কাঙাল বাংলাদেশ আমার

মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৭, ২০১৮

বাইরে বরফ পড়ছে। মাইনাস টেম্পারেচার। জানালার কাছে বসে কাঙালিনী সুফিয়ার গান শুনছিলাম। আমার দোষে আমি দোষি, আমি দোষ দেব কারে...
শুনতে শুনতে দেশের কথা মনে পড়ে গেল। বাঙালির একটা দোষ আছে। দশটা বাঙালি দেশের বাইরে এক জায়গায় হলেও ওই পলিটিক্সের ব্যাপারটা আলোচনায় ঠিকই উঠে আসে। সবারই কিছু একটা বলার আছে। না থাকারই বা কী আছে? দেশে কি ইস্যুর অভাব?
আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের গভর্ণর ছিলেন মহামানব। একদিকে উনি বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান, হাত পেতে পয়সা নিয়ে উনি কীভাবে বড় হয়েছেন। অন্যদিকে দেশের টাকা চুরি হওয়ার কথা বেমালুম চেপে গিয়ে উনি ইন্ডিয়া গেলেন অ্যাওয়ার্ড নিতে। বিদেশি গণমাধ্যমের কৃপায় যখন আমরা সব জানতে পারলাম, জাতির কাছে কোনও ব্যাখ্যা না দিয়ে, আদালতের কাঠগড়ায় না দাঁড়িয়ে উনি চোরের মতো প্রস্থান করলেন। কর্মময় ব্যক্তিত্ব বটে!
আগের জন মহামানব হলে বর্তমান জন অতিমানব। উনার যোগ্যতা ও দক্ষতা এতই বেশি যে, উনি ঢাকা শহরের জ্যাম নিরসন নিয়ে বক্তব্য দিয়ে বেড়ান। স্বাধীন দেশের রাজধানীতে ঠেলায় পড়ে আসা মানুষগুলোর ওপর উনি ট্যাক্স বসানোর পরামর্শ দেন। বাংলাদেশে পুলিশ, ডাক্তার আর উকিল নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। ব্যাংকাররা বড় বড় ক্রাইম করে পার পেয়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ফারমার্স ব্যাংক, কে নাই? বছর বছর জনগণের টাকা সরকারি ব্যাংকগুলোতে ঢুকিয়ে দিয়ে পরে পিছনের দরজা দিয়ে সেই টাকা বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। এটা দেখার কেউ নাই। কারও মুখে কোনও আওয়াজ নাই।
অথচ এ টাকা দিয়ে দেশের উন্নয়ন করা যেত। যশোরের মানুষ নিজ উদ্যোগে নদীর ওপর ভাসমান ব্রিজ বানিয়ে শত বছরের সমস্যার সমাধান করে নিল। ডিসি সাহেব উদ্বোধন করে এলেন। জাতির জন্য কত বড় লজ্জা। এই যুগেও মানুষের নদী পার হবার জন্য পকেটের পয়সা দিয়ে ব্রিজ বানাতে হয়। আর ওদিকে হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়। কাঙালিনী সুফিয়ার কাঙাল বাংলাদেশ আমার।
এক ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে আরেক ব্যাংকের এটিএমএ ঢুকলেই চার্জ দেয়া লাগে। এখন পর্যন্ত অনলাইনে এক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে আরেক ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে পারে না গ্রাহক। অনলাইনে সব বিল পে করা, প্রয়োজনীয় সব লেনদেন ইত্যাদি এখনও সহজ হলো না। সব কাজে অযথা চার্জ কেটে রাখে সব ব্যাংক। দেখার কেউ নাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব দেখার কথা ছিল। এরা বরং সেই চার্জ থেকে নিজেদের বখরা বুঝে নিয়ে বছর বছর কর্মকর্তাদের বোনাস দিচ্ছে। ইচ্ছা করে অনলাইন সুবিধা বন্ধ করে রাখা হয়েছে, যেন মানুষ বিকাশের মতো মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে প্রতি হাজারে বিশ টাকা চার্জ দিতে বাধ্য হয়। জনগণের টাকার কি অবাধ লুটপাট। ছিঃ!
মানুষের নিজের কামানো রোজগারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। বৈধ উপায়ে দেশের বাইরে নিজের টাকা কারও নিজের নিয়ে যাওয়ার সাধ্য নাই। এরই নাম স্বাধীনতা? বাজার অর্থনীতির দুনিয়ায় দেশের বাজার অস্থিতিশীল। শেয়ার মার্কেটে মানুষের ভরসা নাই। বিশ্বে মাইক্রোসফট ও গুগলসহ বড় পেট্রোকেমিক্যাল ও স্টিল ইন্ডাস্ট্রিতে বাঙালির কোনও শেয়ার নাই। এর কারণ দেশের টাকা বাইরে বের করার বৈধ উপায় রাখা হয়নি। দেশের টাকা দেশের মানুষ যদি বিদেশে ইনভেস্ট করে লাভ করে, সে টাকা তো ফিরে দেশেই আসবে। উন্নত দেশগুলো ইকোনমি ওপেন করে দিয়ে রেখেছে। আর আমরা জনগণকে বেঁধে রেখেছি। একদিকে দেশের সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য টাকা বৈধ পথে বাইরে নিতে গেলেও হয়রানির শিকার হচ্ছে। আর আরেকদিকে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা হুন্ডি হয়ে সুইস ব্যাংকে পৌঁছে যাচ্ছে। বাহারে বাংলাদেশ ব্যাংক!
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর এখন ঢাকার যানজটের সমাধান দিচ্ছে। আর দু’দিন পরে সকাল কয়টায় টয়লেটে যাবেন, সে সমাধানও তারা দেব। ধৈর্য ধরেন। সে দিন আর বেশি দূরে নাই।