ঋত্বিক ঘটককে দালাল বললেন সৌমিত্র, কলকাতায় বিক্ষোভ
রিফাত বিন সালামপ্রকাশিত : মে ১৪, ২০১৮
চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে যে কেউ নিজের ব্যক্তিগত মতামত রাখতেই পারে। কিন্তু অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যেটা করেছেন সেটা নোংরামি।
ঋত্বিক ঘটককে ‘দালাল’ বলার মতো যোগ্যতা সৌমিত্রের আসলে হয়নি। ঋত্বিক নকশালপন্থী ছিলেন। অন্তত সমর্থন করতেন, এটা নিশ্চিত। অন্যদিকে সৌমিত্র একজন পাতি-বাম, আধা-সুশীল। সবচেয়ে বড় কথা, ঋত্বিক ঘটককে উনি যেভাবে ‘দালাল’ বলছেন তার কোনো প্রমাণ কিন্তু নেই ইতিহাসে। ঋত্বিক আর যায় হোক, ‘প্রোডিউসারদের দালাল’ ছিলেন না। তার সিনেমাই এর প্রমাণ।
ঘটনাটা হলো, কলকাতার একটি বাংলা দৈনিকের ক্রোড়পত্রে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত আত্মজীবনীতে ঋত্বিককে নিয়ে মুখ খুলেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ঋত্বিকের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়েছে, এমন দাবি সৌমিত্রর। তিনি লিখেছেন, ‘স্ট্রাইকের সময় সংরক্ষণ কমিটি থেকে এতগুলো ডিরেক্টরের একসঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া নিয়েই ওর রাগ ছিল।… ঋত্বিক এমনিতে যতই স্বীকৃত বামপন্থী হোক, সেই সময় প্রোডিউসারদের দালাল হয়ে গিয়েছিল।’
এরপরে সৌমিত্র বলছেন, ‘মদ খেয়ে সত্যজিৎ রায়ের নিন্দা এবং বিশেষ করে তাকে গালাগালি দেয়ায় আমি ঋত্বিককে মেরেছিলাম।’ তিনি এ-ও জানাতে দ্বিধা বোধ করেননি, সেই সময় মৃণাল সেন না ঠেকালে ঋত্বিককে তিনি আরও মারতেন! আর সেই ঘটনা নিয়ে এতদিন পরেও তিনি মোটেই অনুতপ্ত নন!
প্রয়াত পরিচালকের মূল্যায়ন নিয়েও সৌমিত্র প্রশ্ন তুলেছেন। লিখেছেন যে, ওঁর সম্পর্কে সত্যজিতের ‘প্রশংসাটা বাড়াবাড়ি!’ যাদবপুর ফিল্ম স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর, লেখক এবং চলচ্চিত্রবিদ অনিন্দ্য সেনগুপ্ত এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেখুন, আমরা তো কেউ ওঁর মনের খবর জানি না! হতেই পারে বয়স হয়ে যাওয়ায় নানা অসংলগ্ন কথা বলছেন উনি! তবে তাই বা কী করে হয়! এখনও উনি কর্মক্ষম, সমানে কাজ করছেন এবং প্রচুর কাজ করছেন! অতএব ধরে নিতে হয়, উনি সুস্থই আছেন মনের দিক থেকে। তাই প্রাথমিকভাবে কুরুচির কথাটাই মাথায় আসে।’
এদিকে সৌমিত্রের এমন মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে নানা মহলের মানুষ। কলকাতায় এর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বিক্ষোভ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে একাধিক সংগঠন। তবে এত কিছুর পরও বলতে হয়, সৌমিত্রদের কথায় ঋত্বিক ঘটকের মতো মহান মানুষের ইমেজের কিছুই যায় আসে না।
লেখক: কলামিস্ট, কার্টুনিস্ট, কবি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী