গা বাচ্চু, গা

রাজীব জবরজং

প্রকাশিত : অক্টোবর ১৯, ২০১৮

হঠাৎই অমর্ত্যের প্রতিটি ব্লকে একই সাথে বেজে উঠলো ঘোষণা:
সম্মানিত অমর্ত্যবাসী,
শুভ সকাল। আপনাদের সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই অমর্ত্যে এসে পৌঁছাবেন এমন একজন, যার সম্মানে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অমর্ত্যের প্রথম এবং একমাত্র ভাষা হিসেবে বাংলা বলবৎ থাকবে। যে সকল অমর্ত্যবাসী এখনো বাংলা ভাষা শিখে উঠতে সক্ষম হতে পারেনি, তাদেরকে অতিসত্ত্বর ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়ার নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। এবং অমর্ত্যের নতুন বাসিন্দাকে বরণ করে নিতে স্ব-স্ব দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সকল অমর্তবাসীকে সচেষ্ট থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

একইসঙ্গে সকল অমর্ত্যবাসীর উদ্দেশে আরো একটি ঘোষণা, এই মুহূর্ত থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অমর্ত্যে ২৪ ঘণ্টাই তারা ভরা রাত জারি থাকবে। সকলকে ধন্যবাদ। শুভ জ্যোছনা রাত।

ঘোষণা শেষ হতে না হতে হইচই, কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। কেউ বলছে, হাউ ক্যান আই লার্ন বেঙ্গলি বিটুইন দিস টাইম। কেউ আবার বলছে, ইয়ে ক্যায়সে সাম্ভাব হ্যায়? আরেকজন দেখি মহাখুশিতে নিজে নিজেই বলছে, ফি ইন্তেজার হাদ্দিহ হিল, আয়্যাম লিফাত্রাতিন তাওয়িলাতান। দিলদার তখন মান্নার দিকে তাকিয়ে বলে, জোব্বাঅলা কয় কি? মান্না তখন ভাবছে, ওর কথা শোনার মতো সময় আমার নেই। আমি ‘আম্মাজান’ গানের সাথে লিপ মেলানোর প্র্যাক্টিস করতে যাই।

অমর্ত্যে খুব সুন্দর একটা জায়গা আছে। একপাশে পাহাড়ি ঝর্ণা, আরেক পাশে সমুদ্রের ঢেউ, অন্যপাশে বসার জন্য ছড়ানো আছে কতগুলো আসন। অমর্ত্যে একমাত্র এই জায়গাটাতেই সিগারেট খাওয়া যায়। ওখানে নক্ষত্রের মতো করে বসে আছে একেকজন। কেউ সিগারেট টানতে টানতে ভাবছে, কেউ স্টাফ নোটেশনে কাগজ ভরাচ্ছে, কেউ গুনগুন করছে। এর মধ্যে কেউ একজন বললো, হেই জিমি, ডু ইয়্যু নো হু ইজ কামিং?
জিমি বললো, আই হার্ড অ্যাবাউট হিম, বাট আই ডিডেন্ট হার্ড হিজ মিউজিক। ওয়েট।

জিমি কাকে যেন দেখেই বললো, হেই হ্যাপি, হোয়াটস আপ ম্যান? হোয়্যার ইজ ইয়্যোর ব্রাদার? হ্যাপি বললো, এক্সিলেন্ট, আই অ্যাম ওয়েটিম ফর দিস ডে ফর লং টাইম। লাকি ইজ ট্রাইং ট্যু কম্পোজ অ্যা নিউ ট্র্যাক। সো হ্যোয়াট অব্যাউট ইয়্যু জিমি? জিমি মুচকি হেসে বললো, নট ব্যাড, বাট অ্যাইম লিটল বিট নার্ভাস।

হ্যাপিও হাসতে হাসতে বললো, ইয়্যু ব্লাডি জিমি, ইয়্যু অলওয়েজ ট্রাই টু মেইক সার্কাজম উইদ নিউ পিপল। ইটস সো ব্যাড, ম্যান। ইয়্যু কান্ট ইমাজিন, হাউ গুড হি ইজ।
জিমি বললো, নো ওরিজ ম্যান, আই অ্যাম ওয়েটিং ফর হিজ এক্সিলেন্স। এনিওয়ে, আই অ্যাম গোয়িং টু স্টুডিও ফর জ্যামিং উউদ শংকর। ইফ ইয়্যু ওয়ানা জয়েন উইদ আস, ইয়্যু ক্যান গো উইদ মি।
হ্যাপি বললো, লাকিকে নিয়ে আসছি আমি, তুমি? অ্যান্ড নো মোর আদার্স ল্যাংগুয়েজ একসেপ্ট বাংলা, ওকে?
জিমি বললো, জ্বী জনাব, বাংলা ছাড়া সবই বাদ।

