জীবনের অনেক দম, দামও তাই বেশি

শিমুল বাশার

প্রকাশিত : আগস্ট ১২, ২০১৮

ছোটবেলায় গোল্লাছুট খেলতে গিয়ে দৌড় দেয়ার পর একবার এমন কষ্ট শুরু হইলো! মনে হচ্ছিলো মারা যাচ্ছি। আমার কষ্ট দেখে খেলার সাথিদের খেলাই তখন বন্ধ হয়ে গেল।

খবর পেয়ে মা ছুটে আসলেন বাসা থেকে। বুকে-পিঠে হাত বুলাচ্ছেন, কিন্তু আমার কষ্ট কমছে না। সবার মুখ থমথমে। খেলার মাঠে প্রায়ই এমন হতে থাকলো। আমি ভালো খেলতাম, তারপরও খেলতে গেলে তখন কেউ আমাকে আর দলে নিতে চাইতো না।

পরে অনেক অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি এবং কবিরাজি চিকিৎসা চললো। বয়েসি গাছের গায়ে জন্মানো মৃত শুককীট, মুককীটসহ কত কিছু যে খাইতে হইছে, হিসাব নাই। পরে হাকিম সাবের (লোকমান) বানানো একপ্রকার হালুয়া খাবার পর সুস্থ হয়েছিলাম।

কী যে বিশ্রী টেস্ট সেই হালুয়ার! মা রোজ সকালে মধু দিয়ে সেই হালুয়া খাওয়াতেন। এরপর আর দমের কষ্ট পেতে হয়নি কোনোদিন। প্রায়ই মনে হইতো, নদী বরাবর সাঁতার কেটে আমি একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে পারবো। ভার্সিটিতে এসে সিগারেট খাওয়া শুরুর পর কখনো কখনো ক্লান্ত হলে ওই কষ্টটা টের পেতাম। তখন খারাপ না লেগে বরং ভালো লাগতো এই ভেবে যে, ছোটবেলার সেই তীব্র কষ্টটা আর নেই। তাছাড়া সেই হালুয়ার রেসিপিটাও ততদিনে আমার আবিষ্কার করা হয়ে গেছে।

এরপর জীবনে কতরকম ঝড় গেল। বেঁচেই আছি, ভালো আছি। অনেক দম নিয়ে বড় হইছি। সহজে ভেঙে পড়ি না। কখনো কোথাও আশা হারালে, হতাশ লাগে না আর। অন্তরের ভেতরে আবার ঠিকই সফল হবার আশা জেগে ওঠে। আমি দেখতে সুন্দর না হওয়ায় আত্মীয়-স্বজনের বাসায় খুব বেশি বেড়াতে যেতাম না।

একবার অনেক রিকোয়েস্টের পর এক বড়লোক রিলেটিভের বাসায় প্রথমবারের মতো বেড়াতে গিয়েছি। তারা আমাকে দেখে খুব খুশি হলেন। আমি তাদের সুবিশাল ফার্নিশড ড্রয়িংরুমে বসলাম। সে বাসায় আরো অনেক অতিথি এসেছেন। সবাই খুব ধোপদুরস্ত। ওই রিলেটিভ কাছে এসে আমাকে ডেকে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং বিনয়ের সাথে জানতে চাইলেন, চা খাবো না কফি খাবো। আমি বললাম চা।

পরে ট্রলিতে করে ড্রয়িংরুমে চা আসলো। সবাইকে চা পরিবেশন করা হলো ঠিকই, শুধু আমাকে ছাড়া। আমি সে লজ্জার কথা ভুলিনি কিন্তু ক্ষমা করে দিয়েছি। আমার জীবনের অনেক দম। দামও তাই বেশি। জীবনে যা চেয়েছি, দেরিতে হলেও পেয়েছি। আমি জানি, আমার চাওয়ায় খাদ নাই। সেই নিখাদ চাওয়া থেকে আমি তার হাতে ফুলের বদলে একটা লবঙ্গ তুলে দিয়ে আসি।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী