পাহাড় ও ছোট্ট ঘাসফুল

আবু তাহের সরফরাজ

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৮, ২০১৮

আমরা পাহাড়ে উঠতেছি। রবীন্দ্রনাথ আগে, আমি পেছনে। বয়েসের ভারে যদিও তিনি ন্যূব্জ, যৌবনের শক্তি তবু তার গায়ে। কেননা জগতে তিনি অমরত্ব পেয়েছেন। পাহাড়ের খাড়া গা বেয়ে উঠতে উঠতে হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন। আমি তাড়া দিলাম, কী হলো গুরুদেব, উঠুন। তিনি বললেন, দেখছো, কী সুন্দর নীল ফুল ফুইটা আছে পাহাড়ি ঘাসটাতে।
আমি দেখলাম। ঘাসের একটা ডগায় দুটো নীলফুল হাসছে।
তিনি বললেন, বিশাল এই পাহাড়ে খুবই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই ঘাস। বৃষ্টি-বাদলায়, বাতাসের তোড়ে কিম্বা ছোটখাটো কোনো পাথর গড়িয়ে পড়ে যে কোনো মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে ঘাসটি।
আমার দিকে চেয়ে হাসলেন তিনি, পারে কীনা?
আমি ঘাড় নাড়লাম, জি, পারে।
তিনি বললেন, তুমি, আমি, আমরা ওই ঘাস। যা কিছু আমরা সৃষ্টি করি তা ওই ফুল। আর রাষ্ট্র হইতেছে এই পাহাড়। রাষ্ট্রের মধ্যে থেকে তুমি রাষ্ট্রের সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা কইবা, তা তো বাপু চলবে না। রাষ্ট্রের একটা ইশারায় যে কোনো মুহূর্তে তুমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। রাষ্ট্রের কিছুই তাতে হবে না।
আমি তেড়িয়া হয়ে উঠলাম, কী কইতেছেন হে গুরুদেব। তা-বলে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলিত সিস্টেম মেনে নেব? ব্যবহৃত হতে থাকব? শোষিত হতে থাকব?
আবারো হাসলেন তিনি। ভুল করছ হে। আবারও বলছি, ভুল করছ তুমি কিংবা তোমরা। রাষ্ট্রের মধ্যে থেকে তার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিশেষ বিশেষ কিছু সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা তুমি বলতে পারো না। বলতে হলে রাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে বলো। সমাজের সিস্টেমের বাইরে গিয়ে বলো। তুমি যে যে বিষয়ের বিরোধিতা করো, রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে সেসব নিয়ে। তোমার ঘাড়ে ক’টা মাথা যে তুমি বিশাল পাহাড়ে এক ঘাসলতা হয়ে জন্ম নিয়ে পাহাড়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলতে চাও? মারা পড়বে হে, ঝরে যাবে...