এর মধ্যেই নতুন ঘোষণায় জানা গেল, নতুন অমর্ত্যেবাসী অমর্ত্যে পৌছে গেছেন। ঘোষণায় বলা হচ্ছে, অতিসত্ত্বর সকলকে অভ্যর্থনা মাঠে উপস্থিত হতে। জিমি আর হ্যাপি পথ বদলে অভ্যর্থনা মাঠের দিকে রওয়ানা হলো। এদিকে লাকি, ইশতিয়াক, আজম, নিলয়, জাফর, কোহেন ও চেস্টারসহ সবাই যে যার কাজ ফেলে রওয়ান হলো একসাথেই। দেখতে দেখতে অভ্যর্থনা মাঠ ভরে গেল। নিজেই নিজের পরিচয় দিলেন, ভালোবাসার শপথ নিলেন সবাই একসাথে। অমর্ত্যের প্রশংসা করে তিনি বললেন, চাটগাঁর তুন মগবাজার, মগবাজার তুন ধানমন্ডি, ধানমন্ডির তুন অ্যাখানে আসতে আসতে ভাবছিলাম যে, এই যে যেতে যেতে কত ভালোবাসা পাচ্ছি, ওখানে গিয়ে মান হলো গিয়ে এখানে অ্যাসে যদি ন ফাই? কিন্তু অ্যাখানে পাঁ রেখেই যে ভালোবাসার শপত আমি নিয়েছি আপনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে তা দ্যাখে আমি মুগ্ধ যে। আমার চাঁটগার টোন শুনে বিরক্ত হবেন না যে, আমার আম্মা আছে তো এখানে তাই চাঁটগার টোনে বলছি। যেহেতু আমার আম্মা আছে এখাসে সেহেতু এটাও আমার মায়ের বাড়ি।

অভ্যর্থনা শেষে জানা গেল, তার থাকার জায়গা হলো হ্যাপি, লাকিসহ সমগোত্রীয়দের ব্লকে। লাকিকে তিনি বলছেন, কতদিন হলো আপনার সাথে জ্যাম করি না লাকি ভাই। চলেন জ্যামিং শুরু করি। লাকি বললেন, ঠিক আছে তাহলে আরো কয়েকজনকে ডাকি। সবাই মিলে রাতভর জ্যামিং চলবে, কি বলো?

একে একে জিমি হ্যানড্রিক্স, এরিক ক্ল্যাপটন, রবার্ট জনসন ও চাক বেরিসহ অমর্ত্যের সকল প্রতিভাবান মিউজিশিয়ান হাজির হলেন লাকির প্র্যাক্টিস প্যাডে। এসেই সবাই বাজাতে শুরু করলেন। সবাই শুরুতে নিজেদের একটা করে ট্র্যাক বাজিয়ে নিজেদের পরিচিয় দিয়েছেন। নতুন অমর্ত্যবাসী বাজালেন সান্টানার মুন ফ্লাওয়ার। আজম খান কানে কানে বললেন, সান্টানা বাজাইতেছিস ক্যান তুই? তর নিজেরটা বাজা ব্যাটা। তখন আজম খানকে তিনি বললেন, আজম ভাই সান্টানারে আমি ভালোবাসি। সে কোনোদিন এখানে এলে তার সাথে মুন ফ্লাওয়ার বাজাবো। তাই প্র্যাক্টিসটা করে রাখতেছি। এই বলেই তিনি একে একে বাজাতে লাগলেন ঘুম ভাঙা শহরে, চলো বদলে যাই, রুপারি গীটার এবং সব শেষে বাংলাদেশ। তার সাথে ইলেক্ট্রিক গিটারে আগুন ঝারচ্ছেন হ্যানড্রিক্স, একোয়েস্টিকে রিদম দিচ্ছেন এরিক ক্ল্যাপটন আর চাক বেরি, লাকি আখন্দ কীবোর্ড বাজাচ্ছেন। বাকি সবাই গলা আর যন্ত্র মেলাচ্ছেন। আর আজম খান চিৎকার করে বলছেন, গা বাচ্চু, গা।

অমর্ত্যে এর ভিন্ন কিছু তো হবার কথা নয় ভালোবাসার বাচ্চু ভাইয়েরর সাথে।