নিমন্ত্রিত জ্যোছনা: বোবার চোখে হাজার স্বপ্ন

এস এম মুকুল

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮

ফয়জুন্নেসা মণি লিখছেন ছোটবেলা থেকেই। স্কুল জীবন থেকেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কবি ফয়জুন্নেসা মণির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘নিমন্ত্রিত জ্যোছনা’। এ নিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছয়টি। কবিতাগুলোতে কবির বিচিত্রভাবনা কাব্যিকব্যঞ্জনায় প্রকাশ ঘটেছে।

 

কবি বলছেন, ‘বোবার চোখে হাজার স্বপ্ন/যার আকাশে অনেক বৃষ্টি/পানির পিপাসা তার কিছুতেই মেটে না।’ মণির কবিতা পাঠ করলে পাঠক সহসা ডুবে যাবেন হৃদয় সাগরের গভীর অতলে। ঢাকার বনশ্রীতে অবস্থিত রেডিয়্যান্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের রেডিয়্যান্ট কালচারাল একাডেমিতে ফয়জুন্নেসা মণি সংগীতের শিক্ষক। এছাড়া তিনি আবৃত্তি শেখাচ্ছেন ঢাকার বনশ্রীতে অবস্থিত সু-অঙ্কন একাডেমিতে। তিনি বনশ্রীর আব্দুর রাজ্জাক স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

 

তার কবিতায় আছে প্রেম, আছে বিরহ। আছে মৃদুকণ্ঠে উচ্চারিত প্রণয় প্রতারণার তীব্র প্রতিবাদ। যেমন কবি বলছেন, ‘তন্দ্রার মাঝে খুঁজেছি আমি নক্ষত্র রাতের আলো-আঁধারের মায়াকে/খুঁজেছি জ্যোছনার সাথে কুয়াশার মিত্রতা/আর আমার বন্ধুকে, যে/ঘৃণার কঠিন পিণ্ডটাকে ভালোবাসার রঙিন/ মোড়কে সাজিয়ে অহরহ সূক্ষ্ম প্রতারণার জালে আটকিয়ে/আড়ষ্ট করে রেখেছে এই আমাকে।’ কবি অপর কবিতায় বলছেন, ‘আমি ভেঙে ফেলি সব শৃঙ্খল তোমার আমার মায়ার বন্ধন/ছিন্ন হয় না শুধু অনন্ত অসীম/রংহীন দুঃখের কঠিন শাড়ি/ অষ্টপ্রহর আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে বলে...’।

 

ফয়জুন্নেসা মণির কবিতার মেজাজটা একটু ভিন্ন। মৃদুমন্দ টলমল ঢেউয়ের দুলুনির মতো। তিনি কঠিনেরে বলেছেন সহজভাবে আবার সহজকে বড় কঠিন করে তুলেছেন। এ যেন অসময়ে সময়ের ডাক অথবা নিছক কিছু একান্ত ভাবনার অনুরণন। তার কবিতায় ফুটে ওঠে বেদনার্ত সময়ের অরিন্দম কণ্ঠস্বর। কবি বলছেন, ‘স্বপ্নবাদীরা হিংস্র হয়ে উঠেছে/চৌদিকে রোবটের বিচরণ/গলা চিপে হত্যা করছে মানবতা/জঘন্য কর্মকাণ্ডে গড়ে উঠছে অবান্তর সভ্যতা।’ কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নিঃসঙ্গতা মুক্তির ছাড়পত্র’ প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে, কলেজজীবনে।

 

কবি ও লেখিকা ফয়জুন্নেসা মণি প্রদায়ক হিসেবে লিখেছেন দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের উপসম্পাদকীয়তে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা কবিতা, নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সাহিত্য বিষয়ক লেখা প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক প্রথম আলোর বন্ধুসভায়, দৈনিক ভোরের কাগজের পাঠক ফোরাম, দৈনিক ইনকিলাবের সাহিত্যপাতা, দৈনিক ডেসটিনির সাহিত্য পাতা, সাপ্তাহিক এখন, দৈনিক জাহান (ময়মনসিংহ), মাসিক শিক্ষাবিচিত্রা, বিভিন্ন সাহিত্য ম্যাগাজিনসহ অনলাইন নিউজ পোর্টালে। কবি ফয়জুন্নেসা মণির প্রকাশিত অন্যান্য বইগুলো হচ্ছে, ‘চুপিচুপি’, ‘গৃহসজ্জার কলাকৌশল’, ‘জীবন সাজাতে-জীবন রাঙাতে’, ‘জীবনে বিজ্ঞান’, ‘জীবন সূত্র’ ইত্যাদি। কবি ফয়জুন্নেসা মণি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন সরকারি তিতুমির কলেজ, ঢাকা থেকে।

 

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি লেখক, বিশ্লেষক এস এম মুকুলের সহধর্মিনী। কবি ফয়জুন্নেসা মণির জন্ম ১৭ মে সুনামগঞ্জের নয়াহালট গ্রামে নানাবাড়িতে। মণির বাবা মোহনঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আব্দুল হাকিম। মা মোছা জিনাতুন্নেসা খানম। পরিবারের একমাত্র কন্যা মণি। ছোটবেলা থেকেই মণি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি সংগীত, আবৃত্তি ও উপস্থাপনায় বেশকিছু সম্মাননা অর্জন করেন।

 

’নিমন্ত্রিত জ্যোছনা’ বইটি প্রকাশ করেছে অমরাবতী প্রকাশন। বইটি পাওয়া যাবে বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে লিটলম্যাগ কর্ণারে অমরাবতীর স্টলে। ৪৮ পৃষ্টার বইটির দাম রাখা হয়েছে একশো বিশ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন, এস এম মুকুল। বইটি রকমারি ডটকমেও পাওয়া যাবে।