মাইন নগরে নির্জনবাস শুরু করেন। শোপেনহাওয়ার দুঃখবাদী ধারণার প্রবর্তক। জীবন-জগৎ সম্পর্কে অবিশ্বাস ও হতাশাই হলো তার দর্শনের মূল উপজীব্য। তিনি বুদ্ধির পরিবর্তে মানুষের ইচ্ছাশক্তির ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, প্রকৃত পরমসত্তা একটি অন্ধ প্রেরণাদায়ক শক্তি, যা ব্যক্তি বা বেষ্টিতে ইচ্ছারূপে প্রকাশ পায়। এ অন্ধ ইচ্ছাশক্তিই ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যক্তি বিভিন্ন প্রকার ইচ্ছাশক্তির দ্বারা তাড়িত হয়। সব ইচ্ছার তুষ্টি বিধান করতে পারে না বলেই ব্যক্তিকে দুঃখময় জীবনযাপন করতে হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো, ইচ্ছাকে দমন করা এবং লোভ-তৃষ্ণা, কামনা-বাসনার গ্রাস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। ১৮৬০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর শোপেনহাওয়ার মৃত্যুবরণ করেন।