‘নিজের দেশের প্রতিভাকে মূল্যায়ন করতে শেখেন’

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : এপ্রিল ২১, ২০১৮

শুক্রবার সারা দেশের পাঁচটি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে `আলতা বানু’ ছবিটি। ছবিটি দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ খ্যাত ছবির পরিচালক দীপঙ্কর দীপন শুক্রবারই দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, “আমার বিশ্বাস ছিল, অরুণদা ভালো করবেন। কিন্তু এতটা ভালো করবেন আর এতটা আধুনিক সিনেমা বানাবেন, আমি সত্যিই আশা করিনি। কারণ আমি জানতাম কতটা কম বাজেট, কতটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে তাকে কাজটা করতে হয়েছে। স্যালুট অরুণদা। শহরের সাথে পাল্লা দিয়ে বদলাচ্ছে দেশের গ্রামগুলো। পাল্টাচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, হচ্ছে নতুন ও পুরনো বিশ্বাসগুলোর মিশ্রণ। তাই আজকের সিনেমায় বদলে যেতেই হবে চরিত্র, ঘটনা ও পরিণতি। সেই পরিবর্তনের হাওয়াটা অনুভব করা যায় জালালের গল্পে, মাটির প্রজার দেশে আর আলতাবানুতে। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের মাটি আর মানুষের নতুন গল্প।”

দীপঙ্কর দীপন আরও লেখেন, “আলতা বানু আমার কাছে আজকের দিনের শেষের কবিতা। শেষের কবিতার মূল উপজীব্য ছিল যুগসন্ধিক্ষণ, সেটার একটা ২০১৮ সালের রূপ আছে আলতা বানুতে। কুসংস্কার, সাইবার ক্রাইম, নারীবাদ, ওমেন ট্রাফিকিং, ছাত্রনেতা, ভালো-খারাপ দু’ধরণের পুলিশিং, গার্মেন্টস, সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্ট অন ওয়ারকিং এরিয়া, ভায়োলেন্ট দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ- তাও আবার ভিকটিম নারীর, দুটো ভিন্ন চেহারার দুটি আধুনিক নারী, জঙ্গিবাদের ইঙ্গিত, প্রতারণা, অব্যক্ত প্রেম- সমসাময়িক অনেক কিছু এসেছে আলতা বানুতে। কিন্তু সবচেয়ে অভাবনীয় বিষয় হচ্ছে, এত সব কিছুতে ফোকাস সরেনি। বড়বোনের ছোটবোনকে খুঁজে বেড়ানোর জার্নিটার পরতে পরতে মিশে গেছে কনটেমপরারি কনন্টেন্টগুলো।”

দীপঙ্কর দীপনের মতে, দর্শককে ধরে রাখার ক্ষমতা রেখেছে ‘আলতা বানু’। তিনি বলেন, “দুপুর ১টায় আমার একটা জরুরি কাজ ছিল। যেখানে ছবি শেষ হতে হতে পৌণে দুটা। আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম, ঘণ্টাখানেক আগে বেরিয়ে যাব। পারিনি। অরুণদা বসিয়ে রেখেছেন। কাজের বারোটা বাজিয়েছেন। তাতেও অনাবিল সুখ। একটা দেশি চলচ্চিত্রই তো আটকে রেখেছে। বাংলাদেশের এক একটা ভালো সিনেমা আমার বুকের ছাতি আরেক ধাপ বড় করে দেয়।”

ছবির অভিনয়শিল্পীদের বিষয়ে দীপঙ্কর দীপন বলেন, “মমর অভিনয়ের ক্ষমতার সাথে আমি পরিচিত। ‘ছুঁয়ে দিল মন’ ছবিতে তার ছিঁটেফোঁটাই পেয়েছি। এখানে অনেকটা। স্যালুট করার মতো পারফরমেন্স, গর্ব করার মতো শিল্পী। মিলন ভাইম আহা! বিদেশের ওমেন ট্রাফিকিংয়ের সাথে যুক্ত ভালোমানুষের মুখোশ পড়ে থাকা নায়ক চরিত্রের পরিণতিতে হয়ে উঠে প্রেমিক-ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে মার খেয়ে ভূত হয়ে যায়, কিন্তু ভেতরের মানুষটা জেগে উঠে। কী সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে চরিত্রটি। আহা মিলন ভাই, অনেকদিন পর তোমাকে পেলাম। রিক্তা, রমিজ রাজু, অন্তু, সাবেরী আপা, দিলারা মা, কাকে বাদ দিয়ে কার কথা বলি। ভালো অভিনয়ের মেলা বসেছে আলতা বানুতে। যারা বলে, আমাদের ভালো অভিনয় শিল্পী নেই, তাদের বলি, আসেন আলতা বানু দেখেন। স্বপ্নজাল দেখেন। আয়না বাজি দেখেন, নিজের দেশের প্রতিভাকে মূল্যায়ন করতে শেখেন। তবে এর পেছনে একজন অরুণ চৌধুরী, একজন গিয়াস উদ্দীন সেলিম লাগে, একজন অমিতাভ রেজা চৌধুরী লাগে, তাও আমাদের আছে। আছে আরো অনেক নাম। অনেক মেধাবী নির্মাতা।”

দীপন তার স্ট্যাটাসে লেখেন, “‘আলতা বানু ছবির শেষে গিয়ে আর দুটি বোনের গল্পে হয়ে থাকে না। মানবতার গল্প হয়ে ওঠে। স্পয়লারের কারণে ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। আর সেখানেই আলতাবানু একটি মহৎ সিনেমা হয়ে ওঠে। আহা! বন্ধুরা আমাকে বলে আমি নাকি কোনও সিনেমাকে ভালো বলতে শুরু করলে অনেক বেশি ভালো বলে ফেলি। ভুলক্রটিগুলো আমার চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে, কিন্তু সেগুলো আমার কাছে বড় হয়ে ওঠে না। কারণ আমিতো জানি সীমাবদ্ধতাগুলো কোথায়? অন্যকে টেনে নামানোর দৌড়ে আমি নেই। সম্ভাবনা দেখলে চাতকের মতো  তাকিয়ে থাকি একটা ভালো সিনেমার আশায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সম্ভাবনাময় দিকগুলো তুলে ধরতে ধরতে আমরা একটি সারা বিশ্বের কাছে সম্ভাবনাময় চলচ্চিত্রের দেশ হয়ে উঠবো। আপনার পছন্দ নাও হতে পারে এরকম কিছু কিছু বিষয় আছে আলতা বানুতে। তবে পজেটিভ মন দিয়ে দেখলে সেগুলো আপনি ইগনোর করতে পারবেন।”

অরুণ চৌধুরী পরিচালিত ‘আলতা বানু’ ছবিটি ফরিদুর রেজা সাগরের গল্প অবলম্বনে সংলাপ লিখেছেন বৃন্দাবন দাস। ছবির প্রধান দুই চরিত্রে আলতা ও বানু হয়েছেন যথাক্রমে জাকিয়া বারী মম ও ফারজানা রিক্তা। তাদের বিপরীতে আছেন আনিসুর রহমান মিলন। ছবিটি প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম।