চলছে বইমেলার শেষ প্রস্তুতি

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : জানুয়ারি ৩০, ২০১৮

১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮। প্রতি বছরের মতো এবারও যথা সময়ে শুরু হবে এ মেলা। এখন পুরোদমে চলছে প্রস্তুতি। মেলার স্টল কাঠামো নির্মাণে দেখা গেছে তোড়জোর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়ে।

ভাষা ও একুশের চেতনায় ঋদ্ধ এ মেলাকে ঘিরে এখন এগিয়ে চলছে সব ধরনের প্রস্তুতি। বাংলা একাডেমি থেকে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা জাদুঘর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরমুখী সড়কজুড়ে শুধুই কাঠ, লোহা আর হাতুড়ির শব্দ। বাংলা একাডেমির ভেতরে ঘুরে এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাছে গেলে চোখে পড়ে বাঁশ, কাঠ আর বাহারি রংয়ের কৌটা। চলছে বই মেলার স্টল নির্মাণের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মেলা শুরু হতে আর মাত্র একদিন বাকি। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
বেশিরভাগ স্টলের কাজ শেষপর্যায়ে। মহান একুশে গ্রন্থমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মেলা। প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ বইমেলাকে ঘিরে চলে বই বিক্রির মহাউৎসব। মূলত দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটছে এ মেলাকে কেন্দ্র করেই। বাঙালির ভাষা, সাংস্কৃতিক বোধ ও ঐতিহ্য হলো অমর একুশে বই মেলার ভিত্তি।

এদেশের সকলশ্রেণির লেখক, পাঠক তথা শিল্প-সংস্কৃতি মানুষেরা পুরো বছর ধরে অমর একুশে বইমেলার অপেক্ষায় উন্মুখ থাকে। এর সারথি হয়ে ওঠে সর্বস্তরের মানুষ। আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ঘিরে প্রকাশনা শিল্পের যতটা বিস্তৃতি ঘটেছে তার মূলে রয়েছে মহান একুশে গ্রন্থমেলা। গত দুইবারের মতো এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে মেলার মূল আকর্ষণ। আগের প্রকাশনা সংস্থা ছাড়াও এবার শতাধিক প্রকাশক প্রথমবারের মতো স্টলের আবেদন করেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মূল প্রকাশকদের স্টল, তাই সেদিকেই বেশি নজর দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সব স্টল যাতে সমান গুরুত্ব পায় সেইদিকে দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে বিশেষভাবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতবারের চেয়ে আরও অধিক আকর্ষণীয় করে সাজানো হবে শিশু কর্নার। শিশুদের এ চত্বরটিতে প্রবেশের জন্য আলাদা গেইটও রাখার কথা রয়েছে।
এবার শিশু কর্নারে থাকবে শিশুদের জন্য বৈচিত্র্যময় খেলার সামগ্রী। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থমেলা চত্বরের পরিবেশ নান্দনিক ও মনমুগ্ধকর করতে দুটি ফোয়ারা, চত্বরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ফুলের চারা রোপণ, নির্বিঘ্নে চলাচল ও আড্ডার জন্য উন্মুক্ত স্থান রাখা হচ্ছে। একইভাবে ক্রেতা-পাঠক-দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবার খাবারের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। থাকবে দর্শনার্থীদের বসার জন্যও সুব্যবস্থা। এছাড়া বরাবরের মতো এবারও মেলায় থাকছে দর্শনার্থীদের জন্য ডিজিটাল নির্দেশিকা।

প্রবেশের মূল দুই প্রবেশপথ দোয়েল চত্বর ও টিএসসি এলাকার দুটি ফটকে স্থাপিত ইলেকট্রনিক বোর্ডের মাধ্যমে উপস্থাপিত হবে মেলা সংক্রান্ত নির্দেশিকা। এবারের বইমেলায় অন্য বছরগুলোর চাইতে সাজসজ্জা থাকবে বর্ণীল। দেশীয় লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের উজ্জীবিত করা এবং আন্তর্জাতিক শিল্প-সাহিত্যের সাথে সমন্বয় সাধনের জন্যে মেলাকে ঘিরে একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। এতে অংশ নেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিকরা। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া, পুয়ের্তোরিকো, চীন, অস্ট্রিয়া, জাপান থেকে দশজন সাহিত্যিক এবং  ভারত থেকেও বেশ কয়েকজন কবি, সাহিত্যিক, শিল্পসমালোচক অংশ নেবেন সম্মেলনে। পয়লা ফেব্রুয়ারি বইমেলার সঙ্গে সাহিত্য সম্মেলনও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার মোকাবেলায় এবার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এবারের বইমেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের পরিকল্পনা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র‌্যাব-পুলিশ-ডিবির সমন্বয়ে এবারের মেলায়ও শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। মাঠে থাকবে আনসার, ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা। এবারের বইমেলায় দর্শনার্থী, লেখক, প্রকাশকসহ দেশের বিশিষ্টজনদের নিরাপত্তা দিতে সর্বকালের সেরা নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় থাকবে বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাঙ্গণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে র‌্যাব ও পুলিশের চেকপোস্ট।