এতটা ক্রান্তিকাল এর আগে পার করেনি মিডিয়া

এহসান হাবীব

প্রকাশিত : মার্চ ১০, ২০১৮

বাংলাদেশের মিডিয়া বোধহয় এতটা ক্রান্তিকাল এর আগে পার করে নাই। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আজোবধি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে পারেনি। সবচেয়ে বাজে হলো, মিডিয়ায় পরিবেশিত সংবাদে মানুষ আর আস্থা রাখছে না। নিউজ পরিবেশনে প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিভঙ্গি নিউজের ওপর প্রভাব ফেলায় একই ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন মিডিয়ায় ভিন্ন ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করছে। ফলে মানুষের কাছে আমাদের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।

একটা সময় ছিল, যখন দু’তিনটা পত্রিকায় প্রকাশিত একই সংবাদে যদি তথ্যের হেরফের হতো তাহলে মানুষ ইত্তেফাককে আস্থায় নিতো। এখন সে অবস্থাও নাই। মিডিয়ায় জড়িত কর্মীগণ, মালিকপক্ষের একান্ত অনুগত হয়ে মালিকপক্ষের পারপার্স সার্ভ করার মানসিকতা, রাজনৈতিকভাবে কোনও গোষ্ঠির অনুগত হওয়া, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মানসিকতা, ফ্ল্যাট, প্লট ও গাড়ির লোভ- এসব বিষয়-আশয় সংবাদজগতে ব্যপকহারে জেঁকে বসেছে। ফলে সংবাদকর্মীরা সাংবাদিকতা নীতি মেনে চলতে পারছে না।

অবশ্য এখানেও কথা আছে। আমাদের সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা বিষয়ক জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। অধিকাংশ সাংবাদিক বলা যায় এক্ষেত্রে রীতিমতো অপুষ্টিতে ভুগছেন। বাংলাদেশে মাঠপর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের কতো অংশ জার্নালিজম পড়ে এসেছেন? বাংলাদেশে যতো সংবাদকর্মীর প্রয়োজন এবং প্রতিষ্ঠান এদের যে হারে বেতন ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করে তাতে সাংবাদিকতা পড়াশুনা শেষ করা কর্মী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাই এদের কোনও সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান থাকবে না? নিদেনপক্ষে কোনও প্রতিষ্ঠানে সংবাদকর্মী হিসেবে যোগদান করার পর একটা ছোটখাট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা তো করা যায়।

কিন্তু আমাদের দেশে এসব নাই। বিশ্বে কেবল আমরাই এসব পারি। আরো আছে মফস্বল সাংবাদিকতা। এইটা একটা ভয়ানক জিনিস। এই বিষয়ে আমি সুযোগ পেলে আলাদা করে বিস্তারিত বলবো। একেবারে আমার যে নিখাঁদ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তা আসলে বাঁধিয়ে রাখার মতো। মফস্বল সাংবাদিকতা আজ যে জায়গায় পৌঁছেছে তা আসলে স্রেফ চাঁদাবাজির একটা জায়গা। এর পেছনে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও কম দায়ী নয়। নামমাত্র বেতন, কোনও কোনও প্রতিষ্ঠানের বেতন না দেয়া। অশিক্ষিত, অদক্ষ, করাপ্ট কর্মী নিয়োগ, সব মিলিয়ে মফস্বল সাংবাদিকতা আসলে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটা সেক্টর।

মোনাজাত উদ্দিন বেঁচে থাকলে হয়তো আত্মহত্যাই করে বসতো। এসব কারণে আমাদের মিডিয়ার উপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে যাচ্ছে। ফলে মিডিয়ায় প্রচারিত প্রকাশিত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই আজকে মানুষ যার যার জায়গা থেকে তার আয়ত্বে থাকা মাধ্যমসমূহের মধ্য দিয়ে কাউন্টার চেক করছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা কাউন্টার চেকের যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন। এটা একটা দেশের গণমাধ্যমের জন্য ভয়ংকর বার্তা। শুধু গণমাধ্যমের জন্য নয়, এটা দেশের সার্বিক উন্নতির সূচকের জন্য নিম্নগামীও বটে।

লেখক: কবি