গ্যালারি বন্দি নারীবাদীরা

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : মার্চ ০৮, ২০১৮

ঢাকা শহরের নারীবাদীদের (সবাই না) অনেকেই এতটায় বিভ্রান্ত এবং এতটায় পুরুষতান্ত্রিক যে, রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। তারা এতই পুরুষতান্ত্রিক যে, তারা ধরেই নিয়েছেন রাজনীতি শুধু পুরুষদের বিষয়। তাই রাজনীতি নিয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নাই।

বইপত্র বলছে, নারীবাদ (ইংরেজি শব্দ Feminism) বিংশ শতাব্দীতে উদ্ভূত একটি দর্শন, যা সভ্যতায় মানুষ হিসেবে পুরুষের তুলনায় সর্বার্থে নারীর সমতা ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। নারীবাদ সমাজে নারীর সমতা অর্জন, বিশেষ করে পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের যৌক্তিকতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। নারীবাদ দাবি করে, পুরুষের তুলনায় নারী একদিকে সক্ষম অন্যদিকে সামাজিক অবদানের দিক দিয়ে পুরুষ থেকে কম নয়।

নারীবাদী কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য সমাজে বিদ্যমান লৈঙ্গিক বৈষম্যের অবসান। নারীবাদী কর্মকাণ্ড সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রদত্ত বিভিন্ন মতবাদ ও আন্দোলনকে নির্দেশ করে। নির্বাচনী ভোটাধিকার, উত্তরাধিকারী সম্পত্তির অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বৈবাহিক জীবনে সমানাধিকার, রাজনীতি ও ব্যবসায় সমান সুযোগ, সমান কাজে সমান বেতন, মাতৃত্ব-অবসর ইত্যাদির নারীবাদী প্রবক্তাদের মৌলিক দাবি। ঐতিহাসিকভাবে নারীরা বঞ্চনার শিকার, অতএব নারীবাদীরা নারীর সার্বিক ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

কিন্তু বাংলাদেশে মৌলবাদ থেকে সন্ত্রাসবাদ কিংবা অর্থনীতি, নারীবাদীরা সব কিছুকেই রাজনৈতিক ঘটনার বাইরে রাখেন। তাদের এই অবুঝ চিন্তা তাদের গ্যালারি আর সেমিনারে আটকে রেখেছে। অথচ এ অঞ্চলে নারীদের রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশ ঘটানো যে কত দরকার, সেটা বোঝার বোধ তাদের নাই, তাদের অংশগ্রহণও নাই সে আন্দোলনে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বা জামায়াত বা অন্যদলগুলোকে দেয়া ভোটের সাথে ধর্ষণের যে হার জড়িত সেটা তারা বোঝেন না। তারা বস্তির নারীদেরও চেনেন না, চেনেন গ্যালারি কেন্দ্রিক অ্যাক্টিভিস্টদের। এই নারীবাদীদের একাংশ আবার পুরুষ হতে চান। পুরুষ কি পারে আর নারীরা কি পারে, এই নিয়েই তাদের জগৎ চিন্তা। কিন্তু নারী হিসেবে নিজেদের জন্য কেমন রাষ্ট্র চান, সেটা নাই তাদের চিন্তায়।

সুন্দরবনের জন্য কিংবা গ্যাসের দাম অথবা রাষ্ট্রীয় বাজেট এমনকি ভারতকে ফ্রি ট্রানজিট দেয়ার বিরোধিতায় রাস্তায় চিৎকার করাও যে নারীবাদের অংশ, সেটা তাদের বোধে নাই। ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, নির্যাতন খুব স্বাভাবিক এখানে। বিচার নাই, সরকারের লোক হলে এক বিচার, সরকারের বাইরের লোক হলে আরেক বিচার। এটাও তারা বোঝেন না। পাঁচ বছরের শিশু থেকে আদিবাসী গারো নারী কিংবা পুরুষ কেউ বাদ নাই নির্যাতনের হাত থেকে। পাহাড়ে নারীদের উপর সেনাদের চলমান নির্যাতন নিয়েও নারীবাদীদের মুখ প্রায় বন্ধ। তারা শফি সাহেব বা হেফাজতে ইসলাম নারীদের ঘরে বন্দি করতে চায়, কিন্তু হেফাজতের এমন দাবির পিছে যে রাজনীতির ফায়দা আছে সেটা নারীবাদীরা বোঝেন না। তবে আশার বিষয় হলো, এই গ্যালারি কেন্দ্রিক নারীবাদীদের বাইরেও নারীরা কাজ করছেন। গার্মেন্টস, মাঠে, অফিসে, এমনকি ব্যবসায় পুরুষের পাশে শক্ত হাতে কাজ করছেন, আবার একই সাথে পুরুষ বিরোধ না বরং নিজের অধিকারের জন্যই পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন, তারাই নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তারাই নারীবাদী। তাদের ৩৬৫ দিনই নারী দিবস।

 

লেখক: কলামিস্ট, কার্টুনিস্ট ও বিশ্বভারতীর সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী