পরিণতি

উপন্যাস শেষপর্ব

সুলতানা পারভীন

প্রকাশিত : জুলাই ২১, ২০১৮

ছোটখাটো একটা চিঠি। মুক্তার মতো গোটা গোটা হাতের লেখা।
আবির,
তুমি জানো, এই পৃথিবীতে কাউকে ভালোবাসাটা সবচেয়ে বড় অপরাধ। যেই মানুষটাকে তুমি খুব ভালোবাসবে তাকে ছাড়া তুমি বাঁচতে পারবে না, আর তার সাথে কেউ তোমাকে বাঁচতে দেবে না। কী আশ্চর্য, না? বাবা যেদিন আামাকে বলেছিল, তোমার জীবন থেকে, তোমার ভাবনা ও নিজস্ব গণ্ডি থেকে যেন আমি অনেক দূরে চলে যাই, নয়তো উনি মরে যাবেন; সেদিন থেকে বেঁচে থাকার আর একবিন্দু ইচ্ছে ছিল না। এক বোতল ঘুমের ওষুধের সবকটা একসাথে খেয়ে ফেলতে পারিনি শেষবারের মতো তোমাকে একবার দেখার আশায়। অথচ তুমি যখন এলে, মরাটা আর হয়েই উঠল না। তোমাকে না করতে পারি না যে!
কিন্তু তুমি যখন জেনে গেছ বাবা কল করেছিল, তখন থেকে মনে হচ্ছিল, বাবার কথাটাই সত্যি হতে যাচ্ছে। আমি আসলেই তোমাকে তাদের কাছ থেকে দূর করে দিচ্ছি। এটা তো হতে পারে না আবির। কখনো না। শেষবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দিও, প্লিজ। আর তুমি ভালো থেকো। বাবার পছন্দ করা মিষ্টি একটা মেয়েকে বিয়ে করে জীবনটা শুরু করবে। একটুও কাঁদবে না কিন্তু, প্লিজ!

শেষের দিকে লেখাগুলো কেমন টেনে টেনে লেখা। পড়ে মাথাটা একটু ঘুরে উঠল। কী বলে মেয়েটা! বীথির রুমের দিকে ছুটে গেলাম। বীথিটা কালকের মতো বিছানায় শুয়ে আছে। চারপাশে অনেক লোক। এর মধ্যেও বীথি যেন কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। মুখটা একেবারে হলদে। রক্তহীন হয়ে আছে। তবুও ঠিক পরির মতো লাগছে। কোনোমতে মাথার পাশে গিয়ে বসলাম। হাতটা ধরে ঝাঁকিয়ে কয়েকবার নাম ধরেও ডাকলাম। হাতটা একদম ঠাণ্ডা হয়ে আছে। পাগলের মতো হাতটা ঘঁষে একটু গরম করার চেষ্টাও করলাম। প্লিজ বীথি, একবার তাকাও। আজকে আমার কাতর আবেদন আর বীথির কানে গেল না। আজ আর বীথি চোখ খুলে অবাক চোখে আমাকে দেখে লজ্জা পেল না। একটা নিষ্পাপ ভালোবাসার এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছি না। সত্যিই কি বীথিকে ভালোবাসাটা আমার দোষের ছিল?

কতক্ষণ বসেছিলাম বীথির হাত ধরে, জানি না। মোবাইলের ভাইব্রেশনে ফোনটা কানে লাগালাম। আবির, তুই আবার ওই বদমাইশ মেয়ের সাথে দেখা করতে গেছিস? এবারে আর একটা কথাও গলা দিয়ে বের হল না। অনেকক্ষণ আটকে রাখা বৃষ্টির যেন বাঁধ ভাঙল।