পুনশ্চ: ফেলানী হত্যাকাণ্ড

কল্লোল মোস্তফা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৮, ২০১৮

নিয়মিত সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফেলানী হত্যাকাণ্ড এবং ৭ বছরেও বিএসএফ এর বিচার না হওয়া কেন বিশেষ তাৎপুর্যপূর্ণ?
সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গ উঠলেই বিএসএফ ‘আত্মরক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে’ গুলি চালানোর অজুহাত দাঁড় করায়। ফেলানী হত্যার ব্যাপারে এ ধরনের কোনও অজুহাত তৈরি করা সম্ভব নয়। কাঁটাতারে কাপড় আটকে যাওয়া এক নিরস্ত্র কিশোরী কোনোভাবেই অস্ত্রধারী বিএসএফের জন্য হুমকি হতে পারে না। ফেলানী হত্যাকাণ্ড এযাবৎ সীমান্তে ঘটে যাওয়া সব হত্যাকাণ্ড বিএসএফের আগ্রাসী ভূমিকাকে সামনে নিয়ে আসে। আত্মরক্ষার অজুহাতকে খারিজ করে দেয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ নির্দোষ বিবেচিত হতে পারে কিসের ভিত্তিতে? ফেলানীকে তো কেউ না কেউ গুলি করেছিল। ভারতের পেনাল কোড কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো আইনেই নিরস্ত্র নাগরিককে গুলি করে মেরা ফেলার বিধান নেই। কেউ অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার করলে তাকে গ্রেফতার করা যেতে পারে। ভারতের কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের সেকশন ৪৬ অনুসারে অপরাধীকে গ্রেফতার করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টার বৈধতা দেয়া হলেও মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার মতো অপরাধে লিপ্ত না হলে কোনোভাবেই হত্যা করা যাবে না।
১৯৯০ সালে কিউবার হাভানায় জাতিসংঘের অষ্টম কংগ্রেসে গৃহীত বেসিক প্রিন্সিপালস অন দ্য ইউজ অব ফোরস অ্যান্ড ফায়ার আর্মস বাই ল’এনফোর্সমেন্ট অফিসিয়ালস নামের নীতিমালা অনুসারেও আইন প্রয়োগের বেলায় মানুষের জীবন রক্ষার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
ফেলানী হত্যাকাণ্ডের মতো একটা ঘটনার পরও অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যের সাজা না হওয়ার একটাই ব্যাখ্যা- ভারতের আধিপত্য এবং বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি।