ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং দাসপ্রথা

চয়ন খায়রুল হাবিব

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি মানেই ধর্ম-ব্যবসার অজুহাত। আর ধর্ম-ব্যবসায়ীরাই দাসপ্রথার প্রাচীনতম দোসর। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং তার ক্ষমতায়ন বন্ধ করা দাশপ্রথা বিলুপ্তির সমান।

১৯৪৭এ যারা বাঙালিকে ধর্মের নামে শ্রমদাসে পরিণত করেছিল, তারা এখনো সেই একই দোহাই পেড়ে বাঙালিকে মানষিক দাসত্বে সঙ্কুচিত রাখতে চায়। ব্লগার রাজিবকে হত্যার নিন্দা তখনই যথার্থ যখন আল মাহমুদের কবিতায়, মান্নান সৈয়দের কবিতায়, ফরহাদ মজহারের কবিতায়, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চৈনিক পক্ষের সুপারিশকারী আহমেদ সফার বিকৃত ‘বেহাত বিপ্লব’ এ, জামায়াতি বোমাবাজদের হয়ে সলিমুল্লাহ খানের সাফাইয়ে; আবদুল্লাহ আবু সাইয়িদের আশরাফি-আলোকিত-বাঙালি-মুসলিমে আমরা দেখবো সেই হত্যাকারীদের ছায়া যারা আমাদের বারবার আতরাফি দাসত্বে বাধতে চায়। এই পিশাচদের নান্দনিকভাবে বর্জন করতে না পারলে আমাদের স্বাধিকারও বারবার খোঁড়া হবে, বারবার কানাগলিতে গড়াবে।

ফেসবুকের শুরুতেই আল মাহমুদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করাতে কানাডাবাসী এক বিমূর্ত শিল্পী আমাকে নসিহত করেছিল যে, আগে কবিতা লিখতে এবং পরে পারলেও কবিদের ঘৃণা না করতে। পরে ইনবক্সের কারুকাজে জেনেছিলাম সেই বিমূর্ত শিল্পী যেমন কবি হিশেবে পরিচিতি চান, সেরকম সর্বমহলে তার স্ত্রীর গল্পকার পরিচয়ও চান। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তিনি এমন সব মহলের সুপারিশের জন্য ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়েন যাকে আমরা সাদাচোখে বলি প্রতিক্রিয়াশীলতা। নিউইয়র্ক, লন্ডন, কানাডা, বাংলাদেশে একের পর এক এই প্রতিক্রিয়ার সফল নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে।

ব্লগারদের ভেতর আমরা তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি বাহবা দিয়েছি যারা মুক্তিযুদ্ধ্বের পতাকা দেখিয়েই বিষোদ্গার করেছে হুমায়ূন আহমেদের, শামসুর রাহমানের। ব্লগার রাজিব এসব খেয়াল করেছিল। সে আমাদের মূল বিকলাঙ্গতার জায়গাটিকে, মূল নপুংশকতার জায়গাটিকে ধরেছিল; যাকে আমরা সাংস্কৃতিকভাবে বলি ধর্ম পরায়নতা। মান্নান সৈয়দ জিবনানন্দকে, রবীন্দ্রনাথকে, নজরুলকে বসিয়েছে শুদ্ধতার জায়নামাজে। বেহাত বিপ্লবীরা তাতে যোগান দিয়েছে সাব-অল্টার্ন, ফুকো, দেরিদা, লোকজীবন। যে লালন নিজে লিখেছে সহজিয়া প্রমিত বাংলায়, তাকে পরিণত করা হয়েছে তত্ত্বের কষা পায়খানায়। জামায়াতপন্থি ভূমিদস্যুতারই আরেক নাম লোকজীবনবাদ।

এই লোকজীবনবাদের দোহাই পেড়েই অখাদ্যকে খাদ্য বানাবার নেটওয়ার্কিং-বিকৃত `বেহাত বিপ্লবের` ততোধিক বিকৃত পূজারিরা সরতে সরতে জামায়াতিদের কাছে চলে যায়। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের আগে এরা বোমাবাজদের শ্রেণি সংগ্রামি বলতে থাকে। আবার ‘মেহেরজান’ নামের প্রতিক্রিয়াশীলতা প্রত্যাখ্যাত হলে পাতানো খেলার আদলে নিজেদের ভেতর রেষারেষির ভিডিও করে আমাদের দেখায়। রাজীব হায়দার আক্রান্ত হয় অতর্কিতে। প্রকাশনী প্রায় সবগুলোই এই ধর্ম ব্যাবসায়ী-বেহাত বিপ্লবীদের হাতে। মহৎ কবিতা সিদ্ধান্ত নেয় বইমেলার বাইরে গিয়ে আরো বড় হবার। তার দরকার হয় প্রজন্ম চত্বরের।

লোকজীবনবাদী এবং বেহাত বিপ্লববাদীরা ধর্ম ব্যবসায়ের সবচেয়ে বড় সহায়। মেররুকরণের সচেতনতা সেখান থেকেই শুরু।

লেখক: কবি ও গল্পকার