তরুণ কবি, বের হও গণ্ডি থেকে

অতনু সিংহ

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮

বাঙালি ভদ্রলোকেরা ব্রাহ্মবাবু রবীন্দ্রনাথ নিয়ে লাফায়ে রবিপূর্ব মধ্যযুগের শক্তিশালী কাব্যভাষাকে অবহেলেছে। এর জন্য কে দায়ী গো? কার দায়, কার দায়!  দায়ী কলকাতার বাবুসমাজ। রবীন্দ্রস্তাবকতার কুহু আর রবীন্দ্রবিরোধিতার দুমদুম ফটাস, কুহু ও ফটাসের বাইনারি ঘিরে তারা ভাষায় স্থাপন করেছে কলোনির ঘট। যে ঘটে পানি নাই! আছে ভাষার রাষ্ট্রবিধি, রাষ্ট্রীয় ব্যাকরণ! আছে কাকাতুয়া পটানোর বুলি! আছে ভাষারে আবদ্ধ করার ইস্পাত, বালি, পাথরটুকরো, আছে মস্ত বাউন্ডারি!

দেয়ালে লাগানো আছে কাঁচ। তরুণ কবি তুমি সেই পাঁচিলকে ভাঙো। তুমি বের হও গণ্ডি থেকে। দ্যাখো, জনপদে অনেক লেখাবাড়ি, লেখাখামার, মুসাফিরখানা, মঠ ও দরগা, দ্যাখো লেখার কুঞ্জকানন... সে ভাষাকে মেখে নিতে আকাদেমি আধুনিকতার যে ভাষা, তাহার ভিতর তুমি পুঁতে রাখো ডিনামাইট! তোমার জেহাদে দ্যাখো ভেঙে গ্যাছে মন্থররাজের দেয়াল! দ্যাখো, ভাষার ভিতরে কার বাজিতেছে ঝমাঝম মল, ভাষার ভিতরে সাজা হয়েছে তামাক! দ্যাখো, প্ল্যানেটোরিয়ামে নক্ষত্র ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যাচ্ছেন দোয়েল...

ভাষার ভিতরে ঘেমেনেয়ে জেগে উঠছে  রতি। রতি! শ্বাস, রতি, শ্বাস, রতি, জন্ম, মৃত্যু, নদী ও মহাকাশ! খোলো ভাষার পোষাক খোলো, একবার সিঁড়িতে করো, একবার ছাদের অন্ধকারে, রান্নাঘরে, স্নানাগারে, রিক্সায়, ট্রেনের আপার বাথে, ঠাকুর দালানে, নবাবের ইতিহাস লেখা ময়ূর বাগানে, ঝাউবনে, মিনারের পাদদেশে, মিনারের উপরে, পাখির চোখের পাশে, ঠোঁটে, ওমে! এই দেশকাল দেখুক কবির মৈথুন, ভাষার মৈথুন, ভাষা থেকে কামরস ঝরে যাক কলিকলি কলকল কাতাকাতা কবিতার মিয়ানো পাতায়!

সমস্ত অনুভব, খুল্লামখুল্লা অথবা মিতভাষে, আড়ালে আবডালে, ইশারায়, ভ্রূর বচনে, কনুই ও চিবুককথায় ডাকো ডাকো, তাহাদের ডাকো! তুমি না ডাকলে এইখানে বৃষ্টি হবে না। ময়ূরের চোখ থেকে রক্ত ঝরবে! ক্ষেতে ভরে যাবে পলিথিন! বাথরুমে ঘুমিয়ে পড়বে আমাদের পাঠক সমাজ!

লেখক: কবি ও সংবাদকর্মী