জিন্নতুলবিলাদের রূপকথা: একটি আলোচনা

পর্ব ৪

জ্যোতির্ময় মুখার্জি

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২০, ২০১৯

‘সে-সময়ে নিচু জাতের, নিচু জাতের চেয়ে নিচু জাতের, তার চেয়েও নিচু জাতের, অঢেল দাসী বাঁদি চাকরানি ঝি কামিলনি নড়ি আমিনী কিংকরী ভাতুনি প্রেষিনী খানজাদনি পুষতো খানদানি লোকেরা। তারা মরে গেলে তাদের অচ্ছুৎ মড়া না পুঁতে না পুড়িয়ে ভাসিয়ে দিত নদীতে, যার ওপর আরাম করে বসে ভাবতে-ভাবতে হাসতে-হাসতে কাশতে-কাশতে ভাসতে-ভাসতে ঠাকুর্দার বাপ-পিতেমো চলে যেত অনেক-অনেক দূরে। কত ভাগাড় দেখা হতো। কত শ্মশান। কত তান্ত্রিকের যোগাড়যন্তর। স্বাদ বদলাতে একান্নবর্তী শকুনরা এক ভাসন্ত মড়া থেকে উড়ে আরেক ভাসন্ত মড়ায় গিয়ে বসত।’

দগদগে ঘায়ের মতো জাতিপ্রথা ও ক্রীতদাসপ্রথার ইতিহাস এসেছে এইভাবেই। স্বতঃস্ফূর্ত, গল্পের স্রোতকে  না ভেঙেই। একইসাথে ধর্মের নামে নষ্টামিকে তুলে ধরতেও তিনি পিছহাত নন। ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপও করেছেন অনায়াসে। অবলীলায় আঘাত করেছেন ধর্মের অচলায়তনে। ‘ওকে পোড়ালে ও হিঁদু হয়ে যেত আর পুঁতে দিলে মোচোরমান, তাই ওকে ওভাবে ফেলে দিয়েছে। ওর মড়া বদ-ভাবনার বাতাসে ভরা, খেলেই তোর বায়ু রোগ হতো। আর উড়তে পারতিস না।’ অবশ্য ধর্মের নামে বিভিন্ন অমানবিক অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি চিরদিনই সোচ্চার। হাংরি আন্দোলনের সময়েও তাই দেখি আলাদা ভাবে ধর্ম নিয়ে ইশতাহার। শিলাদকে তার দাদু বলছে, ‘এই যে শঙ্কর, রামানুজ, বল্লভাচার্য, শ্রীধরস্বামী, নিম্বকাচার্য, মাধবাচার্য, কেবলভক্তি, বলদেব বিদ্যাভূষণ, মধুসূদন সরস্বতী, ওনারা তো তোর-আমার জন্যে ভগবানের কথা ব্যাখ্যা করেননি; করেছেন নিজেদের আর চেলাদের জন্যে।’ এইভাবেই ধর্মের মুলো ঝুলিয়ে চলছে অবিরত ধর্মের গুরুঠাকুরদের ব্যরবসা। বংশপরম্পরায় বসে খাওয়ার সুবন্দোবস্ত। রাজতন্ত্র আর ধর্ম চিরদিনই হাতে হাত মিলিয়ে হেঁটেছে। একজন আর একজনকে পুষ্ট করে ক্ষমতা বাড়িয়েছে দুজনরেই, যাতে নিশ্চিন্তে ভোগবিলাসে দিন কেটে যায় এবং রাত। ‘লর্ড মাত্রেই তাদের পি.এ., পি.এস., স্ত্রী ছেলে মেয়ের জন্যে অনেক কিছু করে, যাতে তারা কয়েক পুরুষ বিলাস বৈভব ক্ষমতায় থাকে।’ এই কথাটি এখনকার রাজনৈতিক নেতাদের জীবনের সত্য।

