আশরাফ রোকনের ৪ কবিতা

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৯, ২০১৮

জানালার দিকে

ঊষার আঘাতে ঘুম ভাঙলো ফুলগুলির
বরফশীতল উত্তুরে হাওয়ার তোড়ে
প্রত্যন্ত কাঁপছে দেখে গ্রামগুলি শীতে

বারান্দায় উবু দৃশ্যান্তরি আয়নায়
সূর্যের মুখ দেখবো ভেবে এখানে
দাঁড়িয়ে আজো তাই দিনের বাঁশিটুকু
বেজে ওঠার প্রতীক্ষাতে লীন

কুয়াশায় মন্ত্রিত পত্রহরিৎ যেন
শিশিরে সিক্ত ভেসে আসা আমি এক
আলোকিত উষ্ণ লাল ভরসাবিন্দু খুঁজি
চেয়ে অনুক্ষণ ওই জানালার দিকে।

পথের সরাইখানা

জন্ম ভালবেসে
রক্তাক্ত হওয়ার জন্যেই
অমাবস্যাতিথির অন্ধকারে
রিরংসাজাত
কোনো কূলভাঙা নদীতীরে
এ পথের সরাইখানায়

কাল যাপনের অভীপ্সায়
অনাহূত চলে এসে আজ
আলোর দিকেই অগ্রসর
আর ফিরে যেতে মন নেই

বিগত চাঁদের জোসনায়
আহত নির্মল বারবার
ভালোবেসে মনে হয় তাই
প্রান্তরের প্রবল বাতাস হয়ে যাই
সংগোপনে গোপন থেকে
চিরকাল চুপি চুপি বয়ে যাই

গভীর সমুদ্রজলে অতি
মুক্তোবতী ঝিনুক যে-মতি
ধ্যানের জগত খুঁজে পায়
নিবিড় হেঁটে হেঁটে সে-মতি
চলো দারুণ একাগ্রতায়
নিদারুণ গ্রীষ্মের রোদ্দুরে
অবিন্যস্ত আপন ছায়াদেরে
ধীরে পার হয়ে চলে যাই।

শৈশবস্মরণ

ঘুঘুপাখিদের উদাসি দুপুরে আজ
ছিন্ন না হওয়া কোন সুরের নুপূর
ঘুমিয়ে পড়া শৈশবের প্রান্তরকে
জাগিয়ে তুললো সহসাই
উঠোনে পতিত কড়ুইপাতায়
ঝরা ছায়াদের মাঝখানে
আশ্চর্য চিত্রল স্পর্শাতীত
দেখা দিলো কী যে
আশ্চর্য এক প্রাণস্পন্দন!

কখনো শেষ হবে না জানি
তার সৌন্দর্যের
সাদা রেখার আবহে চিরকাল
যা ফুটে ওঠে কেবলি
অস্ফুট আত্মার রঙের মতো পবিত্র
বোধিচিহ্নময় অমূল্য রত্নভাণ্ডারই বুঝি
ফিরে চাইলেও পাওয়া সম্ভব নয় যা কখনো
কোনো কড়ির বিনিময়েও কোনোদিন

আর সূক্ষ্ম অস্তিত্বচেতনায় প্রবল
আলোকের অতি গোপন তরঙ্গগুলি
আঁকতে পারিনি হায় কোনোদিন আমি
যে-রকম হেমন্তের বাতাসে ছড়ানো
হিমের ডানাগুলির গতির প্রত্যয়
বুঝতে পারেনি কেনো শৈশবস্মরণ
এই নিরালায় আজি
নাভিমূলের নিষ্প্রবাহ যন্ত্রণায়!

কী শোকে

ভেসে আসা কণ্ঠগুলির অপরিচিত স্বর চেনে না
এখানে আমাকে
আশ্বস্তও করে না গোধূলির কোনো একটি কণা

এসেছি নিজের অভিলাষে
নিঝুম পাহাড়ের অজুহাতে নয় কোনো
মৃত্যুর শ্বাশত অহং দিয়ে গড়া এ জীবন
তাইতো ফিরে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি সতত

যে টুকু মর্মের বিষাদ সে টুকুই প্রাপ্য শুধু
আকাশের রৌদ্রাবলির কাছে চাইবার
এ ছাড়া নেই এখানে কোনো বিনম্র স্বপ্ন আর

যত্ন করে বেঁধে দেবে কে বলো চতুর্ধার
ঝুর ঝুরে মাটির আর্তনাদ
কে বুঝবে কেনো কী শোকে!