একটি অশ্রুত গল্প

সৌরভ আজাদ

প্রকাশিত : অক্টোবর ২০, ২০১৮

২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আমার আড়াই বছর বয়সী ভাগিনা আয়ানকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে জরুরি ভিত্তিতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন করানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। অপারেশনটা ছিলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল। আয়ানকে বাঁচাতে হলে এই অপারেশন এর কোন বিকল্প ছিলো না।


বিভিন্ন সোর্স থেকে অপারেশন এর জন্য টাকা সংগ্রহ করার পরও প্রায় দেড় লক্ষ টাকার ঘাটতি ছিলো যা কোনভাবেই এই অল্প সময়ের মধ্যে জোগাড় করতে পারছিলাম না। তখন আর উপান্তর না দেখে ফেসবুকে আায়ানের অপারেশন এর জন্য সাহায্য চেয়ে একটা পোস্ট দেই রাত আনুমানিক তিন টার দিকে। সময় আর হাতে ছিলো সাত ঘন্টার মতো।
 

কিন্তু সকাল নয়টা পর্যন্ত কারও কোন সাহায্য না পেয়ে হতাশ হয়ে গেলাম। ডাক্তার সাহেবকে অনুরোধ করলাম অপারেশন শুরু করার প্রস্তুতি নিতে এবং সংগৃহিত টাকা পেমেন্ট করে বকেয়া টাকার জন্য তিন ঘন্টা সময় নিলাম। আয়ানকে তখন জরুরি বিভাগ থেকে আনা হবে অপারেশন থিয়েটার এ, তাই অপারেশন থিয়েটার এর সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম।


ঠিক তখনই এক মহান ব্যক্তির আগমন ঘটলো সেখানে। এসেই তিনি আয়ানের অভিভাবকে খুঁজতে লাগলেন। আমরা তখন ওনার সাথে কথা বললাম এবং খুবই অবাক হলাম ওনাকে দেখে। জানতে পারলাম উনি ফেসবুকের পোস্টটা দেখে আয়ানকে দেখতে এসেছেন।
 

উনি আয়ানকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।
জরুরি বিভাগ থেকে আয়ানকে অচেতন এবং অক্সিজেন মাস্ক পরানো অবস্হায় অপারেশন থিয়েটার এর সামনে আনা হয়। ওই ভদ্রলোক আয়ানকে দেখে কাছে গেলেন এবং আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দুই তিন বার বললেন, " আয়ান বাবুটা, সোনামনিটা, আল্লাহ্ তোমাকে ভালো করে দিবেন, সুস্থ করে দিবেন।" এ কথাগুলো বলে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলেন। ওনার কান্না দেখে আমরাও কেঁদে ফেললাম।
 

যাইহোক, কিছুক্ষণ এর মধ্যেই আয়ানকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হলো। প্রায় চার ঘন্টা লাগলো অপারেশন শেষ হতে। আল্লাহ্ অশেষ রহমতে অপারেশন সফল হলো। ওই বিশেষ ব্যক্তিটি তখন জানালেন সম্পূর্ণ বকেয়া টাকা তিনি পরিশোধ করে দিয়েছেন, এবং অনুরোধ করলেন যে উনি জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা যাতে ওনার এই আর্থিক সহযোগিতার কথা কাউকে না বলি।
 

আজ উনি জীবিত নেই....
তাই নিজেকে কোনভাবেই আর আটকাতে পারলাম না, বলে ফেললাম।

উনি আর কেউ নন, প্রিয় আইয়ূব বাচ্চু !