কামরুজ্জামান কামুর ৫ কবিতা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৪, ২০১৯

আমাকে এবার পিছমোড়া করো

আমাকে এবার পিছমোড়া করো
চোখ বেঁধে ফেল প্রভু
আমি কোনোখানে কোনো মানুষের
হৃদয় দেখিনি কভু
আমি শুনি নাই কম্পিত রাতে
কোনো প্রহরীর হাঁক
আজি বসন্তে কালো কোকিলের
তীক্ষ্ণ মধুর ডাক
অন্ধকারের বুক থেকে এনে
চয়িত শব্দমালা
বসিয়েছি শুধু কবিতার দেহে
উদ্গীরণের জ্বালা
আমাকে এবার গুলি করো প্রভু
পাহাড়ে ও সমতলে
আমার শরীর লুটায়ে পড়ুক
কালো যমুনার জলে
আমিই সালাম আমি বরকত
আমি রফিকের ভাই
লেখামাত্রই আমার কবিতা
লাল হয়ে গেল তাই
এই মাঠঘাট এই বন্দর
এই মানুষের সারি
হে অবদমিত পৃথিবীর বুকে
উন্মুল নরনারী
এই বুকফাটা কান্নার রোল
আকাশপাতাল ধ্বনি
নিজ হাতে আমি খুবলে তুলছি
নিজের চোখের মনি
শত গোয়েন্দা দৃষ্টির ফাঁদ
সহস্র বন্দুক
নস্যাৎ করে সম্মুখে এসে
পেতে দিয়েছি এ বুক
আমিই সালাম আমি বরকত
আমি রফিকের ভাই
লেখামাত্রই আমার কবিতা
লাল হয়ে গেল তাই
পৃথিবীর বুকে আমি সেই কবি
আমি সেই চণ্ডাল
আমি সেই লোক কালো ও বধির
আমার রক্ত লাল
আমি সন্ত্রাসী আমি ধর্ষক
আমি ধর্ষিত নারী
আমি তোরই ছেলে বুকে তুলে নে মা
ফিরেছি নিজের বাড়ি
হৃৎপিণ্ডের ঢিপঢিপ ধ্বনি
চঞ্চল রক্তের
ফিনকির মতো ছিটকে বেরিয়ে
দেহে ফিরে আসি ফের
করি লেফটরাইট গুম করি আর
গুম হয়ে যাই নিজে
শুষ্ক রজনী কাষ্ঠ দিবস
ঘেমে উঠে যায় ভিজে
নিজের রক্ত নিজে পান করি
নিজ দংশনে নীল
নেশায় মত্ত মদের পাত্র
হয়েছে আমার দিল
আমাকে তোমার মনোরঞ্জনে
রঞ্জিত রাত্রির
কিনারায় নিয়ে ধর্ষণ করো
ধ্বস্ত করো হে নীড়
তনুর মায়ের শূন্য বুকের
মহাশূন্যতা হয়ে
বোবা পৃথিবীর বায়ুসম আমি
চিরকাল যাব বয়ে
কালোত্তীর্ণ কালের কান্না
হে মহাকালের মাটি
আমি রবীন্দ্র আমি নজরুল
ধরণীর বুকে হাঁটি
কেঁপে কেঁপে উঠি শিহরিত হই
পায়ের তলার ঘাসে
মরা কোষগুলি জৈবপ্রেষণে
চিৎকার করে হাসে
সংক্ষুব্ধের সংহার সম
শঙ্কিত এই রাতে
জন্ম দিয়েছি কোরবানি তোকে
করব রে নিজ হাতে
আজানের ধ্বনি ভেসে এলো ওই
পাখিদের কলরবে
একটিমাত্র গুলির আঘাতে
আমার মৃত্যু হবে
একটিমাত্র চিৎকার আজ
করব ভূমণ্ডলে
আমি বরকত সালাম রফিক
মরব মায়ের কোলে
আমাকে এবার পিছমোড়া করো
চোখ বেঁধে ফেল প্রভু
আমি কোনোখানে কোনো মানুষের
হৃদয় দেখিনি কভু
শুধু যুদ্ধের গোলা-বারুদের
শুধু হিংসার বাণী
প্রলয়ঙ্করী পৃথিবীতে কাঁপে
বেদনা-লতিকাখানি
শেষ নিশ্বাস এত ভারি কেন
অসহ জগদ্দল
চারিদিকে মম ঘোরাফেরা করে
নায়কের মতো খল
চারদিক কেন চেপে আসে আরও
চারিদিকে বন্দুক
গুলির শব্দে কেঁপে কেঁপে ওঠে
বাংলাদেশের বুক

তোমার আমার প্রেম

ভাবিবার অবকাশে
ভাবিয়া ভাবিয়া হাসে
বড় মহাজন

এই বৃষ্টি ক্ষণস্থায়ী
তাতে যদি ভিজে যাই
কী করব তখন?

ভেবেচিন্তে হাঁটুপানি
পার হয়ে পা দুখানি
বিছায়ে রাখিল

মহাজন মহাপদ
বারে বসে খাচ্ছে মদ
হাসিয়া ডাকিল

তথা যাইতে হবে। আজ
পড়ে আছে মেলা কাজ
করা লাগবে ভাই

তোমার আমার প্রেম
কী বলব হে শেম শেম
কোনো মূল্য নাই

দুলছে

যেন কেউ নয়
তবু কারও মতো করে
চেয়ে রয়

এই সন্ধ্যা
এই রামধন
এই পুকুরের পানি দুলছে

বুকে ভাঙা চাঁদ
যেন কারও মতো করে
দুলছে

ভেবে বসে আছো

ভেবে বসে আছো
সে যে ঘাস খায়
সে যে খায় না
যদি জানতে

বসে মহাতরণীর প্রান্তে
তুমি অভিভূত হয়ে

কানতে

সময় নষ্ট

সময় নষ্ট কোরো না তো আমি
অফিসে যাব রে বাবা

কত কত আমি নর আর নারী
কত সিরিয়াস কত কারবারি
রাষ্ট্রযন্ত্র তন্ত্রমন্ত্র
জাহাজ বেচিয়া আদার ব্যাপারি
আদা হতে জল আলেদা করিয়া
তিলটিকে আমি তালগাছ ভ্রমে
আগায় চড়িয়া বসেছি

কবিতা কবিতা কোরো না তো আমি
ঘড়ি পড়ে গেল খুলিয়া
পড়িমরি যেন কারে ধরি কেন
ওয়ানা বি ওয়ানা বি হেন

আমেরিকা যাব সুইট যার ল্যান্ড
যাব কঙ্গো যাব সিরিয়ায়
ব্রিটেন-চায়না-আটোয়ারি-বোদা
দৌড়াতে হবে সদাসর্বদা

অফিসে যাব রে বাবা