ইনবক্সে বাতচিত

গৌতম কৈরী

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৫, ২০১৮

অল্প চেনা একজনের লগে ইনবক্সে বাতচিত—

: বিকেলে বের হবেন না? সন্ধ্যায়?
: না।
: কাল কাজ কি?
: ভাবছিলাম পুরান ঢাকা যাব কাল। কিন্তু কাল তো মিউজিক ফেস্টে যাব।
: ও। আমি পরশু যাব ফেস্টে।
: কাল অর্ক মুখার্জি।
: হুম আই উইল মিস ইট।
: ডোন্ট মিস অর্ক। হি ইস ম্যাজিশিয়ান।
: আই নো।
: ডোন্ট মিস। লাগলে চাকরি ছেড়ে দিন।
: লোল।
: গান ছাড়বেন কেন? গান গ্যালো তো প্রাণ গ্যালো।
বিপদে পড়ে যাব। তখন তো গান আমাকে বাঁচাবে না।
: সেটাও ঠিক। আমাদের চিনপরিচয় প্রায় নাই বললেই চলে।
: আমি একটু চিনি।
: ওইটুকুতেই চলবে। বর্তমানে আমাদের পরিচয় একটা অ্যাকাউন্ট এবং কিছু সেলফি।
: না, আর একটু জানতে চাই।
: খুব বেশি বলার কিছু নাই।
: তারপরও।
: এই নামটা বাবা-মার দেয়া নাম।
: হুম।
: মহারাজা শশীকান্ত আচার্য্য যে বাড়িটায় থাকতেন, সেই বাড়িটা আমাদের কলেজ ছিলে। বিশাল কলেজ গেট। সেই বিশাল মনের ভিতর নিয়ে, মগজের ভিতর নিয়ে চলে আসি আর এক বিশাল জায়গায়।
: বাহ্।কবিতার মতো লিখলেন।
: একটু কায়দা করে লিখলাম, এই আর কি। আপনার কবিতার সাথে যোগাযোগ ভালো মনে হচ্ছে?
: খোঁচাটা ভালো ছিল।
: না-না, খোঁচা কেন হবে। আমি এমন কয়েক হাজার বিষয় জানি না, যেটা আপনি জানেন। খোঁচা! প্রশ্নই আসে না।
: যাই হোক, বলেন তারপর।
: তারপর, আমার চোখ জুড়ে লাল পদ্ম, আদিগন্ত রোদ ও কুয়াশা, বর্ষা কদম, দীর্ঘ বরষা, অতিথি পাখি, কবিতার প্রান্তর।
: বাহ্। তারপর।
: অপর পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য।
: মানে?
: ওই আর কি। কবিতা পড়েন?
: এখন পড়ি না... তবে পড়তাম।
: আহারে। সিনেমা?
: দেখি এখনো।
: লাস্ট দেখা?
: থিওরি অব এভরিথিং।
: বেশ তো।
: ডিনার করেছেন?
: না তো। করবো। প্রায় এখনি করবো। আপনি বোধহয় যাবেন?
: আপনি কি থাকবেন ততক্ষণ?
: থাকবো।
: আমি এসে নক করবো তাহলে।
: তবে আমি অনেকক্ষণ নিজের কথা লিখেছি। আপনার পালা এবার। ফিরে এসে...
: আমি এত সুন্দর করে লিখতে পারি না... এই ভয়েই হয়তো ফিরে আসতে পারবো না।
: তাহলে একপাক্ষিক হলো বিষয়টা। আমি শুধু জানি, এবার আপনার পালা। আর এখানে তো কোনো কমপিটিশন হচ্ছে না। রচনা লেখা প্রতিযোগিতা তো নয়।
: আচ্ছা। বাই।
 
তারপর মহীনের ঘোড়াগুলি... শহরের উষ্ণতম দিনে, পিচগলা রোদ্দুরে বৃষ্টির বিশ্বাস তোমায় দিলাম... ফুটপাথ ঘেঁষা বেলুন গাড়ি... গানটা গাইতে থাকলো ইউটিউবে।

গান শেষ হওয়ারও অনেকক্ষণ পর—
: ডিনার শেষ। আপনার?
: শেষ অশেষ ওই একই কথা।
: দেখেন আমার তেমন কোনো কথা নাই। পড়াশুনা শেষ, এখন চাকরি করি। ঢাকায় থাকি। বাবা-মা বাড়ি।
: হুম।
: ছোটবেলায় মা গান শেখানোর জন্য অনেক চেষ্টা করতো। আমার শিখতে কখনোই ভালো লাগতো না। যই গানটা কঠিন লাগতো বই থেকে সেই পেইজ ছিড়ে ফেলতাম। ভয়ংকর। অনেক চেষ্টার পরও আমাকে দিয়ে গান হয়নি।
: ওফ।
: তারপর আর্ট, আবৃত্তি, বিতর্ক মিলিয়ে অনেককিছু। আমি গান গাইতে ভালোবাসি না... আমি গান শুনতে ভালবাসি।
: বাহ্ তার্কিক।
: হুম, কিন্তু সব কিছু ছিল স্কুল পর্যন্ত। তারপর শুধু গল্পের বই আর কবিতা ছিল। পড়তাম। দেন ঢাকায় আসা। এরপর সব শেষ। এখন আর কিছু অবশিষ্ট নাই।
: হুম।
: আমার দেশের বাইরে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাবার কথা ছিল। কিন্তু লাস্ট মোমেন্টে ফ্যামিলি থেকে ডিশিসন চেঞ্জ হলো। দেন ঢাকায়। চাকরি অনেক কষ্ট।
: কষ্টেই তো কেষ্ট মেলে।
: লোল! কেষ্ট মিলতে এখনো অনেক টাইম লাগবে।
: যদি মেনেই থাকেন টাইম লাগবে, তাহলে তো লাগবেই। লাগার সাথে তো দরকার জড়িত। প্রয়োজন জড়িত। কেষ্ট তো প্রয়োজনের না, প্রাণের। সেইরূপ রাই।
( দুই একটা ইমো)
: ফেইসবুক বড্ড চালাক। ইমো বানাইছে। কথা আটকে গ্যালে বা খুঁজে না পেলে ইমো বা ইস্টিকার দিয়ে চুপ থাকা যায়।
: হা হা হা। ঠিক বলেছেন, আই এডমিট। আপনি কি দেরিতে ঘুমান না আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করছি?
:  একটু দেরিতেই। কিন্তু প্রতিদিন ভাবি, তাড়াতাড়ি ঘুমাবো। এ এক অদ্ভুত বৃত্ত। রুটিন ভাংতে চাই। আবার রুটিন গড়তে চাই।
: ঠিক বলেছেন। আমার প্রতিদিন সব মিলিয়ে আসলে একটা দিন। একই রুটিন। আচ্ছা আপনি গান গাইতে পারেন?
: হঠাৎ। কেন এমন...?
: ফেসবুকে ছবি দেখে মনে হলো, আপনি গান গাইতে পারেন।
: এই দেখা কি আসলে দেখা? না আমি গান গাইতে পারি না। এইটা দুঃখ। কিন্তু প্রাণে গান আছে। এইটা সান্ত্বনা।
: আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। আরো কথা বলতে ইচ্ছে করছে বাট দিনে শেষে আমি একজন ছা পোষা চাকরিজীবী। সকালেই দৌড়াতে হবে।
: তাহলে বাই।
 (একটা গুড নাইট ইমো)

একটা প্রশ্ন আটকে গ্যালো। ভাবছি সেই লাইনটার কথা... এরপর সব শেষ। এখন আর কিছু অবশিষ্ট নাই। কোনো কিছুই কি অবশিষ্ট নাই? যদি না থাকে তাহলে কি আছে? এই যে এত হাসিমুখ সেলফি। এত সুখি সুখি ছবি আর হ্যাপিনেজ ইজ এর স্টেটাস। এগুলোর মধ্যে কোথাও কিছু অবশিষ্ট নেই। এই দেখা আসলে দেখা নয়। কেউ কেউ টের পায়, অবশিষ্ট কিছু নাই। কেউ কেউ সারাজীবনেও পায় না।এ এক অদ্ভুত বৃত্ত। একটা প্রশ্ন করা হলো না। থাক, বৃথা প্রশ্ন।
তার কিছুক্ষণ পর কবীর সুমন এই গানটা গেয়ে উঠলেন ইউটিউবে...
জানি না কে দিয়েছিল পলাশকে তার ডাকনাম
জানি না কতটা ঘন হলে মেঘ হবে ঘনশ্যাম
জানি না কতটা কথা বলা হলে হবে কথকতা
জানি না কিভাবে স্রোত ভেঙে দেয় নদীর জড়তা
জানি না ফুরোবে কবে বৃথা প্রশ্নের হয়রানি
উত্তর আসবে না, তুমি আসবেই আমি জানি।