আশ্রয়

পর্ব ৪

সুলতানা পারভীন

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৯

 
মায়ের কথাটা শুনে এক ঝটকায় ঘুরে মহুয়াকে দেখার চেষ্টা করলাম। মেয়েটা এক মনে রবিন আর মিমের সাথে খেলছে। একটু যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মাকে কিছু বলার জন্য মুখ খুললাম ততক্ষণে মোহনার বাড়ির লোকজনও চলে এসেছে। এতোদিন পরে পরিবারের সবাইকে একসাথে দেখেও মোহনাও খুশি হতে পারল না। আর আমি মনে মনে ভাবছি- আমাদের জন্য দিনটা স্পেশাল বানানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মেয়েটা নিজের জন্যই দিনটাকে ভয়ানক কষ্টের করে তুলেছে।
 
মোহনার বাড়ির সবাইও খুশি খুশি হয়ে আমার বাড়ির সবার সাথে-নয়ত মোহনার সাথে-নয়ত আমার সাথে-নয়ত বাঁধনের সাথে কথা বলছে বা আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। মহুয়াকে যেন কেউ দেখছেই না। 
 
মহুয়া অবশ্য ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে বলে মনে হল না। সবাইকে এটা ওটা সার্ভ করছে। কখনো কাজটা একটু রেখে আমার আর মোহনার কিছু লাগবে কিনা খোঁজ নিচ্ছে। আবার রান্নাঘরের দিকে ছুটছে।কি যে করছে কে জানে!
 
দুটো পরিবারের সকলের একসাথে জড়ো হওয়ার রহস্যটা বুঝতে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল। বাঁধন কোথা থেকে জানি একজন বয়স্ক হুজুরকে ধরে নিয়ে এসেছে। অবশ্য ধরে নিয়ে আসে নি। আমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে নতুন করে কাজীর কাজ করার জন্য খবর দিয়ে এনেছে। 
 
এদিকে এবার মোহনার সাথে লাল-নীল-বেগুনী হতে লাগলাম। মোহনা লজ্জায় লাল হচ্ছে-আর আমি লাল হচ্ছি রাগে। মহুয়া আর বাঁধনটা যে কি করে! আমাকে আগে থেকে বললে কি এমন ক্ষতি হতো! এখন তো বিয়ে করব না বলে বেঁকেও বসতে পারব না। হাজার হোক-এতোটা ভালোবাসি আমি মোহনাকে। তার উপর বউ বলে কথা! পরে তো আমার ঘরে থাকতে হবে নাকি! মোহনার যা জেদ-কি করতে কি করে বসে কেউ জানে না।
 
বিয়েটা শেষ হতে হতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। মহুয়া মোহনার সাথে দুষ্টুমি করছে। আর মোহনা রাগে কটমট করছে। কিন্তু এক ঘর লোকের সামনে কিছু বলতেও পারছে না।। আহা বেচারি!
 
-মা? তোমার না বিয়ে হয়েছে? নতুন বউরা বিয়ের পর কত কান্নাকাটি করে। নাকি মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে তাই?
-মহুয়া?
 
এদিকে বাঁধন আর আমি হেসে কুটিকুটি হচ্ছি।
 
 
মা আর নন্দিতা বাচ্চাগুলোকে নিয়ে চলে গেল। মোহনার মা বাবা আর বোন এসেছিল। উনারাও চলে গেলেন। এতোক্ষণে ঘরটা ফাঁকা হয়ে এলো। মহুয়া আর বাঁধন বাঁদরামি করে আমাদের ঘরটা আজ সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। তারপর মোহনার কটমটানি স্বত্বেও আমদের দুজনকেই ঘরে ঠেলেঠুলে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে দিল।
 
কি আর করা! রুমে গিয়ে দেখলাম মোহনা রেগে মেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আমি ওকে দেখে হাসছি। তাতে হিতে বিপরীত হল।
 
-আকাশ! তোমার খুব হাসি পাচ্ছে না?
-তোমার মেয়ে কিন্তু তোমাকে ফাটাফাটি করে সাজিয়েছে।
-আকাশ? তোমার মজা লাগছে না? বের হও। বের হও ঘর থেকে।
-কিভাবে বের হব? দরজা তো বাইর থেকে।
-যাও?
 
আমাকে যেতে বলে বেচারিই রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। আমিও কি করব বুঝতে না পেরে বারান্দায় গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ালাম।
বাইরে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলো মোহনার মুখে এসে পড়েছে। মুখটাতে মায়া মায়া একটা ভাব আছে মোহনার।
 
মোহনা মুখ ঘুরিয়ে আমাকে দেখে হাসল। ওর মুখে রাগের ছিটে ফোঁটাও নেই আর।
 
-ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছ?
-আমার চাঁদটাকে।
-ওই কোণায় দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখা যায়?
-আমি আমার চাঁদ দেখি-তুৃমি তোমার আকাশের চাঁদ দেখো।
 
ভাবছি মোহনার পাশে দাঁড়িয়ে সারা রাতটা কাটিয়ে কেন সারা দিনটাই কাটিয়ে দিতে পারব।
 
 
 
 
চলবে