ছবিঃ রিফাহ সানজিদা

ছবিঃ রিফাহ সানজিদা

ছাদকথন

রিফাহ সানজিদা

প্রকাশিত : মার্চ ১৮, ২০১৮

আমার কেবল বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে হয়, আমার ঠিকানায়। আমার বাসার ছাদ আমার প্রিয় জায়গা। ছাদে বিশাল সব গাছেদের ছায়া আছে। এখানে ছাদ একটা আছে, তবে ফুলের টবে ভর্তি। ওরকম বড় গাছ আর ছায়া কোথায়?

প্রথম যেবার আমরা নিজেদের বাড়িতে উঠি, মনে আছে, সেবার গরমে খুব লোডশেডিং হচ্ছিলো। আমাদের বাসাটা সবে একতলার তখন, কিন্তু উঠোন মতো বাড়তি জায়গাটায় গ্যারাজ করে ফাঁকা রাখা হয়। আমরা রাতে খেয়েদেয়ে গ্রাম থেকে আনানো বিশাল পাটি বিছিয়ে বসে সবাই গল্প করতাম। আর গ্রীষ্মের বাতাসে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতাম। মাঝে মধ্যে ভূতের গল্প করার জন্য খুব জোর করে ধরতাম বড়দের। তখন শুরু হতো আরেক রোমাঞ্চকর গল্প। অদ্ভুত দিন ছিল সেসব!

এরপর একটু বড় হতেই একা একা রাতে ছাদে তারা দেখার অভ্যেস হলো। একবার কাল-বৈশাখী শুরু হবার ঠিক আগে আগে শহরজুড়ে রাতে লোডশেডিং শুরু হলো। সেই সময় খোলা আকাশের বুক চিরে বিজলির রেখা বয়ে গেল বহুদূর। সে কী দৃশ্য, অপার্থিব যেন! এমন করে একটু পরপর বিজলির আলোয় গোটা অন্ধকার শহরটা সাদা আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছিল। ছাদে দাঁড়িয়ে সে রাতে মনে হচ্ছিলো, ব্যাবিলনের কোনো অভিশপ্ত রাতে দাঁড়িয়ে আছি। এর একটু পর শুরু হলো কালবোশেখির ঝড়।

ছোটবেলায় বৃষ্টির দিনে স্কুলের অলিখিত ছুটি থাকতো। কীসব মজার দিন! কাগজের নৌকো বানিয়ে ভাসিয়ে দিতাম বাসার সামনের রাস্তায়- এরপরই কোনও নির্দয় রিকশা হয়তো হুড়মুড় করে মাড়িয়ে দিত সেই নৌকো। আর তাতেও ভরসা ছাদ। ছাদে পানি জমতো রিনিঝিনি বৃষ্টিতে। সেই পানিতে নৌকো ভাসালে কোথাও যেত না, ভেসে ভেসে ঘুরে ফিরে এক জায়গায় চলে আসতো। শরতকাল এলেই ঘুড়ি ওড়ানোর একটা নেশা ছিল ছাদে, যদিও ছোট বলে কেউ একা হাতে ঘুড়িখানা দিতো না। তবু, ছাদে ঘুড়ি ওড়ানোর রঙ বেরঙের বিকেলগুলো কত তরতাজা! নতুন রিলের ছবির মতো ঠিক।

ছাদ একটা ভালোবাসার জায়গা। ছাদের ওপর নরম বিকেল কাটানোর মতো অবসর থাকলে তা জীবনের বাড়তি পাওনা। আমাদের ছাদ এখন এলোভেরা, নাম না জানা কীসব জংলি ফুল আর কাঁচামরিচের গাছে ভরপুর।

এখন ছুটির সময় বাসায় গেলেও ছাদে ওঠা হয় না। তবে এবার ভাবছি, কিছু বিকেল চায়ের সঙ্গে ছাদে কাটানো যাবে বেশ। ছুটি একবার শুরু হোক কেবল, সে অপেক্ষায় আছি।