চিত্রকর্ম: আফ্রিদা তানজিম মাহী

চিত্রকর্ম: আফ্রিদা তানজিম মাহী

দ্য আই

পাপিয়া জেরীন

প্রকাশিত : অক্টোবর ১৭, ২০১৮

আজকে আমি যে বিষয়টা নিয়া বলতে আসছি, সেইটার বিষয়ে আমি বেশি কিছু জানি না। আসলে আমি জানতে চাইনা। এইটা নিয়া কথা বলতেও আমি বাধাপ্রাপ্ত হইছি কয়েকবার।

আফ্রিদা তানজিম মাহী (জানি না বানান ঠিক আছে কিনা) যখন মারা গেল, তখন আমি খুব ভয় পাইছিলাম। ওর আঁকা ছবিগুলা আমারে ভয়ের শেষপ্রান্তে নিয়া গেছিল। সবাই দুঃখ পাইছে, আর আমি ভয় পাইছি।

খুব ছোটোবেলায় যখন আমি স্কুলেও ভর্তি হই নাই, তখন আমি চক, মাটির ঢেলা, কলম, পেন্সিল, কাঠি দিয়া শ্লেটে-দেয়ালে-কাগজে-মাটিতে একটা জিনিসই আঁকতাম, আর সেইটা হইলো, চোখ।

কেউ কখনো মানা করে নাই। একদিন শুধু সবুজ খালু বলছিলেন, এইটা কি `আই অব হোরাস?` আমি বুঝি নাই তখন, উনি তখন দেখাইছিলেন, শুধু শুধু একটা চোখ আঁকার মানে নাই। হোরাস এর চোখ আঁকতে হইলে অনুপাত জানা লাগবে। মণির অনুপাত, সাদা অংশের, ভুরুর অনুপাতও। উনি একঅর্থে আমারে উদ্দশ্যহীন চোখ আঁকতে কড়াভাবে নিষেধ করছিলেন। পরে এইটা নিয়া আর কিছু মনে নাই।

বড় হওয়ার পর হঠাৎ একদিন ওই সবুজ খালুই আমার খাতায় আবিষ্কার করলেন, হাজার হাজার চোখ। উনি আমারে বললেন, দেখো এই বিষয়টা নিয়া আমি কথা বলতে চাইছিলাম না। কিন্তু প্লিজ গোপনে বলো, তুমি কি স্লেভ? আই মিন স্লেভ অব স্যাটান?

আমি আকাশ থেকে পড়লাম। তিনি আবারও ফিসফিস করে জানতে চাইলেন। আমি তাকে সত্য কথাটাই বললাম, আমি আসলে এইটা আনমনে আঁকি। কোনো কথা শুনতে গেলে, ক্লাশ লেকচারের সময়, ফোনে কথা বলতে গিয়া...। আঁকার সময় টেরই পাই না যে, চোখই আঁকতেছি। তারপর উনি আমারে বিষয়টা থেকে বের করার জন্য অনেক হেল্প করলেন, সেইটা এইখানে না বলাই ভালো।

আমি বলতেছিলাম চিত্রকর তানজিম মাহীর কথা, এ বিষয়ে বলতেও গায়ে কাঁটা দিতেছে। এই বাচ্চা মেয়েটার একটা ছবি দেখে আমি নিশ্চিত হইছি, সে আসলে মৃত্যুর আগে কী এক্সপেরিয়েন্স করছে। ওর একটা ছবিতে দেখা যায়, স্যাটানের কাছে আত্মা বিক্রির কথা বলছে। ওর যদি মৃত্যু না হইতো তাইলে আমরা এই আর্টওয়ার্কটারে নরমাল এন্টিখ্রাইস্ট ম্যাটেরিয়াল হিশাবে নিতে পারতাম।

আফ্রিদা তানজিম সেই ছবিতে স্যাটানের কাঁধের উপর দিয়া হাত নিয়া একটা পয়সা ধরে রাখছে। এইটার ক্যাপশনও ছিল এই রকম, I sold my soul to the devil to protect myself from the chaos.

তার আরো অনেক ছবিতে চোখের ব্যবহার খেয়াল করবেন। সবাই হয়তো ভাববেন এইটা, All seeing eyes of God. আসলে এইটা সেই চোখ না, যেইটা ৩১০০ খ্রি. পূর্বে মিশরীয় হোরাসের চোখও। রেনেসাঁর সময়ের সেই চোখও না এইটা।

দ্য ফাদার-দ্য সন-দ্য হলিস্পিরিটের ট্রিনিটির তিন বাহুঅলা সেই কথিত ঈশ্বরের চোখও না। আপনিই বলেন, খ্রীস্ট ধর্মে-ইসলামে-বৌদ্ধ ধর্মে কিংবা সনাতন ধর্মে এক চোখের কোনো ঈশ্বর আছে? নাই।

তবে ফ্রিমেসন্সরা এই `The all seeing eye of God` রে কোনো প্রতীক হিশাবে ব্যবহার করছেক, তা আমি জানি না। দজ্জালের কথা কিছুটা জানি। দজ্জাল বা দ্য ফল্স ম্যাসাইরে মেনে চলার মতো একটা সিক্রেট সোসাইটি আছে, এরা অশরীরী জগতের সাথে যোগাযোগ করতে চায়। দজ্জাল এক চোখ বিশিষ্ট, ওর ডান চোখ অন্ধ। এই দজ্জাল ক্যাপশন ইউজ করে এক চোখ আঁকা একটা টিভির ছবিও মাহী আঁকছে।

তার অনেক ছবিতে আপনি একক চোখ পাবেন। কোথাও স্পস্ট, কোথাও লুকানো। বেশিরভাগ চোখ ট্রিনিটি দিয়া প্রোটেকটেড না। আমি জানি না, তানজিম মাহী ফ্রিমেসন্স দিয়ে প্রভাবিত হইছিলো কিনা। সে কোনো সিক্রেট সোসাইটি দিয়ে প্রভাবিত হয়ে বলির শিকার হইছিল কিনা।

আপনারা বা মাহীর মা হয়তো এইটারে নিছক আত্মহত্যা মনে করতেছেন, কিন্তু এইটা একটা হত্যাকাণ্ড। সবশেষে বলতে চাই, ঈশ্বর ওমনিশিয়েন্ট এবং ওমনিপ্রেজেন্ট। যে ঈশ্বর সর্বদ্রষ্টা সে কখনও এক চোখবিশিষ্ট হইতে পারে না। আপনার সন্তান বা আত্মীয় যদি অনবরত ‘The all seeing eye of God’ আঁকতে থাকে, তার বিষয়ে মনযোগ দেন। তাকে কোনোভাবেই একা থাকতে দেবেন না। তবে ইজিপ্সিয়ান চোখের বিষয়ে তেমন সমস্যা নাই।

কথা শেষ করতে গিয়েও সমর দাদুর কথা মনে পড়লো, তিনি প্রতিমা বানান। তিনি বলছিলেন, `দেখো মা, চোখের বিষয়ে সাবধান। সব ধর্মই তা বলে। দেখো তোমাগো ধর্মে ঘরে চোখ বা চোখঅলা কিছু থাকলে নামাজ হয় না, আবার আমরাও প্রতিমায় দেখো আগেই চোখ আঁকি না... চোখ সবার শেষে। চোখ খুব গুরুতর বিষয়!`