‘আজকাল যে-সব মড়া পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই গরু ছাগল আর ভেড়ার রুগি লাশ। গরু-মোষের স্বাস্থ্যবান মড়া হলে তার মাংসে এত কীটনাশক যে অক্কা অনিবার্য। ওসব খেয়েই তো শকুনরা আজ নির্বংশ।’….বিজ্ঞানের অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগেও তাঁর সজাগ শকুনের দৃষ্টি। ‘সেদিনকে একটা আড়মাছ ধরেছিল শিলাদ; ছেড়ে দিতে হল। মহিষাসুরের গায়ের তিতকুটে সবুজ রঙ খেয়ে মায়ের দয়া হয়েছিল মাছটার।’

‘পার্টি-অপার্টির লোকেরা খুনোখুনি করে লাশ ফেললে পুলিশে তুলে নিয়ে যায়, আমাদের খেতে দেয় না। মর্গের বাইরে যে মড়াগুলো ফেলে দেয় সেগুলো চুরি করে নিয়ে যায় কংকালের ব্যাপারীরা।’ ….. টকে যাওয়া রাজনীতি আর সমাজের পচনশীল শবগুলোর ভিতরেও গলা পর্যন্ত ঢুকিয়ে দিতে তাঁর আপত্তি নেই। ছিঁড়ে ছিঁড়ে টেনে আনেন বঙ্গসমাজের পচা-মাংসের টুকরো, পচে-যাওয়া নাড়িভুঁড়ি। এখানে ‘অপার্টি’ শব্দটির প্রয়োগ বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। তুমি আমার দলের নও, মানে তুমি ‘অপর’, দি আদার। বিরোধী পার্টি আবার কী বস্তু? খায় না মাথায় দেয়? সংসদীয় রাজনীতিতে বিরোধী দলের গুরুত্ব অপরিসীম, কে বলল? ওসব বইয়েতে লেখা থাকে, বাস্তবে নয়। ‘সেই থেকে ফিবছর মেমননের স্মৃতিতে একদল পাখি জেতে আর আরেকদল হারে।’ সুবিধাবাদী রাজনীতির মুখোশ খুলেছেন তিনি অনায়াসেই। ‘এই যেমন কাশ্মীরে বোমাবাজদের সম্পর্কে যে ধরনের ভাষ্য দেয়া হয়, ত্রিপুরার বোমাবাজদের সম্পর্কে তার চেয়ে গরম ভাষ্য দেয়া হয়। কেননা ত্রিপুরায় ভাষ্যকারের মেসো-জ্যাঠা-কাকা-মামা থাকে। কাশ্মীরে ভাষ্যকারের কেউ থাকে না।’

সংবাদমাধ্য মের দ্বিচারিতা, নিজেদের লাভের কথা মাথায় রেখে মিথ্যা খবর তৈরি করাকেও তিনি মোটেই ভালোভাবে নেননি। ‘আপনার অবৈধ প্রেম যাতে ব্রেকিং নিউজ হয় তার জন্যে নিউজ চ্যানেলদের বলে দেব, সে বাবদ এক্সট্রা দিতে হবে না, বিজ্ঞাপন থেকে কভার করে নেব।’ গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মনে করা হয় সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের জাগ্রত প্রহরী। কিন্তু এটাও সেই খাতায় কলমেই থেকে গেছে। ভুয়ো আর মিথ্যা খবর গিলে-গিলেই আমরা আজ অভয়স্থ। ‘নজরে পড়লেই সংবাদ মাধ্যমের ছোঁড়াছুঁড়িরা আজেবাজে কথা রসিয়ে-খসিয়ে লিখে দেবে। ও হয়ত বলল হা-লু-ম। ওরা লিখে দেবে শিলাদ তরফদার বলেছেন, মুখে হাগুম।’ কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা পার্থক্য করতে, ভাবতেই ভুলে গেছে সংবাদখাদকরা। খবরটাও এখন ব্যবহৃত হয় এন্টারটেইনমেন্ট পার্পাস। ‘ব্রেকিং নিউজের খাতিরে আজকাল তো ধর্ষকদের ক্যামেরার সামনে আবার ধর্ষণ করে ঘটনা তুলে ধরতে হয়, যাতে জনসাধারণ স্বচক্ষে দেখতে পায়। অবশ্য তার জন্যে সস্তার অভিনেতা-অভিনেত্রী ভাড়া করতে হয়।’

হাংরি আন্দোলনের সময় দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগটা চেপে গিয়ে অশ্লীলতার অভিযোগটা সামনে আনা। হাংরি মানে যে কবি ও কবিতার (সৃষ্টিশীলতা) সর্বগ্রাসী ক্ষুধা, সর্বগ্রাস, অনেক দিন খেতে না পাওয়া মানুষের মতো গোগ্রাসে খেয়ে ফেলা সবকিছুই, খাওয়ার নিয়ম নীতি শিষ্টাচার কিছুই না মেনে। কবিতার পাঠবস্তুটি কখনো কোনকিছুতে বাছবিচার করবে না, তার প্রকান্ড হাঁ-মুখে তলিয়ে যাবে সবকিছুই। থাকবে না কোনো বাইনারি বৈপরীত্য,  হ্যাঁ -না, ঠিক-ভুল, ন্যা য়-অন্যাতয়, শ্লীল-অশ্লীলের দ্বন্দ্ব, এটাকে সম্পূর্ণ না জেনে, না বুঝে প্রচার করা হল হাংরি আন্দোলন মানে না খেয়ে, খালি পেটে কবিতা লেখা । তারসাথে নেশা করা, যৌনক্ষুধা ইত্যাদির মশালাদার খবর তো আছেই। সেই সময়ের সংবাদপত্রের পাতা ওলটালেই চোখে পড়বে নানা রকমের রসালো গালগল্প তৈরি করেছে লেখক-সাংবাদিকরা। জ্যোতির্ময় দত্ত লিখেছিলেন, ‘বাংরিজি সাহিত্যে ক্ষুধিত বংশ’।

চাকরির পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে যখন শিক্ষিত বেকারের দল (না, শিক্ষিত বলব না, ডিগ্রিধারী বেকারের দল) খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো হচ্ছে সুটেডবুটেড ফেরিওয়ালা। সামান্য একটা জিনিস বেচার জন্য আন্তরিক মিথ্যা কথা বলছে, তাদের সেই তাড়না, তাদের সেই নিরুপায় তাগিদটা চোখে পড়ার মতো। একইসাথে চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে আবার চোখের কোণে কোণে খেলে যায় তাচ্ছিল্যের হাসি। ‘ভাল্লাগবে স্যার উলুক, অবশ্যই ভাল্লাগবে, আমি দুবছরের গ্যারেন্টি আর তিন বছরের ওয়ারেন্টি দিচ্ছি, একবার এসে চোখ আর লিঙ্গ সার্থক করুন, তারপর বলবেন। ক্যাশ ডিসকাউন্ট আছে।’ যৌনপল্লীর বর্ণনাতেও গল্পকার বেশ স্বাচ্ছন্দ্য এবং রিয়ালিস্টিক। ‘ডালে-ডালে কোটরবাড়ির দরজায় পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে প্যাঁচাপেঁচি বুলেভার্দের দামি-দামি কলগার্ল। খুড়ুল্লে প্যাঁচা যার গায়ে বুটিদার বুটিক শাড়ি, ছাইরঙা টু-পিসে হুতুমনি, ফিল্ম স্টারের ডিজাইনার পোশাকে লক্ষ্মীপ্যাঁচা, বাদামি চুড়িদার কুর্তায় ভুতুমনি, খয়েরি মিনি স্কার্ট-ব্লাউজে কালোপ্যাঁচা। ঠোঁট দিয়ে গায়ের পোকা বেছে রূপটান দিচ্ছে ভুতুমনি।’ শুধু বাইরে নয়, ভিতরেও। ফার্স্ট টাইমারের ফিলফিল ফ্যা লফ্যা লে ফিলিংস থেকে ফুরফুরে ফুর্তিটুকু বেশ যত্ন সহকারে বর্ণিত। ‘কী ভাবে শুরু করবে ভাবছিল শিলাদ। কিছুক্ষণেই যার সঙ্গে শোবে, এমন সুশ্রী সুবেশা অপরিচিতার সঙ্গে কথা বলার মাত্রা ওর জানা নেই। ইতস্তত ভাবটাই বা কাটানো যায় কী ভাবে? নিঋিতির জানা আছে প্রেমিকদের প্রাথমিক সমস্যা; তাই ওই শুরু করল। ……শিলাদের অস্বস্তির ভিন্ন ব্যাখ্যা করে নিঋিতি বলল, তুমি কি প্রথমবার? দাঁড়াও দেখিয়ে দিচ্ছি কী ভাবে এগোবে। এই নাও কন্ডোম, এটা পরে নাও, ঝিঁঝির অন্তর্বাস-ডানা দিয়ে তৈরি মিউজিকাল কন্ডোম।’

‘নিঋিতির কথাটা শেষ হতেই, গ্রেনেড ফাটার আর গুলি চলার শব্দে শিলাদকে চমকে উঠতে দেখে ও বলল, ও কিছু নয়, সম্ভবত সন্ত্রাসবাদীরা খুনোখুনি খেলতে বেরিয়েছে, কিংবা বোধহয় চিনের কয়লাখনিতে সাপ্তাহিক বিস্ফোরণ হল।’……হ্যাঁ , চমকানোর কিছু নেই, এ তো ডেলি রুটিন। কিছু না হলেই বরঞ্চ বাসি বাসি লাগে।

‘এভাবে, সরকারি কর্মীর মতন, শিলাদের ঘুমিয়ে দিন যায়, জেগে রাত যায়।’….গল্পকারের স্যা টায়ারের প্রয়োগেও একইসাথে ফিচিক ফিচিক হাসি আর কর্কশ নিমতেতো।  ‘বাইরে শ-খানেক চড়াইপাখি জোরে-জোরে স্লোগান দিচ্ছে, চলবে না চলবে না, চক্রান্তকারীর হলুদডানা গুঁড়িয়ে দাও গুঁড়িয়ে দাও, আমাদের আবাসন বানিয়ে দিতে হবে দিতে হবে, কুটোকাঠি এনে দিতে হবে দিতে হবে, বাবুইবাসা চলবে না চলবে না’…..মিছিলনগরী কোলকাতার স্মৃতি তো আজও স্বপ্নে ও জাগরণে। পাল্লা দিয়ে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ। আমি আজ পর্যন্ত এই কালো হাতগুলোকে কোনদিন দেখতে পাইনি। ভাঙতে বা গুড়িয়ে যেতেও দেখিনি। কিন্তু আছে জানি, থাকবেও। কিন্তু দেখতে পাই না কখনো। হয়তো কালো কালো হাতের সারি চোখের সামনেই। আসলে দুরকমের যাতায়াত থাকে সিঁড়ি বেয়ে। এই যে সব নীরব মিছিল বা উদ্যাত হাত। বিজ্ঞাপনে দীর্ঘ হয় জুতোর আকার। ‘এর সঙ্গে যোগ হল একমাসের বেশি রোজ ভোরে ঘুমোতে যাবার সময় থেকে সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙার সময় পর্যন্ত ভোট, লোট আর ফোট উৎসবের ছ্যাঁচোড়দের এই ধরনের অবিরাম গলাবাজি। জলেস্থলে অন্তরীক্ষে সর্বত্র এই বকুনিবাতেলার চোঙা।’ কী আর করা যাবে, সইতে তো হবেই। গণতন্ত্রের গণোৎসব।

‘গাঁয়ে-গঞ্জে ভোট, লোট আর ফোট উৎসবের ফলে অনেক মানুষ ইঁদুরের বাড়ি থেকে ধান চুরি করছে তা তো আমরা স্বচক্ষে নাইটভিশানে দেখেছি।’ আরে ভোটের তো কিছু খরচ-খরচা আছে, নাকি। আহা বেচারিরা পাবে কোথায়, সারাটা জীবন তো শুধু নিঃস্বার্থভাবে সমাজের সেবা করে গেল। দাও, দাও হাত উপুড় করে। আর না দিলে ? ছিঃ ছিঃ এসব পোলাপানামো মৃত্যুপথযাত্রীরা করে। আর বলছিলাম কী, বাড়ি টাড়ি করলে আমাদেরকে বলবেন, কোনো সমস্যা হবে না। ইঁট-বালি-সিমেন্ট ইত্যাদির ব্যববস্থা আমরাই করে দেবো। আপনাদের কোনো সমস্যা হোক এটা আমরা ভাবতে পারি, বলুন। অবশ্য কিছু দোষ তো থাকতেই পারে, বলুন। কাজ করলেই ভুল হবে। ‘সুপারির ট্যাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করিস না, বিরোধী প্রার্থীকে মাস্তান সাপ্লাই দিয়েছিস, ধর্ষণে যাবার আগে আমাদের সঙ্গী করিস না, আমার এলাকায় ট্রাক লুটিস, পুকুর বোজাবার আমাদের গুয়ের গাড়ি ছিনিয়ে নিস, আমাদের এলাকার ঠিকেদারি নিয়ে নিস, পুজোয় তোলা আদায় করে পুরোটা রেখে নিস, আমার চুল্লুঠেকের খবর পুলিশকে দিস, আমাদের পাচারের মাগিদের পেছন শুঁকে বেড়াস, ইত্যাদি।’

‘থলথলে ঘাড়েগর্দান বনবাবু বলছিল, আরে ওখানে একটা আধফোকলা বুড়ো বাঘ থাকে যার এই বয়সে ম্যানইটার হওয়া অসম্ভব; আপনারা নিশ্চিত হয়ে চিংড়িপোনা ধরুন, আমরা তো আছি, ভয় কিসের।’….প্রশাসনের মিথ্যা আশ্বাস আর মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভুলিয়ে রাখার এক ওয়েস্টবেঙ্গলসম দক্ষতা এড়িয়ে যায়নি গল্পকারের চোখ থেকে। হাংরি আন্দোলনের সময় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার এটাও ছিল একটা মস্ত কারণ।  হাংরি আন্দোলনের পরপরই পশ্চিমবঙ্গে ঘটে গেছিল নকশাল আন্দোলন। দেবেশ রায় এই দুটি আন্দোলনে একই বিশ্ববীক্ষার কথা বলেছিলেন। অথচ দুটোর উদ্দেশ্য, প্রস্তুতি ও গভীরতা সম্পূর্ণ আলাদা। হাংরি আন্দোলন যেখানে দেশভাগোত্তর বিপর্যয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সংস্কৃতি, ধর্ম, শিল্প ও সাহিত্যে স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধে আঘাত হানার চেষ্টা করেছিল, সেখানে নকশাল আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল মার্কসীয় পন্থায় রাজনৈতিক ক্ষমতাদখল। হাংরি আন্দোলনে ক্ষমতার বিরুদ্ধে যে জেহাদ তার কারণ মূলত প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং শিল্প ও সাহিত্যকে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণের বাণিজ্যিক প্রয়াস। শিল্প ও সাহিত্যের পায়ে ভিক্টোরিয়ান মূল্যংবোধের বেড়ি পরিয়ে দেয়া। তাছাড়া শিল্প ও সাহিত্যজগতের মানুষের মধ্যে এসেছিল জাড্যের উদাসীন স্থিতাবস্থা। সমাজবিমুখ হয়ে সাহিত্য ও শিল্পের বাজার আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। ভাবনাতেও এসে গেছিল দৈন্য। কোনো নতুন আইডিয়া নেই। শুধু কালিতে কালি বুলিয়ে সুখী সুখী নির্মাণই ছিল শিল্প ও সাহিত্য সাধনা। এরসাথে যুক্ত হয়েছিল ক্ষমতার পদলেহন করে স্বীকৃতি যোগাড়। ঠিক এই জায়গাতেই আঘাত হেনেছিল হাংরি আন্দোলন। যদিও অ্যাবস্ট্রাক্ট সিস্টেমের নি-জার্ক প্রতিক্রিয়ায় আজও কোনো হেলদোল নেই।

চলবে