অলঙ্করণ: পাপিয়া জেরিন

অলঙ্করণ: পাপিয়া জেরিন

জাতবেদা মিশ্র’র দুটি কবিতা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৫, ২০১৮

মন ৪

রাত্রি ভীষণ রাত্রিমাখা দিন
বন্ধ সবই বন্ধ ছিল পথ
চোখের `পরে চোখ ছিল না তোর
একলা ছিলাম একলা স্থানুবৎ

জোনাক কিছু জোনাক ছিল হাতে
জ্বলা কেবল জ্বলা স্মৃতির দাগ
হাত বাড়ালেও হাত ছিল না কারো
অপ্রেমেতেই পুড়ে ছিলাম খাক

বাঁধন ছিল বাঁধন ভাঙা গানে
খোঁজা তবু খোঁজা সকল জুড়ে
সকল খোঁজার শেষে ফিরে দেখি
চুপটি করে আছিস হৃদয়পুরেই

বর্ষা শুধু বর্ষা নামে চোখে
পাতাঝরার এলো যে মরশুম
তবুও কেমন আঁকড়ে থাকি তোকে
রাত জাগে আর সঙ্গে জাগে ঘুম

আমার আছে একলা চলা নদী
অনেক ঋতু জীবনজুড়ে তোর
ভালবাসার এমন ছেলেখেলার
কাটবে যে রাত আসবে জানি ভোর।

মন ৭

আমি তখন অন্ধকারে একলা ছিলাম, চারদিকেতে কালো
হঠাৎ এসে বললো সুজন, বুঝিস নে কী? তুই যে আমার আলো।

অবিশ্বাসের ভঙ্গিমাতে অবাক হতেও ভুলে, বলেছিলেম তাকে,
এমনভাবে কেউ ডাকেনি, দেখবি তুইও হারিয়ে যাবি জীবন নদীর বাঁকে।

বললো সুজন, তাও কি রে হয়, ভালবাসার রীতি জানিস যদি,
বাসছি ভালো মানে, তোকে নিয়েই কাটবে আমার জীবন-মরণ নদী।

তোর যা কিছু মন্দ ভালো রাখবো বুকে ধরে, যেমনটি তুই, বাসবো তাকেই ভালো,
দিনের পরে দিন কেটেছে রাত কেটেছে আরও, মুঠোয় ধরে জোনাক জ্বলা আলো।

গাছ হয়েছি, ছায়া আমার দিগন্তময়, স্থির হয়েছি প্রেমে,
জল হয়েছি, জোয়ার ভরা নদীর মাঝে আকণ্ঠ ভর অবগাহন, নেমে।

আজকে আবার সুজন হঠাৎ বললে আমায় ডেকে, দিনের সূর্য দেখে,
ওর মতো তুই জ্বলতে পারিস না তো, নে শিখে তুই ওরই আলো থেকে।

এই না বলে সুজন আমার ছড়িয়ে দিল ফেলে, হাতের মুঠো খুলে
জোনাকগুলি, বললো এসব ধরেছিলাম, একলা কোনো অবসরের ভুলে।

অবাক হতেও ভুলেছি যে, সেইই সে দিন থেকে, জোনাক মুঠোয় রেখে
আমার তখন একলা আকাশ, একলা প্রদীপখানি খুঁজছে আলো, সুর্য দেখে দেখে।

গাছরে আমার, প্রেমরে আমার, সমর্পণের আদিগন্ত নদী,
আলো আমার অতল বুকে
একটিবারও দিতাম উঁকি যদি।

সুজন রে শোন, আজকে আমি বুকের আগুন জ্বালি, বাহির আলো বিনে
ভীষণ ঝড়ে একলা রাতে সেই আলোতেই আঁধার নেব চিনে।