এরচে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে!

নাঈমুল হাসান হিমেল

প্রকাশিত : আগস্ট ০৯, ২০১৮

পৃথিবীর কেউ কি কখনও এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছে? কোনো দেশে কি এমন হয়েছে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার ছোট ভাইটি আমার সন্তানটিকে শেখাচ্ছে কীভাবে নিয়ম মানতে হয়; নিয়ম তৈরি করতে হয়?

স্বাধীনতার ৪৭তম বছরে এসে আমরা বুঝতে শিখেছি, শিক্ষা কাকে বলে। আমার স্কুল পড়ুয়া বোনটি ভাইটি আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে পরিবর্তন সম্ভব। বয়ঃসন্ধির দোষ দিয়ে যে বয়সটাকে অবজ্ঞা করা হয়, সেই বয়সটাই আজ সিংহাসনে বিরাজ করছে। রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে হয়তো ছুটি গল্পটা অন্যভাবে লিখতেন। কারণ এই ফটিকরাই আজ একটা গোটা দেশ পাল্টে দিচ্ছে। ইতিহাস নতুনভাবে লিখছে।

বঙ্গবন্ধু যদি বাংলাদেশের জন্ম দিয়ে থাকেন তাহলে আজকের এই ১৮রা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়তে শিক্ষা দিচ্ছে। আপনারা কী দেখেন জানি না, আমি এক একটা আদর্শ নাগরিক দেখছি, এক একটা রূপকথার রাজপুত্র রাজকন্যা দেখছি, যারা মুহূর্তে সব পাল্টে দেয়। কিছু ভুল তাদের ক্ষমা করা যায়। বড়রা যখন পরিবর্তনের নামে রক্তঝড়ে অবাধে ভয়ংকর আকার ধারণ করে, তখন এই শিশুদের একটু খারাপ ভাষা কেন আমরা মেনে নিতে পারি

একা কেউ দেশ পরিবর্তন করতে পারে না। সেই দিন আর নেই। এখন সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমেই দেশ গড়তে হয়। অংশগ্রহণটা হোক সবার, শিশুরা পারলে তারা আসবে না কেন? তবে শিশুদের ক্ষেত্রে একটু সচেতন হতে হবে। কারণ শিশুদের মন কাদামাটির মতো। ইচ্ছা করলে তাকে সব আকৃতি দেয়া সম্ভব। তাই আপনাকে সচেতন হতে হবে, একটু ভুলে বা একটু অসচেতনতায় ভুল কিছু সৃষ্টি হতে পারে। কারিগরকে হতে হবে মহান, নির্ভুল। কারিগর কারা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই।

এ আন্দোলন হয়তো অনেক রক্তের ফল। অনেক আত্মার আর্তনাদ এ আন্দোলন। রাস্তায় প্রাণ দেয়া আত্মাগুলোর বহু প্রতীক্ষার ফল। কিন্তু এই কোমলমতি শিশুরা একসময়ে ক্লান্ত হবে। বর্ষার বৃষ্টি কিংবা ভেপসা গরমে হয়তো কেউ কেউ জ্বর-সর্দিতে পড়বে। কিন্তু যে শিক্ষাটা তারা দিয়ে গেছে তা আমাদের ভেতরে ধারণ করতে হবে। আমি আমার ছোট ভাইকে শিক্ষক মানতে দ্বিধাবোধ করব না। আপনার ছেলে আপনাকে শিক্ষা দিচ্ছে, এর থেকে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে আপনার জন্য!

কিন্তু যদি আপনি আপনার ছেলের এই শিক্ষাটাকে অবজ্ঞা করেন তাহলে তার ফল কী হতে পারে, ভেবে দেখবেন। আপনার সন্তান স্থায়ীভাবে ন্যায়টাকে ভুল বুঝবে। আপনাকে বৃদ্ধাশ্রমের রাস্তা দেখাবে, কিচ্ছু বলতে পারবেন না। একটা দেশ একটা বৃক্ষ। এক এক জেনারেশন তার এর একটা শাখা। শাখায় জন্মায় উপশাখা, ফুল ও ফল। কাণ্ডের কাজ শক্ত করে মাটির সাথে আঁকড়ে থাকা। শাখা, মানে এক একটা জেনারেশন বাড়তে থাকে, পাতার জন্ম দেয়। পাতারা খাদ্য উৎপন্ন করে, যা পুরো গাছের জন্য সহায়ক।

এক সময় এই শাখা থেকে ফুল ফুটে গাছের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আমাদের এই জেনারেশনটা একটু আগেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশের কাণ্ডকে বলছি, দেশের স্বার্থে এই শাখাকে বাড়তে দিন। একদিন এই কাণ্ডটি অজস্র ফুল হয়ে দেশের সৌন্দর্য বর্ধন করবে। গত বেশ কয়েকটি শাখাকে আমরা ধুঁকতে দেখেছি প্রশ্ন ফাঁসের যাতাকলে পড়ে। এই কাণ্ডটিকে বাড়তে দিন। হাত জোড় করে বলছি, যদি ভুল হয়, তাহলে এই শাখাটিই কাণ্ডকে নাড়িয়ে দিতে পারে একদিন।