সংগৃহিত

সংগৃহিত

দ্য গ্রেট থিফ

পর্ব ৫

মুনতাসির মামুন

প্রকাশিত : মে ১৩, ২০১৮

“কী খবর ভাইয়া, ক্যামন আছো?”

“ভালো,কিন্তু আপনি কে?”

“আমি তোমার রুম্মন ভাইয়ার ফ্রেন্ড...উনি তোমাকে সপ্তাহে কয়দিন পড়ান,বলোতো।”

“তিনদিন,কেন?”

“বলছি,কোন কোন দিন?”

“শনি-সোম-বুধ।”

“তার মানে, গত সোমবার উনি তোমাকে পড়াতে গিয়েছিলেন?”

“হুমম।”

“গুড, চলো, একটা আইসক্রিম খাই।”

“না, না...আমি অপরিচিতের দেয়া জিনিস খাই না।”

“আরে, মিয়া আমি কি অপরিচিত নাকি...আমি তোমার রুম্মান ভাইয়ার ফ্রেন্ড!”

“আরে, চলো তো!”

“তাইলে, রুম্মান সোমবার তোমারে পড়াইতে আইছিলো?”চকবারে কামড় বসাতে বসাতে ছেলেটার দিকে তাকালো মান্নান মিসৌরী।

“হুমম।”বেশ তৃপ্তি করেই চুষছে ছেলেটা আইসক্রিম।

“কয়টার সময় সেটা, খেয়াল আছে?”

“উমমম...৬:৩০টা হবে।”

“আর, চলে গেছেন কয়টায়?”

“নট শ্যোর, সাড়ে সাতটা থেকে পৌনে আটটার আশেপাশে হবে।”

কীহ্!চিন্তায় ডুবে গেল মান্নান।

“কী ভাবছেন,ভাইয়া?” ছেলেটার প্রশ্নে সৎবিৎ ফিরে পেল সে।

“নাহ, কিছু না...তুমি খাও।”মৃদু হেসে ওকে আশ্বস্ত করে আবার চিন্তায় ডুবে গেল সে। আলিয়াপুর থেকে ভদ্রা বড়জোড় ২০ মিনিটের রাস্তা, রিকশা করে...আর, রুম্মন বেশিরভাগ সময়ই রিকশায় যাতায়াত করে। ও বলেছিল, ও ৫:৩০ টায় বাসা থেকে বেরিয়েছে এবং সিসিক্যাম ফুটেজও তাই বলছে...তাহলে যেতে এতো দেরী হলো কেন?টিউশনীতে যাবার আগে কি ও অন্য কোথাও গিয়েছিল?

 

 

“তুই আমার স্টুডেন্টরে ধইরা জিজ্ঞাসাবাদ করসিস? তোর কি আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না?”

“বিশ্বাস হইবো না ক্যান, মাগার তুমি আমারে এইডা কও...তুমার আধঘন্টা আগে বাইর হইয়াও টিউশনিত যাইতে এতো দেরী হইলো ক্যারে?”

“আমার অন্য কাজ থাকতেই পারে, সেটা আমার তোকে বলা লাগবে নাকি!”

“না,কইতে না চাইলে কমু ক্যান...মাগার, কইলে আমার একটু সুবিধা হইতো, এই আরকী!”

“আমার কাজের সাথে তো এই ঘটনার কোনো লেনা-দেনা নাই...নাকি, তুই করতেসিস, আছে?”

“কখন যে কুন ঘটনা কুনটার লগে লিংক আপ হয়া যায়, হেইডা আগে থেইক্কা কওয়া খুব মুশকিল...হেইল্লাইগ্যা একটা ঘটনা, হেইডা বাইরে থেইকা যতই বিচ্ছিন্ন মনে হউক না ক্যান...জাইনা রাখা ভালো। আচ্ছা,থাউক, তুই যখন কবি না, তরে আমি আর জুর করুম না...আমি তাইলে উঠি।” দরজার দিকে এগিয়ে গেল মান্নান।

“শোন।” ডাক শুনে পেছনের দিকে ফিরলো সে।

“ভিতরের রুমে আয়।”

 

 

আগের সেই গলির ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে মান্নান। ভাইয়ের সাথে আরেকবার দেখা করতে হবে। তার কিছু একটা সন্দেহ হচ্ছে পিচ্চিটার ব্যাপারে পিচ্চিটা হয়তো তাকে ভুল দিকে ডাইভার্ট করার চেষ্টা করেছে,যদিও সে ঠিক নিশ্চিত না এই ব্যাপারে। হাঁটতে হাঁটতে গলির প্রায় শেষ মাথায় চলে আসতেই দু’টো লোককে পর পর সেদিক দিয়ে ঢুকতে দেখলো। গলিটার পথটা এতোই সরু যে, দু’টো লোক পাশাপাশি ঢুকতে পারবে না, যদি না তারা অস্বাভাবিক চিকন হয়।সে যেখানে ছিল, সেখানেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো...ওরা পাশ দিয়ে চলে গেলে গলি মুখ ফাঁকা হবে, তখন এগোবে। লোকগুলোকে সামনে থেকে এগিয়ে আসতে দেখতে দেখতে হঠাৎ পেছনে কিছু পায়ের শব্দ শুনতে পেল সে।সেটা দেখার জন্য পেছন ফিরতেই ভারী কিছুর আঘাত পেল মাথায়, কারো গায়ের ওপর এলিয়ে পড়লো সে। 

 

 

কোনো বড় জলাশয়ের মধ্যে যেন ডুবে যাচ্ছে সে। ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে গভীর পানি। তারপরই হঠাৎ এক ঝলক হলুদ আলো ঝট করে যেন আঘাত করলো তার মাথায়। ধীরে ধীরে চোখ খুললো সে। একটা তীব্র হলুদ আলো তার চোখ দু’টোকে প্রায় অন্ধ করে দিয়েছে। সামনেই একটা চেয়ারে কেউ একজন বসে আছে চেয়ারটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে। হাত দিয়ে তীব্র আলো থেকে বাঁচার চেষ্টা করতেই সে টের পেল, তার হাত দু’টো বাঁধা লোহার শিকল দিয়ে। সামনের চেয়ারটা তার দিকে ফিরলো ধীরে ধীরে। চোখ পিট পিট করে চেয়ারে বসা লোকটাকে দেখার চেষ্টা করলো সে। চেয়ার থেকে খনখনে, ভাঙা একটা কন্ঠস্বর শোনা গেল,

“তারপর,মুরগী মিসৌরী...কী খেবের? লোকটা নিজের মুখটা খানিকটা সামনে আনতেই তার চেহারা খানিকটা দৃশ্যমান হলো তার কাছে। একটা কানটুপি পরা মুখ। চোখে মোটা কাঁচের চশমা। চেয়ারে বসে থাকায় যদিও উচ্চতা সঠিক বোঝা যাচ্ছে না, তবে সেটা ৫ ফিট ৮/৯ এর কম হবে না...আন্দাজ করে নিল ও।

“কী মুরগি, কথা কও না ক্যান? খুঁজ-খবর লেওনের সুময় তো ভালোই কথা কলা দেকলাম...এখন চুপ কেন!”

“দ্যাহেন,আমার লগে গ্যান্জাম কইরেন না...তাতে আপনাগো কুনো ফায়দা হইবো না।”

“★★কির পোলায় কয় কী! ফায়দা শিখাও আম্রে তুমি,★★য়া!” এইসময় হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ শোনা গেল।একজনের গলা শোনা গেল।

“মনির ভাইয়ে আইছে,ভাই।” একজন পান্জাবী-লুঙ্গি-টুপি পরা দীর্ঘদেহী পুরুষ ঢুকলো দরজা দিয়ে।

“দ্যাহেন,ভাই...এখনো তেজ কমে নাই হালার পোর, মুখে মুখে কতা কইতাসে!”তাকে বললো চেয়ারে বসা লোকটি।

“আস্তে, আস্তে হবে হবে..শান্ত হও।”প্রশান্ত মুখের লোকটি হাত ওঠালো। একটা চেয়ার মান্নানের সামনে টেনে এনে বসলো লোকটা।

“তারপর,ভাইস্তা কও তো তোমার কাহিনী...তাড়াহুড়ার কিছু নাই,কুনো জবরদস্তি নাই।”

 

 

চলবে