দিন যায় কথা থাকে

পর্ব ১০

হামিদ কায়সার

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৫, ২০১৮

তারা কেউ গান শুনিয়েছেন। কেউ লিখেছেন হিরন্ময় কবিতা। কেউ আবার গল্প-উপন্যাসের মালা গেঁথে সাজিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের ঢালি। কেউ বা নিরলস জ্ঞানচর্চায় যোগ করেছেন বুদ্ধিবৃত্তির নতুন মাত্রা। তাদের সেই দিন আজ আর নেই, কেউ হারিয়ে গেছেন মহাকালে, কেউ বা এক পা বাড়িয়ে রেখেছেন সেই পথে। তবে তাদের কথা আছে; তাদের কর্মে আর সৃজনশীলতায় তো বটেই, আমার কাছেও— কাগজের ভাঁজে ভাঁজে, শব্দগুচ্ছের আড়ালে, বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সাক্ষাৎকারে। হয়তো সেই কথাগুলো আবারো জেগে ওঠতে পারে আপনার মননস্পর্শ পেলে। চলুন পাঠ নেয়া যাক।

ফিরে দেখা: প্রিয় লেখক প্রিয় বই ৩

তরুণরা কে কেমন লিখছে খুঁজে বের করো, ভালো হলে প্রশংসা করো, তাহলেই তো তারা উৎসাহিত হবে। —আবু রুশদ

ভাড়া ফ্ল্যাট বাসা ছেড়ে নিজেদের ফ্ল্যাট বাড়িতে চলে যাবেন প্রবীণ কথাসাহিত্যিক আবু রুশদ্। একে একে ঘরের জিনিসপত্তর আসবাব সরঞ্জামাদি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বইগুলো এখনো পাঠানো হয়নি, সেগুলো বিশাল বিশাল কয়েকটি বান্ডিলে বাঁধা হয়ে এলোমেলো পড়ে রয়েছে বিশাল ড্রইংরুমের মেঝেয়। এতো বই যে প্রায় পুরো একটি ঠেলাগাড়ি বুঝি লেগে যাবে। ঠেলাগাড়ির বদলে হয়তো যন্ত্রশকটে যাবে এ বই। তা লাগুক, একজন লেখক যিনি সারা জীবন লেখা আর পড়ার জন্য উৎসর্গ করেছেন তার সময়গুলোকে, বই-ই তো তার যাত্রার প্রকৃত সঙ্গী হবে। কবে থেকে বইকে তিনি সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন জানতে ইচ্ছে হতেই জিজ্ঞেস করলাম, ‘বইয়ের সাথে আপনার প্রথম পরিচয়টা কিভাবে হয়েছিল?’ আবু রুশদ্ স্মৃতির খাতা খুলে দিলেন— তাহলে তো, সেই শৈশবের কথা দিয়েই শুরু করতে হয়। বাবার চাকরি সূত্রে তখন লালমনিরহাটে থাকতাম। রংপুরের লালমনিরহাট, এখন জেলা, তখন সেটা মহকুমা ছিল। আমি পড়তাম লালমনিরহাট হাই স্কুলে। তো, সেখানকার লাইব্রেরি থেকেই ‘মৌচাক’, ‘শিশুসাথী’, ‘রামধনু’ এ ধরনের শিশু-কিশোরদের পত্রিকা বাসায় এনে পড়তাম, কি ওখানেও বসে বসে পড়তাম। সেসব পত্রিকারই কোনো একটিতে ‘মায়ের বুকে’ নামের একটি গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা বুকে গেঁথে গিয়েছিল। মা ও ছেলের সম্পর্ক, মা জিনিসটা কি, তখনই কিছু কিছু বুঝতে শুরু করলাম। তারপর চলে গেলাম কলকাতায়। আমরা দীর্ঘদিনই তো কলকাতায় ছিলাম।

হামিদ কায়সার: কলকাতায় যাওয়ার হেতু?
আবু রুশদ: ঐ বাবার চাকরি। কলকাতায় এসে তালতলা হাই স্কুলে ভর্তি হলাম। তো, সেখানে একজন শিক্ষক ছিলেন, যিনি একই সঙ্গে লাইব্রেরির বইয়ের তত্ত্বাবধানও করতেন, একদিন তিনি বললেন যে, ‘তোমাকে একটি ইংরেজি বই দেই পড়ো। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। তো, তিনি আমাকে ‘দি হিস্ট্রি অফ এ বেঙ্গল প্লেজেন্ট’ লেখক রেভারেন্ড দেব বইটি দিলেন। পড়লাম, বুঝলাম মোটামুটি। তাছাড়া ভদ্রলোকের ইংরেজিটাও খুব ভালো। তখন তো ইংরেজিটাও অতো আমার জানা হয়নি, বুঝেছি যখন তখন তো সেটা ভালোই মনে হবে। বইপাঠের সূত্রপাত হলো। তারপর হলো কি যে, আমি নিজে থেকে বইপড়া শুরু করে দিলাম— নানা ধরনের বই, প্রথম দিকে অবশ্য ধীরেন্দ্র কুমার রায়ের রহস্য সিরিজ, গোয়েন্দা। রবার্ট ব্লেক— এসব নিয়ে বেশ অনেকটা দিন মেতে রইলাম। তারপর, আমার চাচীর ভাই প্রখ্যাত হুমায়ুন কবির যিনি আমাদের বাসায় প্রায়ই বেড়াতে আসতেন এবং আমাকে বই পড়তেও বেশ উৎসাহ দিতেন— তারই পরামর্শে ক্লাস নাইনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কটা উপন্যাস এবং ছোটগল্পের বই পড়ে ফেললাম।

হামিদ কায়সার: কোন কোন লেখকের বই সেগুলো, জানতে পারি?
আবু রুশদ: তার আগে আরেকটা কথা বলা দরকার, আমরা কলকাতার যেখানে থাকতাম, দিলকুশা স্ট্রিট, সেখানে কবি ফররুখ আহমদও থাকতেন। আর সেখানে একটা পাঠাগার ছিল ‘দিলকুশা ইনস্টিটিউট’ নামে। ওটা আবার খুলতো সন্ধ্যার সময়ে দুঘণ্টার জন্য। তো আমি আর ফররুখ আহমদ, আমরা দুজনে মিলে সেখানে যেতাম। ওখানেই প্রেমেন্দ্র মিত্র, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়ের লেখা একেকটি করে পড়া শুরু করে দিই। তার আরেকটু পরে, হুমায়ুন কবিরের পরামর্শে ইংরেজি সাহিত্যের দিকে ঝুঁকলাম। উপন্যাস, অনুদিত উপন্যাস— টলস্টয়, দস্তয়ভস্কি, তুর্গেনিভ, তারপর রঁম্যা রোঁলার ‘জা ক্রিস্তফ’, টমাস মানের ‘দি ম্যাজিক মাউন্টেন’ এগুলো খুব ধৈর্যের সঙ্গে অনেকদিন ধরে পড়তে লাগলাম এবং প্রত্যেক কটি বই-ই পড়ে শেষ করে ফেললাম।

হামিদ কায়সার: শৈশবে এবং প্রাকযৌবনে আপনি যাদের বই পড়েছেন, তাদের মধ্যে কোন্ কোন্ লেখক আপনার প্রিয়, কিংবা কোন্ বইটা মনে দাগ কেটেছে এবং আপনাকে প্রভাবিত করেছে?
আবু রুশদ: দেখুন, এখানে আমি প্রিয় লেখক এবং প্রিয় বইয়ের কথা উল্লেখ করব না। কারণ, আমার অনেক কটি প্রিয় বই আছে, প্রিয় লেখকের সংখ্যাও অগণিত। তবে, আপনি যখনকার কথা বলছেন, সে-সময় প্রেমেন্দ্র মিত্রের ছোটগল্প খুব ভালো লাগতো। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ পড়ে ফেললাম— কুসুম আর শশীর আলেখ্য এবং প্রথম যৌবনের একটা উদ্ধৃতি, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ পড়লাম। একটা নতুন জগত খুলে গেল। তারপর তারাশংকরও পড়লাম। অবশ্য তার ‘কবি’ উপন্যাস ও কয়েকটি ছোটগল্প ছাড়া আর কোনো লেখা ভালো লাগেনি। কারণ, আমার মনের সঙ্গে নৈকট্য খুঁজে পাইনি। কারণ, তার উপন্যাস তো আঞ্চলিক— ঐ বাঁকুড়ার পটভূমিতে লেখা, চরিত্রগুলো ঠিক টানতো না। ওই যে বলেছি এরই মধ্যে পড়ে ফেলেছি টলস্টয়, দস্তয়ভস্কি— তাই, তারাশংকরের মধ্যে বিশ্বজনীনতা খুঁজে পাইনি। তবে পড়েছি— মেট্রিক পাস করার পরও পড়াশোনায় এ পর্বটাই চলছিল।

হামিদ কায়সার: রবীন্দ্রনাথ আবিষ্কার করলেন কখন, কিভাবে?
আবু রুশদ: রবীন্দ্রনাথ আবিষ্কার করলাম আমি ওই তালতলা হাই স্কুলেই। ‘চয়নিকা’ বলে বোধহয় রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার সংকলন ছিল। তাতে ঐ ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’ কবিতাটা হঠাৎ চোখে পড়লো। পড়া শুরু করলাম। অদ্ভুত এক কল্পনার জগৎ আমার চোখের সামনে দুলে উঠলো। এবং বিপুল ভাব-তরঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আমি মুগ্ধ হয়ে কবিতাটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লাম। তারপর থেকে বারবার রবীন্দ্রনাথ পড়তে লাগলাম, একে একে পড়লাম উপন্যাস, ‘গোরা’, ‘শেষের কবিতা’। তখনকার সময়ে নামকরা যেসব কবিতা ছিল সেসবও পড়েছি, গান শুনেছি আর ছোটগল্প পড়েছি তখন, রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করার পর যেটা আমার মনে হয়েছে এবং রবীন্দ্রনাথ নিজেও যেটা বলে গেছেন যে, তার গান আর ছোটগল্পের জন্যই তিনি টিকে থাকবেন। আমার কাছেও মনে হয়, ছোটগল্প আর গানের ভুবনের জন্য তিনি চির অমর হয়ে থাকবেন। আর হ্যাঁ, চিঠি! রবীন্দ্রনাথ অজস্র চিঠি লিখেছেন— নানা স্তরের লোকদের, আত্মীয়-অনাত্মীয়দের— আর সেখানে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্ব, ব্যক্তিত্বের স্তর— একেকটি করে আমার নিজের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।

হামিদ কায়সার: আপনিতো দেখছি রবীন্দ্রনাথের চিঠির মুগ্ধ পাঠক!
আবু রুশদ: ওই চিঠিতেই তো প্রকৃতভাবে খুঁজে পাওয়া যায় মানুষ রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথ লোকটি কেমন ছিলেন সেটা বুঝতে পেরেছি চিঠির মাধ্যমে। চিঠিগুলোতে সাংসারিক কথা আছে, শরীর খারাপ হওয়ার কথা আছে। পারিবারিক দুঃখের কথা আছে, জমিদারি চালানো কত কষ্ট সে কথা আছে, শান্তিনিকেতন নিয়ে তার দুশ্চিন্তার কথা আছে, শান্তিনিকেতনকে কি করে আরো ভালো বিদ্যাপীঠ করা যায় সেটা তিনি বলেছেন চিঠিতে, তার নোবেল প্রাইজের টাকাটা ওখানে দিয়েও শান্তিনিকেতনের জন্য আরো টাকা কোত্থেকে আসবে কোত্থেকে যোগাড় করবেন সে চিন্তা করেছেন। তাই সেখানে তিনি মানুষ, পরিবারের কর্তা, শান্তিনিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা এবং জমিদারি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য বিশেষ করে তার আগ্রহ, তার প্রচেষ্টা, তার স্ত্রী কাদম্বিনী দেবীর সঙ্গে তার সম্পর্ক, মৃত্যু, রথীন্দ্রনাথকে নিয়ে আশা এবং কিছুটা নিরাশা, পরে ওকে কৃষিবিদ্যা শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠালেন, বন্ধুবান্ধবরা কিভাবে তাকে আঘাত করলো, তার বইয়ের প্রকাশনা নিয়ে অযথা কেন বিলম্ব হলো— এইসব ধরনের কথা তিনি অকপটে বলে গেছেন। যা তার গানে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে এমনকি স্মৃতিকথাতেও নেই— মানুষ রবীন্দ্রনাথ এই চিঠিতে সমগ্রভাবে উপস্থিত। সেজন্য, আমি বলি যে, রবীন্দ্রনাথ বলতেই আমি তার ছোটগল্প, গান এবং চিঠিকেই বুঝি। আমি তো রবীন্দ্রনাথের নির্বাচিত গান এবং নির্বাচিত কবিতা ইংরেজিতেও অনুবাদ করেছি এবং সেসব অনুবাদ আদৃতও হয়েছে।

হামিদ কায়সার: আপনার নিজের লেখালেখির কথা যখন উঠলই, এ প্রসঙ্গে জানতে চাচ্ছি বই পড়তে পড়তেই কি আপনি লেখালেখিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন?
আবু রুশদ: পড়তে পড়তে লিখতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি কিনা সরাসরি বলতে পারব না। তবে টলস্টয়, তুর্গেনিভ, দস্তয়ভস্কি, টমাস মান যখন পড়ছিলাম তখনকারই কথা— তখন কলকাতার রাস্তায় নানান দৃশ্য দেখি, কলকাতা তখন ছোট শহর ছিল, ছোট ঠিক না, সেই সময় তের লাখ লোক থাকতো মাত্র, রাস্তা কেমন ঝকঝকে পরিষ্কার ছিল, ব্রিটিশদের জামানা, গড়ের মাঠ, চৌরঙ্গী, পার্ক স্ট্রিট, সিনেমা দেখতাম ইংরেজি সিনেমা, এসব করে করে এবং এই আবহাওয়াতে জড়িয়ে পড়ে মনে হলো যে, যা যা দেখছি চারিদিকে এসব নিয়ে কিছু একটা লেখা যায় কিনা। কিন্তু যেটা প্রথম লিখলাম, সেটা একেবারে আমার অভিজ্ঞতার বাইরের জগত, কল্পনার উপর আশ্রয় করে লেখা। গল্পটা লেখার তাড়না উসকে উঠার পেছনে অবশ্য আরেকটি ঘটনা আছে। তা হলো, আমার আরেক চাচা টাটা কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সেখান থেকে নানা রঙ-এর কাগজ— কোনোটি বেগুনি, কোনোটি লাল, কোনোটি গোলাপী, কোনোটি একটু সবুজ, উনি সেসব কাগজ বাইরে বিক্রি করতেন। একদিন ওই সব রঙিন কাগজ নিয়ে উনি আমাদের বাসায় এলেন, আমি সেই কাগজের দিকে তাকিয়ে আছি দেখে চাচা গোলাপি রং-এর এক দিস্তা কাগজ আমাকে দিয়ে দিলেন, সেই কাগজটা এতটাই নয়নাভিরাম ছিল যে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, কিভাবে এটার সদ্ব্যবহার করতে পারি। পরে ভাবলাম, গল্প যখন লেখার চিন্তা করছি এ কাগজেই লিখব। তৎক্ষণাৎ বাড়ির ছাদে গিয়ে নির্জনে বসে গল্প লিখতে শুরু করে দিলাম। লেখা যখন শেষ হয়ে গেল তার কিছুক্ষণ পরই ছাদে এসে হাজির হলেন হুমায়ুন কবীর। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি করছো, দেখি?’ তিনি আমার হাত থেকে একরকম গল্পটা কেড়ে নিয়ে ছাদেই পায়চারি করতে করতে পড়ে ফেললেন। তারপর বললেন, ‘তুমি লিখতে পারবে, লিখো। কিন্তু, তুমি যে জিনিসটা জানো না, সে জিনিস নিয়ে কখনো লিখো না’— ওর কথাটা আমার খুব মনে ধরলো। তারপর থেকে, আশেপাশে সবকিছু মনোযোগের সঙ্গে দেখি— আমার পারিবারিক জীবন কিরকম, বন্ধুবান্ধব কিরকম, কলকাতা কিরকম, খেলাধুলা আমোদপ্রমোদ সবকিছুই দেখি। তারপর, বছর তিন পরে আরেকটা গল্প লিখে ফেললাম কল্পনা আর বাস্তবতার সমন্বয়ে। সেটা মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ বাহার-এর সম্পাদিত মাসিক ‘বুলবুল’ পত্রিকায় দিয়ে এলাম। পরের মাসেই দেখলাম গল্পটি ছাপা হয়েছে। গল্পটির নাম ছিল ‘অথর্ব’। ওটি আমার ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘রাজধানীতে ঝড়’-এ স্থান পেয়েছে।

হামিদ কায়সার: আপনার জীবনের একটি পর্ব অর্থাৎ ছাত্রাবস্থায় আপনার বইপড়া সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি— এবার কর্মজীবনের কথা বলুন।
আবু রুশদ: আমি কর্মজীবন বাছাই করেছিলাম এভাবে, যাতে আমার লিখবার সময় পাই এবং আমার সাহিত্যিক জীবনটা যেন বিকশিত হতে পারে। তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতী মুসলমান ছাত্র হিসেবে এবং আধুনিক মুসলিম সমাজের সম্ভাবনাময় লেখক হিসেবে আমি বেশি মাইনের একটি চাকরি পেয়েছিলাম। তখনকার যুগে তো বেশ ভালো মাইনের চাকরি ছিল— কিন্তু, সে প্রলোভনটা আমি জয় করতে পেরেছিলাম, কারণ আমি দেখলাম, ওই চাকুরিটা নিলে আমার লেখা এবং পড়ার বিঘ্ন হবে। তাই, শিক্ষা বিভাগে সরকারি একটি প্রভাষকের পদ পেয়ে গেলাম। তারপর শিক্ষার সাথে জীবন জড়িয়ে গেল। এই অধ্যাপনার পেশা আমাকে লেখা এবং পড়ার অঢেল সুযোগ করে দিয়েছে। তখন আমি নিজে যেমন লিখতাম, আমার সমসাময়িক মুসলিম সমাজে যারা আধুনিক ধারায় লেখালেখি শুরু করেছিলেন তাদের লেখাও পড়তাম নিয়মিত।

হামিদ কায়সার: এই লেখকদের সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি বিশেষ করে মুসলিম সমাজের আধুনিক সাহিত্যের ধারাটি কিভাবে বিকশিত হয়ে উঠলো সে বিষয়ে—
আবু রুশদ: প্রথমে আমি, বয়স হিসেবে না, বই বা লেখার প্রকাশকাল হিসেবে বলছি— প্রথমে আমি, এরপর শওকত ওসমান লিখতে শুরু করে, পরে এলো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। দেশ বিভাগের পরেই তার প্রথম বইটা বেরিয়েছিল, আর আমার বইটা বেরিয়েছিল আরো আট বছর আগে সেই ১৯৩৯ সালে। কবিদের মধ্যে ছিলেন আহসান হাবীব, গোলাম কুদ্দুস, ফররুখ আহমদ, আবুল হোসেন এবং পরে সৈয়দ আলী আহসান। এই আমাদের তখনকার সহিত্যিক পরিমণ্ডল— আমরা যারা মোটামুটি এক বয়সী। আমরা পরস্পরের লেখা পড়তাম, আলোচনা করতাম। গোলাম কুদ্দুস আমার প্রথম উপন্যাস ‘এলোমেলো’ সম্পর্কে আলোচনা লিখেছিল।

হামিদ কায়সার: আপনার বইপাঠের দ্বিতীয় পর্বের কথা জানতে চেয়েছিলাম—
আবু রুশদ: ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স এবং এমএ পড়ার সময় শেক্সপীয়রকে গভীরভাবে জানার সুযোগ পাই। আর অক্সফোর্ডে আমি দুবছর পড়েছিলাম। তখন আবার শেক্সপীয়র সম্পর্কে নিজেকে ঝালাই করেছি। শেক্সপীয়র সত্যিই বিশ্বসাহিত্যের এক সেরা প্রতিভা। আমি শেক্সপীয়রের এতটাই অনুরক্ত যে, যারা ইংরেজি পড়তে পারে না তাদের জন্য ‘শেক্সপীয়র নির্যাস’ নামে একটি বই লিখেছি, যা এবছরই প্রকাশিত হয়েছে।

হামিদ কায়সার: শেক্সপীয়রের পর আর কোন্ লেখকরা আপনার পাঠ্যে বারবার এসেছে এবং মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাদের লেখা পাঠ করেছেন?
আবু রুশদ: টলস্টয়, দস্তয়ভস্কি, তুর্গেনিভ— তিনজনই রাশান। জার্মানির টমাস মান, ফ্রান্সের রে‌্যামারোঁলো, টলস্টয়ের ‘ওয়ার এন্ড পিস’, ‘আনা কারেনিনা’, ‘রেজারেকশন’, দস্তয়ভস্কির ‘ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট’, ‘গ্যামব্ল্যার’, তুর্গেনিভের ‘ফাদার এন্ড চিলড্রেন’, রঁম্যা রোলাঁর ‘জা ক্রিস্তফ’, টমাস মানের ‘দি ম্যাজিক মাউন্টমেন্ট’ এগুলো খুব উঁচু পর্যায়ের উপন্যাস। এছাড়া গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কুইজের উপন্যাসও পড়েছি। নতুন একটি ফর্ম তিনি তৈরি করে দিয়েছেন— যাদু বাস্তবতা। সেই যাদু বাস্তবতাকে আমাদের সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার উপন্যাসে প্রয়োগ করেছেন। আমি ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ বেশ কয়েক মাস আগে পড়েছি।

হামিদ কায়সার: কেমন লেগেছে খোয়াবনামা?
আবু রুশদ: ‘খোয়াবনামা’ আমাদের কথাসাহিত্যে অবশ্যই একটি মূল্যবান সংযোজন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই— নতুন একটা জিনিস। তবে এতে কিছুটা অসুবিধাও আছে। কাহিনির গতিটা একটু মন্থর। ভাষাটাতেও সেই অনুযায়ী ঠিক গতানুগতিক প্রথা অবলম্বন করা হয়নি। তার নিজের একটা বিশেষ ভঙ্গি তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। তাতে ঐ ভঙ্গিটা এসেছে বটে, কিন্তু অসুবিধা হয়েছে যে লেখকের উপস্থিতি উপন্যাসে বেশ প্রখর। এটা কিন্তু হওয়া ঠিক নয়, কারণ প্রত্যেক কথাশিল্পেই লেখকের একটি নৈর্ব্যক্তিকতা থাকে। এখন আপনাকে নিয়ে গল্প লিখতে গিয়ে যদি আমার ভাবনা-চিন্তা সব আপনার মধ্যে ঢুকিয়ে দেই, তাহলে তো সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। আরেকটা জিনিস আমার মনে হয়েছে, পাকিস্তান আন্দোলনের যে খণ্ড খণ্ড কিছু ছবি আছে, তার সঙ্গে উপন্যাসের প্রধান তিনটি চরিত্রের জীবন সম্পৃক্ত হতে পারে নি। এই প্রধান চরিত্রের জীবন— এর বাইরে এবং ঊর্ধ্বেই রয়ে গেছে। কিন্তু, সব মিলিয়ে যদিও উপন্যাসটি পড়তে বেশ বেগ পেতে হয় এবং মাঝেমধ্যেই ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে, তারপরও এই যে তিনি উত্তর-পশ্চিম বাংলার আবহÑ ওই অঞ্চলের চাষা, মাঝি— ওদের দৈনন্দিন জীবন, নিসর্গ— ওদের ঘিরে যেটা আছে, তারপর ওইসব রীতি, প্রথা, অভ্যাস, কুসংস্কার জীবনের সম্মিলিত প্রকাশ এ সমস্ত খুব বিশ্বস্তভাবে লিখেছেন। এটাও তো একটা মস্ত জিনিস। এতো পরিধি আর বিস্তৃতির মধ্যেও তিনি কখনও তার এই কব্জা থেকে কোনো কাহিনী আর চরিত্রকে বিচ্যুত হতে দেননি— এই দুই একটি উদাহরণ ছাড়া। সেই অর্থে, এটি আমাদের সাহিত্যে একটি মূল্যবান সংযোজন। তবে, এটি তেমন জনপ্রিয় হবে বলে আমার মনে হয় না— যেসব কারণগুলো উল্লেখ করা হলো, সেগুলোর জন্য।

হামিদ কায়সার: আপনার সমসাময়িক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, শওকত ওসমানসহ পরবর্তীকালের অন্যান্য কাদের লেখা আপনার ভালো লেগেছে?
আবু রুশদ: ওয়ালীউল্লাহ এবং শওকত ওসমানের উপর আমার একটি বই আছে। সেখানে আমি সবিস্তারে লিখেছি। ঔপন্যাসিক হিসেবে ‘লালসালু’র জন্যই আমি ওয়ালীউল্লাহকে সাধুবাদ দেব। এটা সফল উপন্যাস। সন্দেহাতীতভাবে, ‘চাঁদের অমাবস্যা’ এবং ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং উপাদান আছে ঠিকই। কিন্তু, সামগ্রিকভাবে ‘চাঁদের অমাবস্যা’ আমার কাছে খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য কাহিনী বলে মনে হয় না। উপন্যাসের প্রথম শর্তই হলো বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। ওটা যদি না থাকে উপন্যাস আর এগোতে পারে না, ওটা পার না হতে পারলে উপন্যাস মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। আমার মনে হয় ‘চাঁদের অমাবস্যা’ এবং ‘কাঁদো নদী কাঁদো’তে সেই ঝুঁকি লেখক নিয়েছেন। তবে, শৈল্পিক চাতুর্য, বৈচিত্র্যময়তা ইত্যাদি সব মিলিয়েই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে আমাদের একজন প্রধান ঔপন্যাসিক হিসেবে বিবেচনায় আনতে হবে।

হামিদ কায়সার: আর শওকত ওসমান?
আবু রুশদ: শওকত উপন্যাসের ৩টি উপন্যাস জননী, ক্রীতদাসের হাসি এবং একটু স্বল্প-পরিচিত ‘পতঙ্গ পিঞ্জর’ ভালো। তার দশ-বারোটি ছোটগল্প খুবই ভালো, তো এ ৩টি উপন্যাস এবং ওই দশবারোটি গল্পের জন্যই তাকে আমাদের দেশের একজন প্রধান লেখক হিসেবে গণ্য করতে হবে।

হামিদ কায়সার: এতো গেল সমসাময়িকদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য, পরবর্তীকালে আর কাদের লেখা আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে?
আবু রুশদ: শওকত আলীর যেটুকু পড়েছি ভালো লেগেছে। তার ‘প্রদোষে প্রকৃতজন’-এ সে-সময়ের সত্য ছবিটা এসেছে। তার ছোটগল্প আমি তেমন পড়িনি, উপন্যাসই দুএকটা পড়েছি, তাতে মনে হয়েছে, ও একজন শক্তিশালী লেখক। মাহমুদুল হকের শুধু ‘জীবন আমার বোন’ পড়েছি। ভাবী আর খোকার সম্পর্কের বিশ্লেষণটিকে আমার স্বাভাবিক মনে হয়নি। রশীদ করীম অবশ্য এ বইটির প্রশংসা করে আলোচনা লিখেছেন। রশীদ করীম নিজে শুধু কয়েকটি গল্প লিখেন নি, প্রসিদ্ধ ঔপন্যাসিকও বটে। কলাম, প্রবন্ধ, সমালোচনা ইত্যাদি লেখাতেও তার হাত ভালো। সৈয়দ শামসুল হক আমাদের একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক, হাসনাত আবদুল হাইয়ের কয়েকটি ছোটগল্প ও ভ্রমণকাহিনী আমি আগ্রহের সঙ্গে পড়েছি। হাসান আজিজুল হক আমাদের শ্রেষ্ঠ গল্পলেখকদের মধ্যে অন্যতম। কয়েক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি একটি এপিকধর্মী উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছেন। তার বইটি বেরুলে আমি সেটা আগ্রহের সঙ্গে পড়ার জন্য অপেক্ষা করছি। এরপরের লেখকদের মধ্যে মঞ্জু সরকার, জাফর তালুকদার, আরো কিছুটা পরের লেখিকা নাসরীন জাহান এদের কিছু কিছু লেখা আমি পড়েছি— তো, এই তিনজনের লেখার মধ্যে আমি শক্তি এবং প্রতিশ্রুতি দুটোই পেয়েছি। হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলনকে লেখক হিসেবে কোনোভাবেই নাকচ করা যায় না। কাহিনি আছে, চরিত্রায়ন আছে— কিন্তু ওদের অসুবিধেটা হলো, ওরা একটা ছকের মতো করে নেয় যে, এতো পৃষ্ঠার উপন্যাস, এতগুলো চরিত্র থাকবে এবং এটা সেই পরীক্ষিত ছক— যে ছকে লিখলে বই প্রচুরভাবে বিক্রি হয়। এতে করে এটা মনে হয় যে, ভেতর থেকে শিল্পীর আর্তি, আরো ভালো কিছু লেখার যে তৃষ্ণা সেসবের যেন ভাটা রয়েছে তাদের মধ্যে। কিন্তু সব-মিলিয়ে তাদেরকে নাকচ করা যাবে না। তারাও আমাদের উপন্যাস সাহিত্য পরিপুষ্ট করেছেন। ইদানীং জনপ্রিয় লেখক হিসেবে আরেকজনের খুব নামটাম শুনছি মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তার কোনো লেখা অবশ্য আমি পড়িনি।

হামিদ কায়সার: আপনার পাঠরুচি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
আবু রুশদ: আমি উচ্ছ্বাস, সস্তা এবং ভাবপ্রবণতা ইত্যাদিকে পরিহার করে চলি। এখন যারা লিখছেন, বিশেষ করে পশ্চিম বাংলায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু, সমরেশ মজুমদার, বুদ্ধদেব বসু— প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু লেখা তো পড়েছি— কিন্তু মানিক, বিভূতি, তারাশংকর— ঠিক এদের গোত্রের লেখক বলে কাউকে মনে হয়নি— এরা একটা জিনিসকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে যা কিনা দশবারোটা লাইনেই আনা যেত, তা দিয়ে তারা উপন্যাস লিখে ফেলেন। আর ঐ মাসী, পিসি ওদের হিন্দুসমাজের আচার-রীতির বাইরে আন্তর্জাতিকতা বলে কিছু নেই। এ ধরনের লেখা আমার পছন্দ হয় না। আমি পছন্দ করি সেই ধরনের লেখা, যাতে বিশ্বস্ততার পরিচয় আছে, শৈল্পিক দক্ষতা আছে এবং নির্দিষ্ট পরিধির গণ্ডি পেরিয়ে যেটা আন্তর্জাতিকতামুখী— তবে কোনোভাবে চাপিয়ে দেওয়া আন্তর্জাতিকমুখীনতা নয়, সেটা আসতে হবে কাহিনি এবং চরিত্রগুলোর ভেতর দিয়ে। এ ধরনের লেখাই আমি পছন্দ করি। তবে আমার পাঠরুচির কথা তো হলো, এবার এখনকার পাঠকদের পাঠরুচি সম্পর্কে আমার কিছু কথা আছে। আমাদের পাঠকরা এখন সাংঘাতিক রকম একটা বিভ্রান্তির মধ্যে আছে। এ বিভ্রান্তির প্রধান কারণ হলো, হুমায়ূন আহমেদ এবং ইমদাদুল হক মিলনের প্রবল জনপ্রিয়তা। এখনকার পাঠকদের রুচি এদের দুজনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে এবং কেউ এদের বাইরে যেতে চায় না। এটার দরুণ, আমাদের বই তেমন বিক্রি হয় না, আর বই যদি বিক্রি না হয়, তাহলে তো প্রকাশকরা উৎসাহ দেখাবে না, লেখকরা কিছুটা হতাশা বোধ করবেন— লিখবো, কার জন্য লিখবো? তো এটা কাটিয়ে ওঠা একান্ত দরকার। আমাদের তরুণ-সমাজকে সাহিত্যের সমগ্রতার সঙ্গে পরিচয়ের ব্যবস্থা করে দিতে হবে যাতে, একটি নির্দিষ্ট গণ্ডি এবং বৃত্তের ভেতরে কেউ এবং সমাজ যেন পড়ে না থাকে।

হামিদ কায়সার: সম্প্রতি আপনি কি কি বই পড়েছেন?
আবু রুশদ: আমি সম্প্রতি, এই গত দুমাসে একেবারে সাম্প্রতিকালের তরুণদের লেখা পড়েছি। এরা খুবই তরুণ। মাহবুব কবিরের বইটা কবিতার ‘কৈ ও মেঘের কবিতা’ আমার ভালো লেগেছে। মাহমুদা আক্তারের ‘শ্বেতহংসীর কান্না’ পড়েও ভালো লেগেছে।

হামিদ কায়সার: এটা একটি ভালো দিক, আপনি প্রবীণ হয়েও একেবারে তরুণদের লেখাও যত্ন করে পড়েন।
আবু রুশদ: আমি তরুণদের লেখা সব সময়ই মনোযোগ দিয়ে পড়ি এবং তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য লিখিও বিভিন্ন কোলাজ কলামে— এখন কেউ যদি বলেন এখনকার তরুণরা কেউ কিছু লিখতে পারছে না, সেটা আমার মতে খুব একটা গ্রহণযোগ্য হবে না— তরুণরা কে কেমন লিখছে, খুঁজে বের করো, ভালো হলে প্রশংসা করো, তাহলেই তো তারা উৎসাহিত হবে— আর, এভাবেই তো সাহিত্য গড়ে উঠে, প্রসারিত হয়— আমরা কখনো কেউ কারোর লেখার প্রশংসা করি না, প্রত্যেকেই নিজের বৃত্তে আটকা— সেটা থেকে বেরোতে চাই না। এবং প্রত্যেকেই মনে করে যে, সে নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং এর বাইরে আর কোনো তাৎপর্যপূর্ণ কাজ হচ্ছে না। তরুণদেরকে সবসময়ই উৎসাহ দিতে হবে। তরুণদের লেখা ছাড়াও পড়েছি অরুন্ধতি রায়ের ‘দি গড অফ স্মল থিংস’। আমার ভালো লাগেনি। ইংরেজিতে ভারতের যারা লিখছেন তাদের মধ্যে বিক্রম শেঠ-ই সেরা। তার ‘এ সুইটেবল বয়’ ছাড়া আর যেসব বই ইংরেজিতে লেখা হয়েছে সবই এ অঞ্চলের দৈন্যকে তুলে ধরার জন্য, পাশ্চাত্যকে খুশি করার জন্য। বিক্রম শেঠের এই ‘এ সুইটেবল বয়’ এপিকের মর্যাদা পাওয়ার দাবীদার।

 

২ অক্টোবর, ১৯৯৭, দৈনিক সংবাদ