কবি অমিতাভ পালের টুকরো কথা

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮

ক.
ইতিহাস জ্ঞান না থাকলে পরিবর্তনকে বোঝা যায় না। বর্তমানকে মনে হয় চিরকাল এইরকমই আছে।

খ.
সমালোচনাতো তারই করা যায়, যে প্রতিমুহূর্তে নিজেকে ভাঙতে চাচ্ছে, বদলাতে চাচ্ছে, ভুল করছে, আবার চেষ্টা করছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। সমালোচনা তো সমআলোচনা— এটা কোনো ঋণাত্মক শব্দ নয়। এই আলোচনার ভিতর দিয়ে আলোচ্যের স্থানাঙ্ক নির্ধারণ করাটাই হয় সমালোচকের আসল লক্ষ্য।
তুমি আমার ষমালোচনা বা শমালোচনা কোরো না প্লিজ...

গ.
আমরা ভাবি, সভ্যতা বোধহয় আলাদিনের প্রদীপের মতো একটা কিছু। যা চাইবো, তাই দেবে দু`হাত ভরে। কিন্তু সভ্যতা যে কোনো গুপ্তধনের গুহায় পাওয়া প্রদীপ না, এটাকে পরিশ্রমে, সৃজনে, নির্মাণের কুশলতায় গড়ে তুলতে হয়— এ কথাটা বোধহয় আমরা ভুলে যাই। যত দোষ, সব গিয়ে পড়ে নন্দ ঘোষের ঘাড়ে।

ঘ.
আমার বাবা আড্ডা মেরে রাত্রি একটা দেড়টায় বাসায় ফিরতেন। আর সিগারেট খেতেন খুব। নীল প্যাকেটের ফিলটার ছাড়া স্টার। সনেট লিখতেন তো, মধুসূদনের কিঞ্চিত প্রভাব হয়তো তার ওপর পড়েছিল, তাই ভদ্রলোক শিক্ষক হয়েও এটুকু বিপর্যয় ঘটিয়েছিলেন নিজের জীবনে।
আমি ছিলাম বোদলেয়ারের চ্যালা। পরে বিনয় মজুমদার আমাকে আরেকটু পালিশ করেন। আর তাতে ভাঙচুরটাই আমার জীবনে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। নেশা, আড্ডা সবকিছুই ছিল আমার দিনযাপনের বিষয়। এখন আমার সন্তানের বয়সী কবিরাও এসে গেছেন ধরাধামে। তাদের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চয়ই আরো ভেঙেচুরে গেছে। অস্বাভাবিক বলে আর কিছুই হয়তো নেই এদের কাছে।

ঙ.
বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজতত্ত্ব, ধর্ম, জাতীয়তাবাদ, প্রেম, কাম ইত্যাদি সব বোঝা যায় যে রচনাতে, সেটাই কবিতা...

চ.
একসময় আমরা ডায়েরি লিখতাম নিজেদের কথাগুলি বলবার জন্য। এখন ফেইসবুকে স্ট্যাটাস আকারে সেইসব কথা লিখি। ফেইসবুক আমাদের ডিজিটাল ডায়েরি।

ছ.
সব দেশপ্রেমিকের মেক-আপ এক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক সিনেমা দেখলে এই সত্য বোঝা যায়।

জ.
আমাকেও এক ধরণের দালাল বলা যায়। বাড়িওয়ালা ও দোকানদারদের ব্যস্ততার কারণে ওদের হয়ে অফিস থেকে ওদের পাওনা টাকা আদায় করে আনি মাস গেলে। আর তার বিনিময়ে সার্ভিস চার্জ হিসাবে ওরা আমাকে থাকতে, খেতে ও পরতে দেয়। ধন্য এই দালাল জীবন...

ঝ.
রবীন্দ্রনাথ এবং তিরিশের কবিরা ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডকে ভয় পাননি বরং তার সমকক্ষ করে তুলতে চেয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যকে। আমরা ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডকে ভয় পাই, তাই তিরিশকে গালাগালি করি অক্ষমের মতো। আর নিজেরা রচনা করি অপরিণত সাহিত্য। সাহস থাকলে থেমে না থেকে আমরাও এগিয়ে যেতাম বিশ্বের মুখামুখি দাঁড়াতে।

ঞ.
ব্যাপারটাতো এই যে, প্রতিটা সময়খণ্ড অতীত ঐতিহ্যের রেশ এবং সেই সময়খণ্ডে জন্ম নেয়া নতুনের মিশ্রণে তৈরি। ফলে সেই সময়খণ্ডের কবিতাতেও এই লক্ষণ থাকবে। অর্থাৎ তাতে যেমন পাওয়া যাবে চিরপরিচিত আবহমানের রেশ, তেমনি অজানা অচেনা অভিজ্ঞতাও ধাক্কা দিয়ে নাড়িয়ে দিয়ে যাবে আমাদের। `মাংসরন্ধনকালীন ঘ্রাণ` শব্দটা এর একটা অ্যাকিউরেট উদাহরণ।