অলঙ্করণ: দীপাঞ্জন সরকার

অলঙ্করণ: দীপাঞ্জন সরকার

পুরুষতন্ত্রের পয়জন, মাহি ও আমাদের কন্যারা

শেলী নাজ

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৭, ২০১৮

কাজের ফাঁকে ফেসবুকে ঢুকে জানলাম এ ভয়ানক খবর। মাহির ফ্যানে ঝুলে থাকা লাশ সারাদিন আমাকে তাড়া করল, আমার চোখের সামনে দুলতে থাকল! একটা জটপাকানো কান্নার দলা গিলতে না পেরে কিশোরীবেলার মতো হাউমাউ করে কাঁদলাম বাথরুমে গিয়ে। না আমি না, কাঁদল আমার কন্যাজন্ম! কাজে একশোবার ভুল হলো। লিফটে উঠে ভুলে গেলাম ওপরে যাব না নিচে নামব। রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হতে যাচ্ছিলাম! সঠিক ট্রেনে উঠলাম কিন্তু ভুল স্টেশনে নামলাম। বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। মেলবোর্নের এক অচিন স্টেশনে বসে বসে আমার পায়ে শেকড় গজিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মৃত্যুগামী সেই ট্রেন আসছিল না! আত্মহননের মধুস্বাদ আমার রক্তের ভেতর এক গোপন ঘুণপোকা, সারাদিন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল আমাকে। মনে হচ্ছে, মাহি না, ওটা আমি!
প্রথম মরতে চেয়েছিলাম আঠারোয়। সেটা ছিল এক ব্যর্থ আত্মহত্যা প্রচেষ্টা। জানালাঘনিষ্ট জলপাই গাছের পাতা চুইয়ে রক্তফোঁটার মতো বৃষ্টি ঝরছিল সেদিন। আমি মৃত্যুর কাছে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্ত মৃত্যু আমাকে নেয়নি। সে আমাকে উগড়ে দিয়েছে জীবনের অন্ধগলির ভেতর। তারপর থেকে যেকোনো আত্মহত্যা আমাকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে, আমাকে অসুস্থ করে ফেলে।
আমরা `অবরোধবাসিনী` যুগে বাস করি না, তবু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমাদের প্রতিদিনের অবদমনের গল্প হাজার মহাভারতের সমান। পেয়ালাভর্তি অবসাদ আর অপমান খেয়ে খেয়ে আমরা বড় হই, আমাদের কন্যারাও! পুরুষতন্ত্রের পয়জন গিলতে গিলতে আমাদের তেতো জীবন শেষপযর্ন্ত ফ্যানে ঝুলে পড়ে মুক্তি পায়!
কবি রাহিমা আফরোজ মুন্নীর মেয়ে মাহি। বিশ বছরের বাচ্চা মেয়েটা, কী সুন্দর ছবি আঁকত! হায়, সে ছবিগুলোও হয়তো শেষপর্যন্ত তার এত বিষ নিতে পারছিল না। তাই সে নিজেকে মিশিয়ে দিল মৃত্যুর নীলিমায়!

লেখক: কবি