ছাত্রদের কাছে খোলা চিঠি

মারিয়া সালাম

প্রকাশিত : আগস্ট ০৪, ২০১৮

ছোটলোকদের এ দেশে কেউ সিস্টেমের চেঞ্জ চায় না। সবাই ভাবে, অন্যের ক্ষতি হলো তো কী হলো! আমিতো ভালো আছি, আমার পকেটে বড়ভাই, নেতাদের কিছু উচ্ছিষ্ট তো আসছে মাস গেলে। সেই হারামের টাকায় আমি তো বেশ আছি।

তাই আজ অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, মূর্খ, পরিবহন শ্রমিকেরা আর রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আমাদের দেশপ্রেমী ছেলেমেয়েদের রাস্তায় রাস্তায় পেটাচ্ছে। তোমরা এ জাতিকে এভাবেই মরতে দাও, এ জাতির পাপের ভাগ নিজের কাঁধে নিয়ে অযথা কষ্ট পেও না। এই পাপী মানব জাতি ক্রুশবিদ্ধ যিশুকে যতটা ভালোবাসে, বেঁচে যাওয়া যিশুদের ঠিক ততটাই এড়িয়ে চলে। ক্রুশে বিদ্ধ যিশুর মূর্তিকে তারা পূজা দেয়, মরাকান্না কাঁদে। তার ত্যাগকে উৎসবে পরিণত করা আমাদের জন্য যতটা সোজা, তার আদর্শে চলা ততটাই কঠিন। যিশুকে আমরা পূজা দি, কারণ আমরা খুশি হয়েছি, তার প্রাণটা গেছে, আমরা বেঁচে আছি।

আজ তোমরা যাদের জন্য, যাদের সন্তানের জন্য, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে, নিজের পড়ালেখা, নাওয়া খাওয়া ভুলে পথে পথে মার খাচ্ছ, তারাই তোমাদের গালি দিচ্ছে, তোমাদের হাতের ফটোশপ করা পোস্টারের দিকে তাকিয়ে জাত গেল জাত গেল বলে চিৎকারে কান ফাটিয়ে দিচ্ছে। কারণ তোমাদের থামাতে আমাদের কেবল একটা উপলক্ষ দরকার, এ দেশে আমরা যে যার জায়গায় সবাই ফাঁকিবাজ, দুর্নীতিবাজ।

আমরা সিস্টেমের চেঞ্জ চাই না, আমরা সরকারের চেঞ্জ চাই, আমাদের হিসাবটা খুব সহজ। সরকারের টাকা যাদের পকেটে যাচ্ছে, তারা সরকারের চেঞ্জ চায় না, তারা তোমাদের ঘৃণা করছে, মনে মনে ক্ষতি চাইছে। আর যারা ভাবছে নতুন সরকার হলে ওদেরও পকেট ভারি হবে, তারা দেখছে, এ আন্দোলনে তো সরকার থাকতে পড়বে না। তাই তারা বিরক্ত। তারা ভাবছে, তাহলে শুধু শুধু আমি কেন নিয়ম মেনে চলবো! তাই এই দেশপ্রেম, এই ভালো চাওয়ার দাবি আজ বিফলে যাচ্ছে।

আজ তোমরা মরলে, সবাই তোমাদের সমাধিতে ফুল দেবে। কিন্তু তোমার মৃত্যুর জন্য কাউকে কাঠগড়ায় ওঠাবে না। তোমার দেখানো পথেও চলবে না। এ দেশের লোক কেবল নিজের আর তার পরের একপুরুষের কথা ভাবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বলতে তারা বোঝে তাদের সন্তানদের। তাই জীবনভর দুর্নীতি করে একপুরুষের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে, অন্যের সন্তান বা দেশ রসাতলে যাক। দেশ রসাতলে যাক, টাকা থাকলে আমি বিদেশ চলে যাব, এই আমাদের ভাবনা। তাই বঙ্গবন্ধুর পরে দেশ আর কোনো নেতা পায়নি।

তাই ফিরে এসো, ফিরে এসে নতুন করে ভাবো। এভাবে এ জাতিকে পথে আনা যাবে না। তোমাদের চিন্তাভাবনা মনে আশা জাগিয়েছে, সেটা ছড়িয়ে দাও তোমাদের ছোটদের মাঝে, এ জাতির চিন্তার মূলে আঘাত দাও, যে প্রজন্ম নষ্ট তাকে তোমরা পথে আনতে পারবে না, বরং যে প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, তাদের মাঝে তোমাদের ভাবনা আর আদর্শের বীজ বুনে দাও, মানুষ তৈরি করতে লেগে যাও, সামাজিক আন্দোলন করো।

এলাকায় এলাকায় ক্লাব করো। পাঠাগার করো। রাস্তার ছেলে বলে যাদের দূরে ঠেলে দাও, তাদের বন্ধু বানাও, তাদের ভালবাসতে শিখাও। দশ বা বিশ বছর পরে তোমাদের মারতে আসবে না কোনো অশিক্ষিত পরিবহন শ্রমিক, বরং তোমাদের ভালোবেসে, নিজের ভাই মনে করে, তোমাদের কথামতো চলবে, আগে ভালোবাসা ছড়িয়ে দাও। লাখ লাখ পথশিশু যারা সভ্য সমাজকে ঘৃণা করতে করতে বেড়ে ওঠে, তাদের বুকে টেনে নাও। বিভেদ ভেঙে ফেলো। ওদের ভালোবাসতে শেখাও। এতে সময় লাগবে অনেকদিন, অনেক বছর, কিন্তু ফল হবে দীর্ঘস্থায়ী। ভালোবাসার বন্যায় ভাসিয়ে দাও অন্যায়।

লেখক: সংবাদকর্মী