এত রক্ত কেন

মো. খালিদ সাইফুল্লা ফয়সল

প্রকাশিত : আগস্ট ০২, ২০১৮

সমরেশ মজুমদারের লেখা ‘এত রক্ত কেন’ উপন্যাসের শুরু হয় ভারতের আগরতলায়, কিন্তু একপর্যায়ে কাহিনি ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশেও। ২০০১ সালের পটভূমিতে আবর্তিত হয়েছে কাহিনি, যখন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

ত্রিপুরা রাজ্যকে ভারত সরকারের থেকে স্বাধীন করতে কয়েকটি জঙ্গিগোষ্ঠি সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে বাঙালি ও ত্রিপুরাবাসীদের মধ্যে বিভেদ আরও জোরালো করে তোলে। এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের কবলে পড়েই অপহৃত হয় সাংবাদিক বাসুদেবের শ্যালক সৌমিত্র। ‘টাইগার’ নামক যে জঙ্গিগোষ্ঠি সৌমিত্রকে অপহরণ করে তারা ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু টাকা দিলেও যে সৌমিত্র জান নিয়ে ফিরে আসতে পারবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই দুঃসাহসী ও গোঁয়ার সাংবাদিক বাসুদেব একার উদ্যোগে ঝাপিয়ে পড়ে শ্যালককে উদ্ধারের মিশনে।

তদন্তের একপর্যায়ে সে জানতে পারে, টাইগার নামক জঙ্গিগোষ্ঠি অবস্থান করছে বাংলাদেশে। বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে যায় বাসুদেব। সে জানতে পারে, চলমান সন্ত্রাসবাদে টাইগারদের সাহায্য করছে বিডিআর ও বিএসএফের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং টাইগারদের সাথে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের কিছু মানুষও নিজ দেশের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এ কথা বাসুদেব বাংলাদেশের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে জানালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি যারা তারাও লড়াইয়ে নামে তাদের দেশ থেকে দেশদ্রোহী রাজাকার আর ভারতীয় জঙ্গিদের উৎখাত করতে।

এ কাহিনির মাধ্যমে লেখক মূলত বলতে চেয়েছেন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান জাতিগত বিভেদের কথা। এ উপন্যাসের বাড়তি সংযোজন কাহিনির একটি বড় অংশ বাংলাদেশের মাটিতে সংগঠিত হওয়া। নিজ দেশকে বিরুদ্ধ শক্তির হাত থেকে বাঁচাতে মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেটাও লেখক আসলে তুলে ধরেছেন ভারতীয়দের একইভাবে ঐক্যবদ্ধ করতেই।

নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া বলতে গেলে প্রথমে বলবো যে, এ উপন্যাসটি একটি রাজনৈতিক থ্রিলার উপন্যাস। যা সমরেশ মজুমদারকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। ভারতের ভৌগলিকতা বিষয়ে যে রাজনৈতিক সমস্যা, সেটা বেশ সাহসিকতার সাথে লেখক এ উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। উপন্যাসের অনেকটা জায়গা জুড়ে অবস্থান করছে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধারা। যদিও লেখক ত্রিপুরার রাজনৈতিক চিত্রকে তুলে ধরেছেন, তবুও ভারতে যে এই সমস্যাটি ক্রমে বেড়ে চলছে তার বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছেন এবং সমস্যাটি সমাধান করতে গিয়ে যে সেটা আরো গুলিয়ে যাচ্ছে, তারও আভাস দিয়েছেন।

উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠাগুলো থ্রিলারপ্রেমীদের জন্য অসম্ভব ভালো লাগবে। শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানে তারা ডুবে থাকবে। পড়ার মাঝে মনে হবে, বাসুদেবের সাথে পাঠকও চলছে রোমাঞ্চ আর ভীতিকর অবস্থার মধ্য দিয়ে। সমরেশ মজুমদারের ভয়াবহ লোমর্ষক এ উপন্যাসটি যে পড়েনি, সে আনন্দ ও পরিতৃপ্তির অনুভূতি নিয়ে জলদ উপন্যাসটি পড়ে ফেলুন।

একুশে বইমেলা ২০১৮