গুলজারের কবিতা

অনুবাদ

প্রকাশিত : মার্চ ০৯, ২০১৮

সম্পূরণ সিং কালরা। পৃথিবী তাকে গুলজার নামে চেনে। শিখ-পরিবারে জন্মেছেন ১৯৩৬, মতান্তরে ১৯৩৪ সালের ১৮ আগস্ট দিনায় (ব্রিটিশ ভারতের ঝিলম জেলা, বর্তমানে যেটা পাকিস্তানে অবস্থিত)। দেশত্যাগের পর চলে আসতে হয় দিল্লির রওশন আরা বাগে। সেখানে ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করেন তিনি। বম্বের (মুম্বাই) খালসা কলেজ এবং ন্যাশনাল কলেজ কম্বেতে ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালীন বিদায় জানান প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়াকে। সাহিত্য, সংগীত ও চিত্রকলার সঙ্গ এবং চমৎকারিত্ব কবিতা-পাগল মাতৃহীন একাকী যুবককে গড়ে তুলছিল কবি করে, শিল্পী করে। পরবর্তী সময়ে চলচিত্রের বর্ণাঢ্য জগতে তার কৃতীয় অবদানের জন্যে সকলেই তাকে চেনে, কখনো গীতিকার, কখনো চিত্রনাট্য রচয়িতা, কখনো চলচ্চিত্র-নির্মাতা হিসেবে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি কবি গুলজার। তরুণ কবি সঙ্গীতা দাশ তার দুটো কবিতা মূল হিন্দি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন

মাটি জাদু জানে

কিছু একটা আছে আমার এই বাগানের মাটিতে
এ জমি কি জাদুকরি?
মাটি জাদু জানে!

যদি পেয়ারার বীজ পুঁতি, এ পেয়ারা দেয়
যদি আধখাওয়া জাম ফেলি মাটিতে তো জামও দেয়
করলা দিলে করলা... লেবু থেকে লেবু!

ফুল চাই যদি, গোলাপি ফুল দেয়
যে রঙ দিই আমি, সেই রঙ ফিরিয়ে দেয়।
মাটির গহীন অন্তরে লুকিয়ে রেখেছে সব রঙ?
অনেক খুঁড়েছি কিন্তু বেরোয় না কিছু...!
মাটি জাদু জানে!

মাটি জাদু জানে
খেল দেখায় অনেক
লম্বা নারকেল গাছ তুলে ধরে এক আঙুলে
পড়ে যায় না!
খুব ঝাঁকায়, হাওয়ায় এলোমেলো দোলে
মাটি কিন্তু স্থির রাখে বৃক্ষ।

শরবত, দুধ, জল আমার হাত থেকে
কিছু পড়লেই ঢকঢক গিলে নেয়
কত জল খায় মাটি!
যতই দাও গিলে নেয়
জগে করে দাও অথবা বালতিতে
অথবা সারাদিন ধরে কল খুলে রাখো
অদ্ভুত পেটুক, পেট ভরে না কিছুতে
শুনেছি, নিজের ভিতরে লুকিয়ে রাখে নদী!

মাটি জাদু জানে!

মাটির নিচে কি চিনির গুদাম আছে?
অম্লের পাথর আছে কোনও?
ফলের ভিতরে এমন মিঠে ভরে দেয় কিভাবে?
কোথা থেকে আনে সব?

ডালিম, বরই আর আমের ভিতরে, আপেলের ভিতরে
মিষ্টি, সব মিষ্টি আবার আলাদা আলাদা
পাতা বিস্বাদ অথচ ফল মিঠে
মুসম্বি মিষ্টি আর লেবু টক!
নিশ্চিত জাদু জানে মাটি!

ওদিকে দেখ, বাঁশ স্বাদহীন, নীরস
আর আখের ভিতরে এত রস?

মাটির হাতে কি চুম্বক আছে?
যা উপর থেকে পড়ে সব মাটির কাছে যায়
পাখি হোক বা উল্কা!
মাটি জাদু জানে!

কুয়ো বোজানো হচ্ছিল

কুয়ো বোজানো হচ্ছিল
দম আটকে আসছিল কুঁয়োর
কয়েক মণ মাটি ফেলা সারা
বহু তক্তা কাটা হয়েছে

দু’ধার থেকে লোহার রড সাজিয়ে
প্রবীণ মিস্ত্রী ডেকচিতে সিমেন্ট গুলে ছড়িয়ে দিচ্ছে চারধারে
কুয়ো বোজানো হচ্ছিল।

ডানা ঝাপটিয়ে কুয়োর জলে স্নান সারতো
চিন্তিত সে আজ...
পিপুল শাখায় উড়ে বেড়িয়েছে সারা দুপুর
বড় অস্থির হয়ে আছে ঘুঘু।
সন্ধিৎসু পাখি বুঝতে পারে না
একটা জ্যান্ত কুঁয়োকে মানুষ কেন কবর দিচ্ছে!