ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশের কলরেট ভারতের চেয়ে পাহাড় সমান

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : আগস্ট ১৫, ২০১৮

সিমে ৪৫০-৫০০ টাকা রিচার্জ করলে টানা ৯০ দিন যে সেবা পাওয়া যায়, প্রতিদিন ১.৫ জিবি ইন্টারনেট আর সাথে ২৪ ঘণ্টা সারাদেশের যে কোনো মোবাইল নম্বরে লোকাল কল একদম ফ্রি। এছাড়া ১৪৯-২০০ টাকা রিচার্জে ২৮ দিনের যে সেবা পাওয়া যায় তা হলো, প্রতিদিন ১.৫ এবং লোকাল কল ফ্রি। আরো সহজ করে বললে, ১৫০ রুপিতে ২৮ দিনে পাওয়া যায় ৪২ জিবি ইন্টারনেট এবং আনলিমিটেড কল।

হ্যাঁ, এটা ভারতের মোবাইল ইন্টারনেট এবং মোবাইল কলিং সেবার মূল্য। প্রায় সব মোবাইল অপারেটর একই ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। অপারেটর ভেদে টাকার পরিমাণ সামান্য এদিক-সেদিক হয়। নেট স্পিড ফোর জি বলতে যা বোঝায়, সেটাই এখানে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে নতুন করে মোবাইল কল রেট বাড়ানো হয়েছে। ইন্টারনেট সেবার মান ফোর জি বলা হলেও টু জি-থ্রি জি পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের দেড় জিবি ইন্টারনেট নিতে লাগে তিনশো টাকার কাছাকাছি। ১০ জিবি নিতে লাগে দেড় হাজার টাকার কাছাকাছি! প্রশ্ন হলো, এত তফাত কেন প্রতিবেশী দুই দেশে? ভারতের তুলনায় আকাশ-পাতাল দামের তফাত কেন? শুধুই কি দুই দেশের আইটি সেক্টরের মানের উন্নয়নের কারণেই এই তফাত, নাকি অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে?

উত্তর খুঁজতে বাংলাদেশের আইটি সেক্টর নিয়ে একটু পড়ছিলাম। গণমাধ্যমের একটা বক্তব্য পড়ার পর প্রায় সবই পরিষ্কার হলো। টেলিযোগাযোগ ও আইসিটিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইত্তেফাককে বলেন, “মোবাইল ফোন অপারেটরদের বারবার বলা হচ্ছে, কিন্তু তারা কেয়ার করছে না। ইন্টারনেট সেবার মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এখন যা ইন্টারনেট মেলে তাদের সন্তুষ্ট হওয়ার মতো কিছু নেই। প্রত্যেক গ্রাহকই ইন্টারনেট সেবা নিয়ে অপারেটরদের উপর ক্ষুব্ধ।”

একটা দেশের টেলিযোগাযোগ ও আইসিটিমন্ত্রী যখন নিজেই বলেন তার কথার কেয়ার করে না বেসরকারি কোম্পানিগুলো, তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, দেশে দক্ষ আইটি মন্ত্রী নাই। আর এরাই নাকি ফাইভ জি, স্যাটেলাইট চালাচ্ছে! এবার ২০১৫ সালের একটা খবরে চোখ রেখে কথা শেষ করা যাক, ভারতের কাছে ব্যান্ডউইথ রফতানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ভারতের কাছে ব্যান্ডউইথ রফতানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ব্যান্ডউইডথ রফতানি করে বছরে একশো কোটি টাকা আয় হবে দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল)। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে উভয় দেশের মধ্যে।

এখন আমার কথা হলো, পাহাড় সমান দামে বাংলাদেশের মানুষকে যেখানে বাজে সেবা কিনতে হয়ে, সেখান ব্যান্ডউইথ রফতানি তো রীতিমতো হাস্যকর এবং অবান্তর!

লেখক: কবি, কলামিস্ট, কার্টুনিস্ট ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী