তিন কবির তিনটে ছড়া
প্রকাশিত : জুন ১৫, ২০১৮
মাসুদ খান
শুভঙ্করের ফাঁকি
দানা খুঁটে খাচ্ছিল একঝাঁক হাঁস
আখখেতে ওত পেতে ছিল বাগডাশ।
হামলায় হাঁসগুলো উড়ে ওঠে ঝাঁকে
বাগডাশে বাগে পেয়ে গেল একটাকে।
ধানখেতে নিড়ানিতে বাবা আর ছেলে
হা-হা করে ছুটে গেল কাজটাজ ফেলে।
হাঁস ফেলে বাগডাশ গিয়েছে পালিয়ে
ছেলে গিয়ে ফিরে এল হাঁসটাকে নিয়ে।
উদ্ধারকাজে খুশি হলো যে সবাই
ভয়ার্ত হাঁসটাকে করল জবাই।
যম থেকে ফেরা হাঁস মানুষেতে ফাঁসে
তা-ই দেখে দেঁতো হাসি হাসে বাগডাশে।
উদ্ধারে হাঁসটার হলো কোন লাভ?
জীবে দয়া, মানবতা... অযথা প্রলাপ।
সবখানে এইসব চলে পুরাদমে
এক যমে ছাড়ে যেই, ধরে আর যমে।
শ্রেয়া চক্রবর্তী
তাবিজ
ঘুমিয়ে আছে নদী আর ইচ্ছেমতী ঘর,
সাঁকোর বাঁকে উড়াল দিল শুকনো বালুচড়
কেউ কখনও দেখেনি আর ভাবেনি এইভাবে,
এখন কেবল ভাঙছে ডানা প্রবল সর্বনাশে—
পাতাল থেকে খুবলে আনি ঊর্ণনাভ বীজ
মাঝির সাথে দুচার কথায় গলছে অহর্নিশ,
মোমের শহর রাতের শহর মদ ভেজানো মন
সোনার বাটি পায়ের কাছে করছে সমর্পণ!
এভাবেই আর ঠিক এভাবে খুলছি তালাচাবি
তাবিজ থেকে যাচ্ছে খসে তামস ভরা মাটি।
আবু তাহের সরফরাজ
কবি
সবার মাঝে থেকেও তিনি নিজ খেয়ালে থাকেন
কী যেন কী কল্পনা তার বুক পকেটে রাখেন।
নীল আকাশে মেঘের ডানা উড়তে দেখে তিনি
জানলা খুলে লিখতে বসেন ছন্দ রিনিঝিনি।
ঝিম দুপুরে হঠাৎ যদি কোকিল কোথাও ডাকে
গাঁয়ের মেঠোপথে তিনি খুঁজে ফেরেন তাকে।
বুকের ভেতর নীরবতা, ঠোঁটের কোণে হাসি
ফুল ও পাতায় লিখতে থাকেন, শব্দের সে চাষি।
মানুষগুলো সারাটা দিন কী যেন সব বলছে
চাল ও ডালের বাজার নাকি আগুন লেগে জ্বলছে।
সরকারি ব্যাংক হচ্ছে লোপাট, বর্গি এলো দেশে
অমুক নেতার চিমটি খেয়ে তমুক গেলেন ফেঁসে।
নাভির নিচে শ্বাস লুকিয়ে ছুটছে সবাই, ছুটছে
খুব নীরবে একটা মানুষ গোলাপ হয়ে ফুটছে।